ধর্ষণে বাধা দেয়ায় শাস্তি হিসেবে এক পরিবারের মা ও মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার অভিযোগে ভারতের বিহার রাজ্যে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
একদল লোক ধর্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে ঐ নারীদের বাড়িতে হামলা চালায় বলে জানায় পুলিশ। খবর বিবিসি বাংলার
পুলিশের ভাষ্যমতে, হামলাকারী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও ছিল। ঐ নারীরা বাধা দিলে হামলাকারীরা তাদের মারধর করে, তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয় এবং তাদেরকে সারা গ্রাম জুড়ে হাঁটানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার সাথে জড়িত আরো পাঁচজনকে খুঁজছে তারা।
এএনআিই সংবাদ সংস্থাকে ভুক্তভোগী মেয়েটির মা জানায়, লাঠি দিয়ে আমাদের বেদম প্রহার করা হয়। আমার শরীরে সব জায়গায় আঘাত পেয়েছি এবং আমার মেয়ের শরীরেও বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে।”
তিনি আরো জানান, সব গ্রামবাসীর সামনে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়।
আইনের প্রতি ভয় নেই
সাংবাদিক গীতা পান্ডে মনে করেন, আইনকে ভয় না করার কারণেই এ ধরণের অপরাধের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে।
ধর্ষণের চেষ্টা করা যৌন সহিংসতামূলক অপরাধ। কিন্তু ধর্ষণে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নির্যাতন এবং ঐ নারীদের মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে গ্রাম জুড়ে হাঁটানোর মত ঘটনা প্রমাণ করে যে একটি সম্প্রদায় কতটা পুরুষকেন্দ্রিক চিন্তা করতে পারে।
আর সবচেয়ে অবাক করা এবং ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, হামলাকারীরা একজন সরকারি কর্মকর্তার নেতৃত্বে ঐ নারীদের ওপর হামলা করে – যিনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং তার এলাকার মানুষের খোঁজ-খবর রাখা যার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
অপরাধীদের ঔদ্ধত্যের মাত্রাই বলে দেয় যে ভারতের কিছু অংশে আইনকে একেবারেই পরোয়া করে না মানুষ।
দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সদস্যদের অনেকেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর জন্য পুলিশকে রাজি করাতে পারেন না বলে অভিযোগ করা হয়।
এরপর তাদের অভিযোগের তদন্তের ক্ষেত্রে যেমন গাফিলতি করা হয়, তেমনি ধীরগতির বিচার ব্যবস্থার ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালীরা অনেকসময়ই বড় অপরাধ করেও পার পেয়ে যান।
আর এরকম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের প্রতিবাদও সাধারণ মানুষের মধ্যে যে খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়, তাও নয়।
স্থানীয় সংবদামাধ্যমকে একজন পুলিশ সদস্য বলেন, ভুক্তভোগীদের বাড়িতে প্রবেশ করে কমবয়সী মেয়েটিকে যৌন নির্যাতন করার চেষ্টা চালায় একদল লোক।
রাজ্যের নারী বিষয়ক কমিশন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। কমিশন বলেছে, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আরো ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ ধরণের ঘটনা এই রাজ্যে এটিই কিন্তু প্রথম নয়।
এপ্রিলে গণধর্ষণ প্রতিরোধ করার কারণে একটি মেয়ের ওপর অ্যাসিড ছোঁড়া হয়। তার কয়েকমাস আগে বিহারের এক নারীকে নির্যাতনের পর নগ্ন অবস্থায় গ্রামের বাজারের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়।
২০১২ সালে দিল্লির একটি বাসে গণধর্ষনের পরে এক নারীকে হত্যা করার ঘটনার পর থেকে এ ধরণের ঘটনায় জনগণের বিক্ষোভ প্রকাশ করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply