নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় সোলায়মান আলী নামের এক পরিবার কে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে।উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের সমাজ প্রধানদের আবদার মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় সমাজচ্যুত করার এক বছর ৩ মাস ধরে পরিবারটি মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
পরিবারটির বড় ছেলে দ্বিতীয় বিয়ে করায় সমাজের প্রধানদের আবদার সমাজের সকল লোকজনদের গরু জবাই করে ভোজ খাওয়াতে হবে। ভোজ খাওয়াতে রাজি না হওয়া ও এ ঘটনায়ডাকা সালিশি বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় ওই পরিবার কে এক বছর ধরে সমাজচ্যুত(একঘরে) করা হয়েছে।
এতে মাঠের ফসলি জমি সমাজের লোকদের বর্গা নিতে নিষেধসহ জমি চাষে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সরেজমিন গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়,উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের সোলায়মান আলীর ঢাকায় কর্মরত বড় ছেলে দুলালের প্রথম স্ত্রীর সাথে তালাক হওয়ার পর গত বছর কোরবানী ঈদের আগে ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করে।
সমাজ প্রধানদের না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করায় এ বিয়ের স্বকৃতি পেতে পরিবারটির কাছে গরু জবাই করে সমাজের সবাইকে ভোজ খাওয়াতে হবে বলে দাবী করা হয়।সোলায়মান আলী এ দাবী মেনে না নেয়ায় এক সালিসি বৈঠক ডাকে সমাজ দুই প্রধান আহাদ আলী ও কাসেম আলী।
সমাজচ্যুত সোলেয়মান আলী সমাজ প্রধানদের ডাকা সালিসি বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় তাকে ওই দিনেই সমাজচ্যুত (একঘরে) করে রাখার সিন্ধান্ত নেয়।সোলেয়মান আলীর পরিবার কে সমাজ প্রধানরা শুধু সমাজচ্যুত করে ক্ষান্ত হয়নি,ওইপরিবারের সাথে উঠা বসা, মসজিদ ঈদগাহে নামাজ পড়া নিষেধ করা হয় এবং মাঠে ফসলি জমিতে সমাজের কেউ কাজ করতে পারবে না।
এমনকি তার এখন নতুন ভাবে জমিপুকুর যারা দীর্ঘ মেয়াদী বর্গা,লিজ নিতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।যারা জমি লিজ সমাজচ্যুত হওয়ার আগে নিয়েছে তাদের মেয়াদ শেষ হলে তারা পূণরায় ওই জমি লিজ নিতে পারবে না।
এতে এক বছর তিন মাস ধরে পরিবারটি মানবেতর জীবন-যাপন করছে।ভুক্তভোগি সোলেয়মান আলী জানান, আমার বড় ছেলে ঢাকায় বিয়ে করার পর সমাজ প্রধানরা আমার কাছে গরু মেরে সমাজের সবাই কে খাওয়াতে হবে বলে আমার কাছে দাবী করে। এ দাবী মেনে না নিয়ে সমাজের নিয়ম অনুযায়ী শুধু শুকুর মিঠার জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা সমাজের প্রধানদের দিতে রাজি ছিলাম।
কিন্তু এ টাকা না নিয়ে আমাকে এক বছর তিন মাস ধরে সালিশি বৈঠকে সমাজচ্যুত (একঘরে) করে রাখে।এখন আমাকে ঈদের দিনে ঈদগাহে ও প্রতিজুম্মায় মসজিদে নামাজ পড়তে দেয় না। সোলেয়মান আলী আরোও জানান, গত কোরবানির ঈদের এক টুকরা মাংস পযন্ত কেউ দেয়নি।
গত রমজান ঈদের আগে সমাজের গোরস্থানে আমার ছোট ছেলে সংস্কার কাজ করতে গেলে তাকে সমাজের লোকজন পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এমনকি আমার মাঠের জমি চাষ ও পুকুর মাছ চাষ এবং জমি বর্গা নিতে নিষেধ করায় আমি মহাবিপাকে পড়েছি।
শ্যামনগর গ্রামের সমাজের দুই প্রধান আহাদ আলী ও কাসেম আলী জানান,আমাদের সমাজের নিয়ম আইন কানুন না মানায় সালিশি বৈঠকে সমাজের সবার মতামত নিয়ে সোলেয়মান আলীকে সমাজচ্যুত (একঘরে) করার চুড়ান্ত সিন্ধান্ত নেয়া হযেছে। সমাজের দুই প্রধান আরোও জানান সোলেয়মান আলীর পরিবার কে সমাজচ্যুত করার পর তাদের মাঠের কৃষি জমি ও পুকুর বর্গা নিয়ে সমাজের কোন লোক চাষ করতে পারবে নাবলেও ওই বৈঠকে সিন্ধান্ত হয়।
পিপরুল ইউপির ৩ নম্বর ওর্য়াড সদস্য বকুল দেওয়ানজানান,সোলেয়ান আলীর ছেলের বিয়ে নিয়ে সমাজের লোকদের সাথে ঝামেলা হওয়ায় তাকেসমাজচ্যুত করা হয়েছিল বলে শুনেছিলাম।তবে এটা সঠিক হয়নি বলে মনে করি।
নলডাঙ্গাথানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল রহমান সমাজচ্যুত করার ব্যপারে বলেন,এটা সমাজের ব্যাপার।তবে সমাজের বিধি বিধান যদি প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে ভুক্তভোগী ব্যাক্তি প্রতিকার চাইলে আমরা আইনগত সহয়তা দিব।উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব আল রাব্বি জানান,ঘটনাটি আমার জানা নাই।খোঁজখবর নিয়ে জানাতে পারবো।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply