প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত নাটোর শহরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস থেকে হরিশপুর বাইপাস পর্যন্ত শহরের ভেতর দিয়ে যাওয়া ৫ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সড়কের প্রশস্তকরণ বা সম্প্রসারিত কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ফুটপাত দখল। আবার সমাপ্ত অংশে ডিভাইডার নির্মাণেও অর্থের বিনিময়ে স্বল্প দুরত্বে বিরতি দিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পৌর এলাকার পানি নিষ্কাশনে রাস্তার দুই পাশে নির্মিত ড্রেনই ফুটপাত হিসেবে হাঁটাচলার জন্য ব্যবহার শুরু করেছিল জনসাধারণ। তবে ধীরে ধীরে সেগুলো দখল করে পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে একাধিকবার হুঁশিয়ারী দিলেও সাড়া দিচ্ছেন না কেউ। এছাড়াও ফুটপাত ঘেঁষে নির্মাণ সামগ্রী রাখায় রাস্তার যান চলাচলও সংকুচিত হচ্ছে। শুরু থেকেই ফুটপাত দখলমুক্ত করা না হলে সড়ক সম্প্রসারণ কাজের সুফল পাবে না শহরবাসী, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ২০১১ সালের শেষভাগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাটোর সফরকালে শহরবাসীকে দেয়া সাতটি প্রতিশ্রুতির অন্যতম ছিল শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া সড়কটির ডিভাইডারসহ প্রশস্তকরণ। সেই সূত্রে এডিবির অর্থায়নে নাটোর শহরের হরিশপুর বাইপাস মোড় থেকে বনবেলঘরিয়া বাইপাস মোড় পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়কের মিডিয়ানসহ পেভমেন্ট প্রশস্তকরণ প্রকল্পের আওতায় মোট ৫.৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ডিভাইডার ও ড্রেন-ফুটপাতসহ ৪৮ ফুট প্রস্থের সম্প্রসারিত সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম শিমুলের তৎপরতায় দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয় প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক কাজ। জমি অধিগ্রহনজনিত কারণে প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত হওয়ায় শহরের আলাইপুরস্থ মুসলিম ইন্সটিটিউট থেকে ছায়াবানীর মোড় হয়ে কানাইখালীস্থ নাটোর প্রেস ক্লাব পর্যন্ত সম্প্রসারণ কাজ থেমে রয়েছে বেশ কয়েকমাস। এরই সুযোগে ধীরে ধীরে দখল হতে থাকে নির্মাণকাজ শেষ হওয়া ড্রেন কাম ফুটপাত।
সেই সাথে শহরের হরিশপুর থেকে মাদ্রাসামোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় ডিভাইডার নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি রেস্তরার সামনে রাস্তার দুপাশে পারাপারের জন্য মাঝখানে রাস্তা রেখে নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে অল্প দুরত্বে পারাপারের সুযোগ রাখায় লাভবান হচ্ছে রেস্তরাসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। অবৈধ সুবিধা নিয়ে সড়ক পারাপারের জন্য স্বল্প দুরত্বে বিরতি দিয়ে ডিভাইডার নির্মান করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। মাদরাসা মোড় এলাকা থেকে চকরামপুর এলাকায় ইসলামীয়া খাবার হোটেল পর্যন্ত ডিভাইডার নির্মানের সময় স্বল্প দুরত্বে বিশেষ করে হোটেলের সামনে বিরতি দেওয়ায় অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলী সহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন কেউ কেউ। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
শনিবার হরিশপুর থেকে বনবেলঘরিয়া বাইপাস এলাকা পর্যন্ত শহর ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাত দখল করে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে শতাধিক দোকান। বেশি দখল হয়েছে রেল স্টেশন, হাফরাস্তা, আলাইপুর ও কানাইখালী এলাকার ফুটপাতগুলো। রেল স্টেশন এলাকায় ফুটপাতের উপর চা-স্টল, ফলের পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করছেন দোকানীরা। হাফরাস্তা এলাকায় রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিজেদের জায়গা বুঝে নিলেও সেখানে আবারও বসেছে হোটেল, রিকশাস্ট্যান্ড ও বিপণীবিতান। ফুটপাতের উপর ওয়ার্কশপগুলোর শ্রমিকরা ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছে।
সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মোটর গ্যারেজের কাজও চলছে ফুটপাতের উপর। নবনির্মিত জেলা পরিষদ মিলনায়তনের বিপরীতে রীতিমত ফার্নিচার, টাইলস ও হার্ডওয়্যারস সামগ্রীর দোকানগুলো তাদের পন্য ফুটপাতের উপর রাখায় চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। আর কানাইখালী থেকে নাটোর-ঢাকা মহাড়কের মাদ্রাসামোড় পর্যন্ত রাস্তার বামদিকে ফার্নিচার ও ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপের দোকানগুলোর কারণে ফুটপাত থেকে রাস্তায় নেমে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। ফুটপাত দখল ও ডিভাইডার নির্মাণে অনিয়ম নিয়ে ক্ষুদ্ধ পথচারীরা। শহরের দক্ষিণ বড়গাছা এলাকার আব্দুর রহমান অভিযোগ করেন, ফুটপাতগুলো ধীরে ধীরে দখল হওয়ায় ভোরবেলা হাঁটাচলায় অসুবিধা হচ্ছে।
কানাইখালী এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সড়ক সম্প্রসারণ কাজের কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। যে যার মত ফুটপাত দখল করছে আর আমরা জনগণ গায়ে-পায়ে ধুলা লাগিয়েই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছি।’
মাদ্রাসামোড় এলাকার অটোরিক্সা চালক মনসুর ও বাবলুসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেন, প্রতিনিয়তই মাদ্রাসামোড় থেকে হরিশপুর বাইপাস পর্যন্ত চলাচল করতে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় যানজটের জন্য। ডিভাইডার নির্মাণ হতে দেখে যানজট কমার আশা করলেও একটি রেস্তরা ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দিতে গাড়ি পারাপারের সুযোগ রাখায় আবারো যানজটের কবলে পড়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
নাটোর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম খান বলেন, নাটোর শহরের সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন হলে সরকারের প্রতি নাটোরবাসীর আস্থা আরো বাড়বে। শহরকে নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন করতে হলে প্রকল্পটি স্বচ্ছতার সাথে বাস্তবায়ন করা উচিত। এজন্য সবার আগে ফুটপাতসহ দখলমুক্ত করতে হবে।
নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং অর্থের বিনিময়ে ডিভাইডার নির্মাণে স্বল্প দুরত্বে বিরতি রেখে পারাপারের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন এবং যানজট নিরসনের জন্য সড়ক সম্প্রসারণ কাজে যানজট তৈরী হতে পারে এমন কিছু করা হবে না।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী বলেন, ‘সচেতনতার অভাবে কেউ কেউ ফুটপাত দখল করছেন। মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাইলে পৌর কর্তৃপক্ষ সব ধরণের সহযোগিতা করতে প্রস্তত রয়েছে।’
নাটোর-২ আসনের (সদর ও নলডাঙ্গা) সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘নাটোরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্য ও নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রসারিত সড়কের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যা এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পে কোন দখলবাজি সহ্য করা হবে না।’ সড়ক ও জনপথ বিভাগকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply