কথায় বলে ‘শাকে বৃদ্ধি মল’ অর্থাৎ শাক খেলে মল বাড়ে – পেট পরিষ্কার হয়। শাক দামে সস্তা এবং সহজে পাওয়া যায় বলে হেলাফেলার বস্তু নয়। শাকের অনেক গুণ, ভিন্ন ভিন্ন শাকের ভিন্ন ভিন্ন্ রকম। বৈদ্য শাস্ত্রে এক এক রকম শাকের এক এক রকম গুণ বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি শাক সুষনি থানকুনিকে রসায়ন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রসায়ন অর্থে শরীরে সপ্তধাতু – রস, রক্ত, মাংস, মেদ, মজ্জা্, অস্থি ও বীর্যের পোষক।
শাকে লবণ জাতীয় উপাদান ও ক্ষারজ পদার্থ(অ্যালকলি) বেশি পরিমাণে আছে। এগুলি হল ক্যালসিয়াম, সোডা ও ক্লোরিন প্রভৃতি। এ ছাড়া ও শাকে আছে প্রচুর ভিটামিন। কাজে কাজেই আমাদের রোজকার খাওয়ার সামান্য শাকান্ন বা শাক-ভাতের গুণ অশেষ।
বিভিন্ন শাকের নাম ও তার উপকারীতা দেওয়া হলো :
গিমে শাক :
জনডিস রোগে উপকারী, জ্বর, লিভারের অসুখ, পিত্ত ও কফ রোগ উপশম করে। এই শাক স্বাদে একটু তেতো। খেলে মুখের অরুচি সারে। বেগুন আলু দিয়ে চচ্চড়ি, বেসন বা ডাল বাটা দিয়ে এই শাকের বড়া খেতে ভাল লাগে।
ছোলার শাক :
রুচিকর, সহজে হজম হয় না, কফ ও বায়ু বৃদ্ধি করে, মল রোধ করে, পিত্ত ও দাঁতের রোগে উপকারী।
পাট পাতা :
কৃমি, কুষ্ঠ ও রক্তপিত্ত(নাক, মুখ থেকে রক্ত পড়া) নাশ করে। শুকনো পাতা যাতে নালিতা বা চলতি বাংলা নালতে বলা হয় বায়ু বৃদ্ধি করে কিন্তু জ্বর চর্মরোগ, কফ ও পিত্তের রোগ সারায়।
পুঁই শাক :
ঠাণ্ডা করে, স্নিগ্ধ করে, গুরুপাক, মল বহিষ্কার করে, মেদ বৃদ্ধি করে, খেয়ে হজম করলে মোটা হওয়া যায়, শরীরে আলস্য সৃষ্টি করে। এই শাক নালচে ভাব অর্থাৎ পিচ্ছিল। বল, পুষ্টি ও শুক্র বৃদ্ধি করে। খেলে ঘুম বেশি পায় নিদ্রাবর্ধক, বাতপিত্ত নাশ করে, শরীরের শ্লেষ্মা সৃষ্টি করে। পেটের অসুখ বা আমাশা হলে, শরীর ফুলে উঠলে বা শোথ রোগ হলে এবং বাত ব্যাধিতে পুঁই শাক খাওয়া উচিত নয়। পুঁই শাকের সঙ্গে তিল খাওয়া বা তিলের তেলে পুঁই শাক রান্না করা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।
মুলোর শাক :
মুলোর কচি পাতা বা কচি মুলোর শাক লঘুপাক অর্থাৎ সহজে হজম হয়। তেলে বা ঘিয়ে ভেজে মুলোর শাক খেলে শরীরের ত্রিদোষ অর্থাৎ বাত, পিত্ত ও কফের দোষ নাশ হয়। কিন্তু ভাল করে সেদ্ধ না করে খেলে কফ ও পিত্ত বাড়িয়ে দেবে।
লাল শাক :
এতে ক্ষারের লবণ গুণ আছে, খুব তাড়াতাড়ি হজম না হলেও খুব গুরুপাক ও নয় অর্থাৎ অল্প গুরুপাক, মল ও প্রস্রাব নিঃসারণ করে, কফ বৃদ্ধি করে।
সর্ষের শাক :
গুরুপাক, মল ও মূত্র বৃদ্ধি করে, শরীরের পক্ষে গরম, শরীরে প্রদাহ জন্মায়। অন্য শাকের চেয়ে এই শাকের গুণ কম। পঞ্জাবিদের ‘সরষোঁ কা সাগ’ ব সর্ষের শাক এবং সেই সঙ্গে মকাই কি রোটি (ভুট্রার আটার রুটি) খুবই প্রিয়।
সাঞ্চে :
কফ ও বাত কমিয়ে দেয়। অর্শ ও লিভারের রোগে উপকারী। এর স্বাদ মিষ্টি মিষ্টি। এই শাকের ভাজা ও তরকারি খুবই স্বাদযুক্ত। সাধারণত গ্রামাঞ্চলেই বেশি পাওয়া যায়।
মটর শাক :
গুরুপাক, মলকারক(খেলে মল বেশি হয়) বায়ুর প্রকোপ বৃদ্ধি করে। কফ ও পিত্ত নাশ করে।
বেতো শাক :
সহজে হজম হয়, খিদে বাড়ায়, হালকা অর্থাৎ লঘু, শুক্র ও মল বৃদ্ধি করে, মল নিষ্কাশন করে, লিভারের অসুখ রক্তপিত্ত নাক মুখ থেকে রক্ত পড়া, কৃমি, অর্শ, বাত, পিত্ত ও কফ অর্থাৎ ত্রিদো্ষ নাশ করে। বেতো শাককে হিন্দিতে বলা হয় ‘বাথুয়া’। টক দই বিট নুন, জিরে ভাজা, রাই, সর্ষের গুঁড়ো দিয়ে এই শাকের রায়তা খেতে অবাঙালিরা খুবই ভাল বাসেন।
হিঞ্চে শাক বা হেলেঞ্চা শাক :
পিত্ত নাশ করে। যাঁদের লিভারের দোষ আছে, যাঁদের হাত গা জ্বালা করে তারা প্রতিদিন সকালে এই শাক থেঁতো করে বা ছেঁচে রস করে খেলে উপকার পাবেন। হিঞ্চে শাকের রস শ্বেত চন্দনের ঘষে নিয়ে সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া বসন্ত রোগের প্রতিষেধক। এই শাকের স্বাদ তেতো। এই শাক শরীর ঠাণ্ডা রাখে, রক্ত পরিষ্কার করে। এই শাক সেদ্ধ করে সর্ষের তেল নুন দিয়ে মেখে ভাতে খেতে ভাল লাগে।
থানকুনি পাতা :
থানকুনি পাতাকে আয়ুর্বেদে রসায়ন বলা হয় কারণ এতে আছে শরীরের সপ্ত ধাতুর রস, রক্ত, মজ্জা্, মাংস, অস্থি ও বীর্যে পুষ্টির গুণ। শীতল লঘুপাক সহজে হজম হয়, সারক মল নিঃসারণ করে, নিয়মিত খেলে দীর্ঘজীবন লাভ করা যায়। কাশি, অর্শ, লিভারের অসুখ, প্রস্রাবের অসুখ, গোদ, গলগণ্ড, জনডিস, কৃমি ও যোনির রোগে উপকারী। এই পাতার প্রলেপ লাগালে কুষ্ঠ, যৌনব্যাধি, নালী ঘা ও চর্মরোগ সারে।
পেটের অসুখে ও আমাশায় থানকুনি পাতার রস ও থানকুনি পাতার ঝোল খাওয়ার বিধান তো সকলেরই জানা আছে।
সুষনি শাক :
সুষনি শাককেও আয়ুর্বেদে রসায়ন বলা হয়েছে। কারণ এই শাকেও আছে শরীরের সপ্তধাতুর পুষ্টির গুণ। এই শাককে আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে নিদ্রাজনক, খেলে ভাল ঘুম হয়, অর্থাৎ অনিদ্রায় উপকার দেয়, অগ্নিদীপক অর্থাৎ খিদে বাড়ায়, মেধা বাড়ায় মেধাজনক। ‘রসায়ন’ তো আগেই বলা হয়েছে।
এই শাক খেতে মিষ্টি। এই শাক ভাজা নিয়মিত খেলে মাথাও ঠাণ্ডা থাকে, রাতে ঘুম ও ভাল হয়। সুষনি শাকের আছে আর ও অনেক অসুখ সারা বার ক্ষমতা।
১। যাঁরা হাঁপানিতে কষ্ট পাচ্ছেন তাঁরা পাঁচ চা চামচ সুষনি শাকের রস গরম করে সন্ধেবেলায় খেলে রোগের প্রকোপ কমবে।
২। যে সব ছেলে-মেয়ে লেখা পড়ায় একটু পিছিয়ে আছে যারা পড়া ঠিক মনে রাখতে পারে না অর্থাৎ সাদা বাংলায় যাদের বলা হয় মাথা মোটা তাদের চার মাস ধরে নিয়মিত ভাতের সঙ্গে সুষনি শাক সিদ্ধ খাওয়ালে মেধা বাড়বে এবং পড়াশোনায় আর পিছিয়ে থাকবে না।
৩। ঘুম না হলে এই শাকের কার্যকারিতার কথা সকলেরই জানা। এই শাক খেলে ঘুম আসে বলে গ্রামাঞ্চলে অনেকে একে ঘুম শাকও বলেন। যদি কোনো রকমের দুশ্চিন্তার জন্যে বা অন্য কেনো শারীরিক বা মানসিক কারণে রাত্তিরে ঘুম ঠিক মতো না হয় তিন-চার চা চামচ সুষনি শাক বেশ খানিকটা জলে সেদ্ধ করে নিতে হবে। ফুটে ফুটে যখন চার টেবিল চামচ মতো জল বাকি থেকে যাবে সেই জলটা ছেঁকে নিয়ে অল্প দুধ মিশিয়ে রোজ সন্ধেবেলা নিয়মিত খেলেই ঘুম আসবে।
কলাই শাক :
লঘু পাক অর্থাৎ হজম হয় তাড়াতাড়ি, মলকারক মল নিষ্কাশন করে, ত্রিদোষ অর্থাৎ বাত, কফ, পিত্ত নাশক।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply