নিয়ামতুল্লাহ্ ইমন, জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ সিতোরিউ কারাতে দো সামাকুশির আয়োজনে ১৫ থেকে ১৮ মে নেপালের কাঠমাণ্ডুতে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক কারাতে প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ টিম ছাড়াও অংশ নেয় ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও স্বাগতিক নেপালের ৫২০ জন প্রতিযোগী। নেপালের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয় সিতোরিউ কারাতে দো কিউকাই অব বাংলাদেশ একাডেমিকে। দেশের বিভিন্ন জেলায় কারাতে খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাছাই করা হয় তিনজনকে। তারা হলো—জয়পুরহাট সদরের চকগোপাল পাটারীপাড়া গ্রামের রিয়া আক্তার, থানাপাড়ার নাসরাফ জাহান ইসা ও দেবীপুর কাজীপাড়ার খালেদ মাহমুদ রায়হান। তিনজনই জয়পুরহাট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য। ‘মে মাসের ১৪ তারিখে কারাতে টিমের আমরা তিনজন খেলোয়াড় ও একজন কোচ হিলি বর্ডার দিয়ে প্রবেশ করে
বালুরঘাট গিয়ে নাইটকোচে উঠি। তারপর কাঁকড়াভিটা দিয়ে নেপালে প্রবেশ করে কাঠমাণ্ডু যাই।’ বলল ইসা। ‘নেপালে প্রতিবছরই মে অথবা জুন মাসে এই আন্তর্জাতিক কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। ছয়টি দেশের মধ্যে টিম ও একক ইভেন্টে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা হয়। সেখানে পয়েন্টের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্বাগতিক নেপাল, দ্বিতীয় হয়েছে ভারত ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশ।’ যোগ করল বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল প্রতিযোগী রিয়া। রিয়া আক্তার একক ইভেন্টে কুমিতে মাইনাস ৫০ কেজি ওজন শ্রেণিতে রৌপ্যপদক অর্জন করে। বেস্ট ডিসিপ্লিনারি পদকও অর্জন করে সে। রিয়ার বাবা মাহফুজুর রহমান পেশায় একজন
ব্যবসায়ী। মা গৃহিণী। সে মঙ্গলবাড়ি ভারুনিয়া সিদ্দিকীয়া মাদরাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। রিয়া বলল, ‘২০১৪ সালে ব্র্যাক কিশোরী ক্লাবের সদস্য হই। সেখান থেকে সাত দিনের সেলফ ডিফেন্সের একটি কোর্স করার পর থেকেই কারাতের প্রতি দুর্বলতা ও ভালো লাগা শুরু। সে বছরই সিতোরিউ কারাতে দো কিউকাই অব বাংলাদেশ একাডেমিতে অংশগ্রহণ করে অনুশীলন শুরু। প্রথম দিকে এ খেলায় অংশ নেওয়া নিয়ে লোকে নানা কটূক্তি করেছে। তার পরও হাল ছাড়িনি।’ ২০১৫ সালে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আন্তর্জাতিক মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল অর্জন করে সে। ২০১৭ সালে ওয়ালটন জাতীয় মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায় লাভ করে তাম্রপদক। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের আয়োজনে ২৫তম জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতায়ও তাম্রপদক পায়। ‘আমি চারটি দেশের প্রতিযোগীকে হারিয়ে ফাইনালে উঠার পর স্বপ্নের মতো লাগছিল। ফাইনালে যখন স্বাগতিক নেপালের প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়াই শুরু করলাম, তখন আমার সহপাঠীরাসহ অন্যরাও বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চিত্কার শুরু করল। এই মুহূর্তটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ জানায় রিয়া। নাসরাফ জাহান ইসা জয়পুরহাট সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ইসা বলল,
‘যেদিন নেপালে আসি, তার পরদিনই খেলা শুরু। ভারতের ভেতর দিয়ে বাসে করে নেপালে আসার কারণে আমরা হোটেলে গিয়ে খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। খেলতে পারব কি না এ নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলাম। মনে একটা ভয়ও কাজ করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সাহস সঞ্চয় করে লড়াই করেছি। খেলা শেষে খুব বেশি ঘুরতে পারিনি, তবে নগর কোট, নেপালের র্যাডিসন ইন্টারন্যাশনাল হোটেল, স্বর্ণমন্দির, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের হাইকমিশন ভ্রমণ করেছি ।’ সিতোরিউ কারাতে দো কিউকাই অব বাংলাদেশের প্রধান প্রশিক্ষক ও মালয়েশিয়া থেকে ব্ল্যাকবেল্ট অর্জনকারী শাহজাহান আলী দেওয়ান সাজু বলেন, ‘জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কারাতে প্রতিযোগিতা
অনেক কম হয়। যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় খেলোয়াড়দের নিয়ে বেশি বেশি ক্যাম্পেইন করা যেত, তাহলে অনেক খেলোয়াড় বের হয়ে আসত। আন্তর্জাতিকভাবে অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করা সম্ভব হতো। বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফিজ বলেন, ‘নেপালের এই প্রতিযোগিতায় খেলার জন্য ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয় এবং দেশের জন্য পদক পাওয়ায় দলের প্রশিক্ষক শাহজাহান আলী দেওয়ান সাজু ও খেলোয়াড়দের বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply