মুহাম্মাদ শাহিদ ইমাম:- তোর কিছু বলার বা জানার আছে..? (হুজুরের দিকে তাকিয়ে) – জী মা… উনার সাথে আলাদা ভাবে কিছু বলতে চাই। ওরে আল্লাহ… তাহলে এই হুজুর ছেলেটিই পাত্র…? বাবা মা শেষ মেস আমাকে এই খ্যাত হুজুরের সাথে আমার বিয়ে দিচ্ছে.? আমি তাদের কাছে এতটাই বোঝা হয়ে গেলাম.?এই হুজুররা তো হলো রাজাকার, দেশদ্রোহী। ছোট বেলা থেকেই নাটক,সিনেমায় দেখে আসছি মুক্তিযুদ্ধে যারা রাজাকার ছিল, যারা মা বোনদের
ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে তারা এই রকম দাড়ি টুপি ওয়ালা ছিল। এরা পুরো খ্যাত, আনরোমান্টিক। না… না… এই ছেলের সাথে সংসার করা যাবে না।এই ছেলেকে বিয়ে করা প্রশ্নেই আসেনা। (সায়মা মনে মনে কথা গুলো ভাবে) – মা… তোমার কাকা বা দাদা কেউ বাসায় আছে..? – না।দাদা অনেক আগেই মারা গেছেন। কাকারা অনত্র থাকে। – ও আচ্ছা। তাহলে তোমার ছোট ভাই একটা আছে না। ক্লাস সিক্সে নাকি সেভেনে পড়ে। – জী। জীবন। ক্লাস সিক্সে পড়ে।
– হুম।তাহলে তুমি একটু উঠে গিয়ে তোমার মা আর তোমার ভাইকে একটু ডেকে আনো। – ঠিক আছে। সায়মা উঠে গিয়ে তার ভাই ও তার মাকে ডেকে আনে। – সাহেদ…. তোমরা বরং অন্য রুমে গিয়ে কথা বল।আমি আপার সাথে কথা বলছি। – তোমরা বরং দক্ষিনের রুমে আলাদা কথা বল।এই সায়মা তুই তোর রুমে নিয়ে যা। বাবা তুমি ওর সাথে যাও।( সায়মার মা) – ওদের একা আলাদা রুমে কথা বলতে দেওয়া ঠিক হবে না।শরীয়তে নিষেধ আছে। জীবন..
তুমিও ওদের সাথে যাও। ওমা..এটা আবার কি। বিয়ে করবো আমরা। আলাদা ভাবে কথা বলবো আমরা এটাই স্বাভাবিক। এখানে আবার জীবনকে কেন নিতে হবে। এই হুজুরদের সব অভ্যুদ নিয়ম। না… না… এই হুজুরকে বিয়ে করে যাবে না। এই হুজুরকে বিয়ে করলে আমার জীবন পুরো তেজপাতা হয়ে যাবে।না….না… আমি উনাকে বলে দিবো আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। আচ্ছা…. আমি যদি বলি আপনাকে বিয়ে করতে পারবে না আর উনি যদি
বাবা মাকে বলে দেয় তাহলে তো বাবা মা অনেক কষ্ট পাবে।আমি তো ফ্যামিলির জন্য একটা আপদ। ফ্যামিলির জন্য অনেক বড় বোঝা। এই হুজুরকে বিয়ে করলে অন্তত বাবা মা খুশি হবে। মা বাবার খুশির জন্য না হয় উনাক বিয়ে করে নি। আচ্ছা… আমি যে উনাকে বলছি বিয়ে করবো না…? আমাকে উনার পছন্দ হবে তো..? আমি তো সুন্দর না,খাটো।(কথাগুল ো হাটতে হাটতে মনে মনে ভাবে সায়মা) – এটা আপনার রুম..? – জী… এখানে আমি আর ছোট
বোন থাকি। বসুন…। ما شاء الله عز وجلّ অনেক সুন্দর। বই পড়তে ভালোবাসেন.? (সাহেদ খেয়াল করে টেবিলের উপর অনেক গুলো বই) – এই কম বেশি পড়া হয়। – কার বই বেশি পড়া হয়.? – হুমায়ুন আহমেদ স্যারের। – ইসলামিক বই পড়েন না। – না… মানে.. তেমন পড়া হয় না। -মুসলমান হিসেবে ধর্মীয় এলেম জানার জন্য ধর্মীয় বই পড়া তো দরকার তাই না..? – হুম ( মাথা নেড়ে) – আপনার তো হীল পড়ে হাটতে কষ্ট হচ্ছে। বসুন। আর স্বাভাবিক স্লিম জুতা পড়ে হাটলেই ভালো।কষ্ট ও হবে না।পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। – হুম (মাথা নেড়ে) সাহেদের কথা শুনে সায়লা লজ্জিত হয়। – নিয়মিত কোরআন পড়া
হয়..? – ইয়ে মানি… না। সময় পাই না। – সময় পান না..? কি যে বলেন.. হুমায়ুন স্যারের বই পড়ার সময় পান। কোরআন পড়ার সময় পান না। এটা খুবই লজ্জার ব্যপার না…? সায়মা মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে। -আচ্ছা আমার আর কিচ্ছু জানার নাই। আমার সম্পর্কে কি জানতে চান। – আর কিছু জানার নাই আমার সম্পর্কে.? (কিছুটা অবাক হয়ে।) – আর কি বা জানার আছে..?একটি মেয়ের বিয়ের জন্য রান্নাকরা ,সেলাই করা,ঘর গোছানো,ঘর ঝাড়ু দেওয়া,
ইত্যাদি ইত্যাদি জানা বাধ্যতামূলক নয়।সময়ের ব্যবধানে মানুষ এমনিই সব শিখে নিতে পারে।আপনার কোন কিছু জানার আছে.? – জ্বী না। – আচ্ছা তাহলে চলুন।উনারা অপেক্ষা করতেছে। -হুম চলুন। তারপর তারা সামনের রুমে আসে। তারপর হালকা নাস্তা করে সাহেদ আর তার মা সায়মার থেকে বিদায় নেয়। না… এই টাও হবে না। এক হ্রাস হতাশা নিয়ে সায়মা তার রুমে চলে আসে। – কিরে কি বুঝলি..? তোকে পছন্দ হয়েছে..? (সায়মার মা) – না। (মাথা নেড়ে) – তোর মত কপাল পোড়ারে কে পছন্দ করবে। বলছি শাড়ি পড়তে।একটু সাজগোজ করতে। না..হেতেন এই ড্রেসেই যাবে। সাজগোজ করতে হেতেনের
ভাল লাগে না। নিজের তো বিয়ে হচ্ছে না আমার মাইয়াডারও বিয়ে হতে দিচ্ছে না। আস্ত কপাল পোড়া মাইয়া। কথাগুলো বলতে বলতে রান্না ঘরে সায়মার মা চলে যায়। সায়মা বুকভরা হতাশা নিয়ে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।আর ভাবতে থাকে আসলেই তো আমি সময় করে ঠিকই হুমায়ুন স্যারের বই পড়ি অথচ সর্বশেষ কবে কোরআন পড়েছি তাও তো মনে নেই। নিজেকে মুসলমান দাবি করি অথচ আমি নামাজ পড়ি না। না… আজ থেকে
নামাজ মিস দিবো না…ان شاءالله عز وجلّ তারপর থেকেই সায়মা নামাজ পড়া শুরু করে দেয় পরের দিন ইশার নামাজ পড়ার পর সাময়াম মনে হলো কোরআন মাজিদ টি খুলে দেখি। সায়মা উঠে গিয়ে তাকের উপর থেকে কোরআন মাজিদ টি হাতে নেয়। পরিস্কার একটা কাপড় দিয়ে ধুলাবালি পরিস্কার করে নেয়। সায়মার নিজের কাছেই খারাপ লাগে যে, গল্পের বই গুলোকে কত যত্ন করে টেবিলে সাজিয়ে রাখে।অথচ যেই বই তাকে মুক্তি দিবে সেই বইকে কত অযত্নে পেলে রেখেছে। সায়মা সুরা ইয়াছিন পড়া শুরু করে। অনেকদিন না পড়তে পড়তে এক প্রকার কোরআন পড়া সে ভুলেই গেছে। অনেক কষ্টে সুরা
ইয়াছিন পড়া শেষ করে। কোরয়ান মাজিদে একটা চুমু দিয়ে সায়মা আর তা তাকে না রেখে টেবিলের উপর রেখে দেয়। টেবিলে কোরআন মাজিদ রেখে সায়মা টেবিলের উপর মাথা রেখে নানা বিধ চিন্তা করতে থাকে। – এই সায়মা…. সায়মা…. কপাল মনে হয় খুলেছে… ছেলের পক্ষ ফোন দিছে। তারা নাকি সামনে এগুতে রাজি। ( দৌড়ে আসতে আসতে) সায়মা লক্ষ করে তার মায়ের মুখে অনেক হাসি । অনেক দিন পর মায়ের মুখে এমন হাসি দেখেছে সে। মায়ের হাসি দেখে সেও মুচকি হেসে দেয়। সায়মার মা চলে যাওয়ার পর সায়মা নানা বিধ চিন্তায় পড়ে যায়। . আল্লাহ্ যদি চাই চলবে …….ইনশাআল্লাহ
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply