কামরান আহমেদ রাজীব, কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ইজারা ছাড়াই পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে খননযন্ত্রের মাধ্যমে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করার ঘটনায় গণমাধ্যমে খবর বের হওয়ায় অবশেষে উপজেলা প্রশাসনের টনক নড়েছে। সোমবার সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়েছে। তবে অভিযান শেষে ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখান থেকে চলে আসার কিছুক্ষণ পরই ওই প্রভাবশালী চক্রটি ফের মাটি কাটা শুরু করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তারের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি), নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজগর হোসেনের নেতৃত্বে সোমবার দুপুরের দিকে উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের বাহিরমাদী সদর ঘাট এলাকায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটাস্থলে অভিযান চালানো হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ অভিযানকালে মাটি ভর্তি একটি ভারী ড্রাম ট্রাক বেরিয়ে যাওয়ার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজগর হোসেন ওই ট্রাক থামান। এ সময় চালকের পরিবর্তে হেলপার ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন। লাইসেন্স ছাড়া হেলপার কর্তৃক ট্রাক চালানোয় কথিত চালক মহিদুল ইসলামকে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে মোটরযান অধ্যাদেশ আইনে মহিদুল ইসলামকে এক মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন এ আদালতের নেতৃত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজগর হোসেন।
এ ছাড়া সংকীর্ণ রাস্তায় (ধারণ ক্ষমতার বাইরে) মাটি ভর্তি ওভার লোডেড ট্রাক প্রবেশের দায়ে ট্রাকটির মালিককে ১ হাজার ৭শ টাকা জরিমানা করেন তিনি। এদিকে পদ্মার তীরবর্তী এলাকা থেকে মাটি কাটা চক্রের মূল হোতা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন নিজ জমির মাটি কেটে সেখানে পুকুর খনন করছেন বলে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে জানান। এ সময় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মাটি কাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে দণ্ডপ্রাপ্ত ভারী ড্রাম ট্রাকের কথিত চালক মহিদুল ইসলামকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হলে তাকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ওই প্রভাবশালী চক্রটি পুনরায় মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন। স্থানীয়রা জানান, অভিযান শেষে ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখান থেকে চলে আসার পরপরই ফের তারা মাটি কাটা শুরু করেন। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তারকে অবগত করা হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে জানা যায়। সহকারী কমিশনার (ভূমি), নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজগর হোসেন বলেন, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা পদ্মায় অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানকালে চালকের পরিবর্তে একজন হেলপার ভারী ড্রাম ট্রাক চালানোয় মোটরযান অধ্যাদেশ আইনে তাকে এক মাস কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া নিয়ম ভেঙে সংকীর্ণ রাস্তায় ভারী ট্রাক প্রবেশের দায়ে ট্রাক মালিককে ১৭শ টাকা
জরিমানা করা হয়। এ সময় ট্রাক মালিক দোষ স্বীকার করে আর কখনো ওই রাস্তায় ট্রাক ঢোকাবেন না মর্মে মুচলেকা দেন বলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজগর হোসেন জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের বাহিরমাদী গ্রামের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও ফারুক ডাক্তারের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী চক্র সেখানকার সদর ঘাট এলাকায় বিশ্ববাঁধের নিচে পদ্মা নদীর সমতল ভূমি থেকে গত এক মাস ধরে অব্যাহতভাবে মাটি কেটে আসছেন। সরকারি ইজারা ছাড়াই তারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে খননযন্ত্র ব্যবহার করে পদ্মার তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত ভারী ড্রাম ট্রাক ও শতাধিক অবৈধ স্টেয়ারিং গাড়িতে মাটি বোঝাই করে নিয়মিত যাওয়া আসার কারণে উপজেলার হোসেনাবাদ থেকে বাহিরমাদী নতুন রাস্তা ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া রাস্তার ছোট বড় কালভার্টগুলোও দেবে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবর বের হলে উপজেলা প্রশাসনের টনক নড়ায় সোমবার সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযান চালানো হয়। এলাকাবাসী এ অভিযানকে প্রথমে স্বাগত জানালেও নির্দেশ উপেক্ষা করে পরে পুনরায় মাটি কাটার মচ্ছব শুরু হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রশাসনের চেয়ে মাটি কাটা চক্রটিই বেশি ক্ষমতাধর বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply