অন্যান্য বারের মতো আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া রাশিয়া বিশ্বকাপের মাস খানেক আগে থেকেই বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা ওড়তে শুরু করেছে। মিছিল, মিটিং, এমনকি পছন্দের টিমের জন্য দোয়া মাহফিল আয়োজনও এখানে নিয়মিত ঘটনা! এবারও এগুলো হচ্ছে।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলা নিয়ে বাংলাদেশিদের উম্মাদনার বিষয়ে নতুন করে কিছু লেখার নেই। বিশ্বকাপ এলে এটি চূড়ান্ত রূপ পায়। অবশ্য বিশ্বকাপ ছাড়াও দেশ দুটির তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে ভক্তরা দুই ভাগ হয়ে নানা কাণ্ডকীর্তি করে থাকেন।
বিদেশি সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশে ফুটবল উম্মাদনা নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। আর সামাজিক মাধ্যম তো ইতোমধ্যেই ব্রাজিল-আজেন্টিনা জ্বরে আক্রান্ত। একেক পক্ষ অন্য পক্ষকে ট্রল করে পোস্ট দিচ্ছেন, পাল্টা মন্তব্য আসছে। কেউ বিপক্ষকে নিয়ে রম্য ভিডিও বানাচ্ছেন। একই রকমভাবে একে অন্যকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক ‘ইভেন্ট’ও তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোতে রাত-দিন পোস্ট-মন্তব্য চলছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলো স্রেফ মজার জন্য করা হলেও বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, এসব আচরণই বচসায় রূপ নিয়ে হামলা, সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়িয়েছে। এবারের বিশ্বকাপ জ্বরের অংশ হিসেবে গত শনিবার শুভ আহম্মেদ সোহেল নামে এক ব্রাজিল ভক্ত ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, কোনো এক মফস্বল শহরে বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও কয়েকটি ট্রাক নিয়ে মিছিল করছেন ব্রাজিলের পতাকা-সজ্জিত শত শত ভক্ত। রাস্তার দুপাশেও ঝুলছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার অসংখ্য পতাকা, ব্যানার, বিলবোর্ড ইত্যাদি। তবে পোস্টদাতা ভিডিওটি ধারণের তারিখ ও স্থান সম্পর্কে কিছু লিখেননি। ফলে এটি চলতি বছরের ভিডিও কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যে বছরেরই ভিডিও হোক না কেন, পোস্ট করার পর গত কয়েকদিনে এটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত দেখা গেছে চার হাজারের মতো শেয়ার হয়েছে ভিডিওটি। ‘লাইক’ দিয়েছেন ৫ হাজারের বেশি মানুষ। ভিউ হয়েছে ১১ লাখের বেশি। মজার বিষয় হলো, ভিডিওটি ব্রাজিলের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছেও পৌঁছে গেছে। তারাও দেদারসে শেয়ার দিচ্ছেন এটি; সাথে জুড়ে দিচ্ছেন নিজেদের মন্তব্যও।
ব্রাজিলিয়ানদের অনেকেই এতে বিস্মিত ও আপ্লুত হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবহারকারী বাংলাদেশিদের এমন উম্মাদনা দেখে হাস্যরস করছেন! অনেকে ব্যাঙ্গাত্মক, এমনকি নেতিবাচক মন্তব্যও করছেন। লিওনার্দো মাদেলা নামে একজন ভিডিওটি শেয়ার করে পর্তুগিজ ভাষায় লিখেছেন ‘Insano’; ফেসবুকের অনুবাদ অপশন এর অর্থ করেছে ‘পাগল’!
লুকাস ফেলিক্স নামে একজন পর্তুগিজ ভাষায় লিখেছেন, ‘Tá Mais Animado Que Os Brasileiros’ । ফেসবুকের ‘অনুবাদ’ অপশনে ক্লিক করার পর এ বাক্যের বঙ্গানুবাদ এসেছে, ‘ব্রাজিলের চেয়ে বেশি উত্তেজিত’। মন্তব্যটির সাথে ফেলিক্স হাসির ‘ইমো’ ব্যবহার করেছেন। জোয়াও ভিক্টর নামে একজনের মন্তব্য ‘Moradores do país Bangladesh mais patriota que o próprio brasileiro.’ ফেসবুক বলছে এর অনুবাদ- ‘বাংলাদেশের বাসিন্দারা ব্রাজিলের চেয়ে বেশি দেশপ্রেমিক।’ মন্তব্যকারীদের সবার প্রোফাইলের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে তারা সবাই ব্রাজিলিয়ান।
তাদের কেউ কেউ আবার বাংলাদেশকেও চেনেন না! ব্রাজিলের পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা দেখা গেলেও তারা ভিডিওটি ভারতের বলে মনে করছেন। অ্যালেক্স আলভেস লিখেছেন, ‘ATÉ OS INDIANOS ESTÃO DANDO AQUELE APOIO AOS BRASILEIROS HEHEHEHE’। অর্থাৎ, ‘এমনকি ভারতীয়রা ব্রাজিলীয়দের সমর্থন দিচ্ছে। হেহেহেহে!’ পাবলো হেনরিকের মন্তব্য, ‘Os Indianos estão mais Brasileiros que os Brasileir। অর্থাৎ, ‘ভারতীয়রা ব্রাজিলের চেয়ে বেশি ব্রাজিলিয়ান।’ সাথে হাসির ‘ইমো’!
বিশ্বকাপ খেলা মানেই উত্তেজনার ছড়াছড়ি। এতে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে, থাকবে হার জিতও। তবে অতিরিক্ত আবেগের বশে এমন কিছু করে ফেলা উচিৎ নয়, যা জাতি হিসেবে অন্যের কাছে আমাদের খাটো করে তোলে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply