ঘটনা অনেকটা রূপকথার গল্পের মতোই। ৪১ বছর আগে হারিয়ে গেছে এক ছোট্ট শিশু। এরপর বহু কালের পরিক্রমায় দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে হয়েছে তাঁকে। এতগুলো বছর পরেও মা-বাবার টানে, তাঁদের খুঁজতে ফিরে এসেছেন দেশে।
এমনই গল্প বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেনিশ নাগরিক মিন্টো কারস্টেন সোনিক এর। ৪১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবা-মার সন্ধানে স্ত্রীকে নিয়ে পাবনার পথে পথে ঘুরছেন তিনি। ছয় বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া মিন্টো জানেন না তার বাবা-মা এমনকি গ্রামের নাম। ছোটবেলার একটি ছবিকে সম্বল করে নিজের পরিবার ফিরে পেতে পাবনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। হারিয়ে যাওয়ার সময়কার তার ছবি দেখিয়ে জানতে চাইছেন কেউ এই ছেলেটিকে চেনেন কিনা ?
মিন্টোর বিলি করা লিফলেট থেকে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে ছয় বছর বয়সে পাবনার নগড়বাড়ি ঘাটে হারিয়ে যান মিন্টো। সেখান থেকে চৌধুরী কামরুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি মিন্টোকে পৌঁছে দেন ঢাকার এক আশ্রমে। ১৯৭৮ সালে ওলে ও বেনফি নামের ডেনিশ দম্পতি তাকে দত্তক নিয়ে ডেনমার্ক নিয়ে যান।
বুধবার পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে মিন্টো বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে স্ত্রীকে নিয়ে পাবনায় আসেন তিনি। কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন পাবনায় স্বাধীন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। অনুসন্ধান করতে করতে চলে আসেন বাংলাদেশের পাবনায়।
মিন্টো জানান, ছেলে বেলার কোনো স্মৃতিই মনে নেই তার। জানেন না বাংলা ভাষা। তবে পেশায় চিত্রশিল্পী মিন্টোর গায়ের রং জানান দেয় তার বাঙালী পরিচয়।
তিনি আরো জানান, পুরনো কাগজ ঘেঁটে জেনেছেন মাত্র ৬ বছর বয়সে পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি ঘাট এলাকা থেকে হারিয়ে যান তিনি। সেখান থেকে ঢাকার ঠাটারিবাজার টেরি ডেস হোমস নামের শিশু সদনে ছিলেন। পরে শিশু সদন থেকে ১৯৭৮ সালে ডেনমার্কের এক নিঃসন্তান দম্পতি তাকে দত্তক নিয়ে যায়। সেখানেই মিন্টোর শৈশব কৈশোর কাটে। পেশায় একজন চিত্রশিল্পী তিনি। ডেনমার্কের নাগরিক এনিটি হোলমিহেভ নামের এক চিকিৎসককে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে।
মিন্টোর স্ত্রী এনিটি হোলমিহেভ বলেন, আগে তার স্বামীর তেমন সমস্যা ছিল না। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সব সময় হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেন। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে খুবই দুর্ব্যবহার করতেন। মাঝে মধ্যেই মেজাজ খিটমিটে হয়ে যেত, কোনো কিছুই ভালো লাগতো না তার। অবশেষে পরিবারের সবার সিদ্ধান্তে ছোট বেলার একটি ছবিকে অবলম্বন করে ছুটে আসেন পাবনায়।
মা-বাবার খোঁজে সুদূর ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন মিন্টো। তিনি তাঁর আপনজনদের ফিরে পাবেন, এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply