বুধবার সকালে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজে নিজ বাড়িতে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।তার পরিবারের একজন মুখপাত্র বলেছেন।
অধ্যাপক হকিংয়ের সন্তান লুসি, রবার্ট এবং টিম এক বিবৃতিতে বলেছেন:
‘আমরা গভীরভাবে দুঃখিত যে, আমাদের প্রিয় বাবা আজ মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞানী এবং একজন অসাধারণ মানুষ, যার কাজ ও উত্তরাধিকার বহু বছর ধরে বেঁচে থাকবে। তাঁর “সাহস এবং দৃঢ়তা” মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন’।
বিশ্ব বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী এবং মহাজাগতিক বিশ্লেষক স্টিফেন হকিং কে নিয়ে একটি মুভি তৈরি হয় ২০১৪ সালে মুভির বিষয় ছিল, “থিওরি অব এভরিথিং”।
মাত্র ২১ বছর বয়সে হকিং ১৯৬৩ সালে মোটর নিউরোন রোগে আক্রান্ত হন। তাকে জীবিত রাখার জন্য দু’বছর চুক্তি দেওয়া হয়; কিন্তু তিনি পড়াশোনা করতে কেমব্রিজে চলে যান। শারীরিক অক্ষমতা তাঁকে রুখতে পারেনি। এ রোগে ক্রমাগতভাবে অচল হওয়া সত্ত্বেও বহু বছর ধরে তিনি সাফল্যের সঙ্গে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যান। আলবার্ট আইনস্টাইনের পর হকিংকে বিখ্যাত উজ্জ্বল তাত্ত্বিক পদার্থবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
তার প্রথম প্রধান আবিষ্কার ১৯৭০ সালে, যখন তিনি এবং বন্ধু ও সহকর্মী রজার পেনরোজের মিলে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে একটি নতুন মডেল তৈরি করেন। সেই মডেলটি (পেনরোজ-হকিং তত্ত্ব )নামে পরিচিত। এই তত্ত্বগুলো প্রথমবারের মতো কোয়ান্টাম মহাকর্ষে এককত্বের পর্যাপ্ত শর্তসমূহ পূরণ করে। আগে যেমনটি ভাবা হতো এককত্ব কেবল একটি গাণিতিক বিষয়। এই তত্ত্বের পর প্রথম বোঝা গেল, এককত্বের বীজ লুকোনো ছিল আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে।
১৯৭৪ সালে বিকিরণতত্ত্ব দেন হকিংস, যা ‘হকিংস রেডিয়েশন’ নামে পরিচিত।
তার বাবা ফ্র্যাঙ্ক হকিং ছিলেন জীববিজ্ঞানের গবেষক। মা ইসাবেল হকিং ছিলেন রাজনৈতিক কর্মী। বাবা চেয়েছিলেন, হকিং বড় হয়ে চিকিত্সক হোক। ছেলেবেলা থেকেই হকিংয়ের আগ্রহ বিজ্ঞান আর গণিতে। তারপরও মহাবিশ্বের অজানা বিষয়গুলো নিয়ে সব সময় উত্সুক ছিলেন হকিং।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য “বিগ ব্যাং থিউরি”র প্রবক্তা ছিলেন স্টিফেন হকিং। তিনি ২০০৯ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপক পদ থেকে অবসর নেন। তিনি ক্যামব্রিজের গনভিলি এবং কেয়াস কলেজের ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টসের সম্মানীয় ফেলো এবং পন্টিফিকাল একাডেমি অব সায়েন্সের আজীবন সদস্য ছিলেন তিনি।
হকিং ১৯৮৮ সালে “অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম” বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। বইটিতে তিনি মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে তত্ত্ব দেন। আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট সেলার হিসেবে বইটির এক কোটি কপি বিক্রি হয়। মহাবিশ্ব নিয়ে প্রকাশিত তাঁর সর্বশেষ বই “দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন”।
স্টিফেন হকিং প্রিন্স আলবার্ট আইনস্টাইন পদকসহ ও ‘অব অস্ট্রিয়ান্স পুরস্কার, জুলিয়াস এডগার লিলিয়েনফেল্ড পুরস্কার, উলফ পুরস্কার, কোপলি পদক, এডিংটন পদক এবং হিউ পদক; এছাড়া ও এক ডজনের বেশি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
হকিংয়ের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং বোর-হাইজেনবার্গের কোয়ান্টাম তত্ত্বকে মিলিয়ে দেওয়া।
নিজের বই বা বক্তৃতায় নানা প্রসঙ্গে হকিং “ঈশ্বর” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তার স্ত্রীসহ অনেকে তাকে একজন নাস্তিক হিসাবে বর্ণনা করলেও হকিং নিজে মনে করেন তিনি “সাধারণ অর্থে ধার্মিক নন” এবং তিনি বিশ্বাস করেন “দুনিয়া বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে। এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনো হস্তক্ষেপ করেন না”।
২০০৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বীয় কসমোলজি কেন্দ্রে হকিংয়ের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। প্রয়াত শিল্পী আয়ান ওয়াল্টার এটি তৈরি করেন। ২০০৮ সালের মে মাসে হকিংয়ের আর একটি আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে অবস্থিত আফ্রিকান ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সের সামনে। মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদর তাদের রাজধানী সান সালভাদরে বিজ্ঞান জাদুঘরটির নাম হকিংয়ের নামে রেখেছে।
বিশ্বখ্যাত এই পদার্থ বিজ্ঞানীর লেখা আ ব্রিফ হিস্টোরি অব টাইম অবলম্বনে নির্মিত দা থিওরি অব এভরিথিং ২০১৪ সালে অস্কার পুরস্কার লাভ করে।
অধ্যাপক স্টিফেন উইলিয়াম হকিং ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply