তিন সাংবাদিককে আটকে রেখে মারধর ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের বিরুদ্ধে।
গতকাল শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলে তাদের আটকে রেখে মারধরের এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীদের দাবি, হলটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়েছে-এমন খবর পেয়ে সেখানে সংবাদ সংগ্রহে গিয়েছিলেন তারা। তবে বুয়েট ছাত্রলীগের দাবি, সেখানে অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন-দৈনিক জনকণ্ঠের ঢাবির রিপোর্টার মুনতাসির জিহাদ, কালের কণ্ঠের ঢাবি প্রতিনিধি মেহেদী হাসান ও সাংবাদিক কবির কানন।
অভিযুক্তরা হলেন-ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক আসিফ রায়হান মিনার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এসএম মাহমুদ সেতু, যুগ্ম সম্পাদক নাফিউল আলম ফুজি, প্রচার সম্পাদক নিলাদ্রি নিলয় দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদ মাহমুদ অয়ন, সহসভাপতি সন্টু রহমান প্রমুখ। তারা সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা।
এদের সাথে আরও ছিলেন-মেকানিক্যাল বিভাগের অর্ণব চক্রবর্তী সৌমিক, সিভিল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের রাউফুন রাজন ঝলক, মেকানিক্যাল বিভাগের মিনহাজুল ইসলাম, নেভাল আর্কিটেকচার বিভাগের মেহেদী হাসান, তড়িত কৌশল বিভাগের ফারহান জাওয়াদ।
ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, ঢাবির ফার্মেসী বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আটকে রাখা হয়েছে-এমন খবর পেয়ে তারা ক্যাম্পাসটিতে যান। হলে প্রবেশ করতে গেলে গেটটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান।
এ সময় ভেতরে ঢুকতে চাইলে হলের দায়িত্বরত নিরাপত্তা প্রহরী জানান, ‘ভিতরে ঢুকতে ছাত্রলীগের নিষেধ আছে।’ পরে হলের নিরাপত্তা প্রহরীকে পরিচয় দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন তারা।
হলটিতে প্রবেশ করার পাঁচ মিনিটের মধ্যে শেরে বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং হলের ভিতরে প্রবেশের কারণ জানতে চান। এ সময় শিক্ষার্থী অপহরণের খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের মারধর করেন। কেড়ে নেন মোবাইল ফোন, পত্রিকার পরিচয়পত্র ও মানিব্যাগ। সেখান থেকে তাদের নেওয়া হয় হলের ক্রীড়া কক্ষে।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কক্ষটিতে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে ঢাবি সাংবাদিক সমিতি ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে এ ঘটনায় রাত ১২টার দিকে বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামী-উস সানী ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ঢাবি সাংবাদিক সমিতিতে এসে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন না বলে জানান।
বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল বলেন, ‘সেখানে কাউকে মারধর করা হয়নি। শিবিরের এক নেতাকে ধরা হয়েছিল। সাংবাদিকরা সেখানে গেলে বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা একটি দুঃখজনক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বুয়েটের শেরে বাংলা হল প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডিঃ/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply