মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নোয়াখালীর হাতিয়ায় পুনর্বাসন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি তহবিল থেকে এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আবাসন ও দ্বীপের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নৌবাহিনীকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয়ের ২ হাজার ৩১২ কোটি ১৫ লাখ টাকার মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যয় হবে ২ হাজার ৭১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যয় হবে ২৪১ কোটি ১ লাখ টাকা। পদক্ষেপটি ২০১৭ সালে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে শেষ হবে।
চলতি মাসের ১৬ তারিখে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে নানা উদ্যোগ গ্রহণে পরিকল্পনা কমিশন থেকে সিনিয়র সহকারী প্রধান সৈয়দ জাহিদুল আনাম বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠান। গতকালও পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে একটি বৈঠক হয়। কমিশন সূত্রে জানা যায়, যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তা থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসাসহ আবাসন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত করতে বনায়ন ও পশুপালনের ব্যবস্থার কথা বলা হয়। তা ছাড়া খাবার ও অন্য কাজে ব্যবহারে পানির ব্যবস্থার জন্য নলকূপ ও পুকুর খনন কার্যক্রম থাকবে। হাতিয়ার ভাসানচর সমুদ্রের মধ্যে অবস্থান করায় প্রতিরক্ষা বাঁধ, সমুদ্রের জোয়ার থেকে রক্ষায় শেল্টার স্টেশন নির্মাণসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে চরের চারপাশে বনায়ন তৈরি করা হবে।
গত মাসে ওয়াশিংটন সফররত প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, চরটি জালিয়ার চর, ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিত হলেও তিনি ‘ভাসানচর’ নামটা পছন্দ করেছেন। এ নামেই চরটির নামকরণ হবে এবং সেখানেই রোহিঙ্গারা পুনর্বাসিত হবে।
দেড় বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কথা চিন্তায় আসে। সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব ও নৌবাহিনীর একটি টিম ঠেঙ্গারচর পরিদর্শন করে। এর পর বর্ষা মৌসুম চলে আসায় উদ্যোগটি দীর্ঘদিন চাপা পড়ে যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপ সামলাতে ঠেঙ্গারচরের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এরই অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরেজমিন দেখার জন্য ২২ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি ২৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ টিম ঠেঙ্গারচর পরিদর্শন করেন।
এ প্রকল্পে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে ব্যয় করা হবে ৭২০ কোটি টাকা। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে ৪৮০ কোটি, বাঁধ নির্মাণে ২১১ কোটি, শোর প্রটেকশনে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এ ছাড়া ত্রাণ-নিরাপত্তাসহ অন্য সব বিষয়ে ব্যয় হবে যথাক্রমে ৩৫০ কোটি ও ১২২ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ভাসানচর রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগের কাজ পুরো দমে শুরু হয়নি এখনো। হাতিয়া উপজেলার মূল ভূখ- থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে নদীপথ পেরিয়ে চরটির অবস্থান। বর্তমানে এর আয়তন প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার অর্থাৎ হাতিয়ার মূল ভূখ-ের আয়তনের প্রায় সমান। এ ছাড়া দ্বীপটির চতুর্দিকে প্রতিবছর গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ বর্গকিলোমিটার ভূমি জাগছে।
Leave a Reply