বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) এস এম ইমামুল হকের ছুটি মঞ্জুর হওয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ভিসি পূর্ণ মেয়াদে ছুটি অথবা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা ক্লাসে ও কাজে ফিরবেন না।
আজ বৃহস্পতিবার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বেলা ১১টা থেকে মানববন্ধন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ব্যানারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের একাংশ। মানববন্ধন শেষে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন তারা।
এর আগে বুধবার (১৭ এপ্রিল) ভিসির ছুটির আবেদন রাষ্ট্রপতি মঞ্জুর করেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন। উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের ওই পদে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ২৭ মে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগ অথবা পূর্ণমেয়াদে ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে আন্দোলন আরও কঠোর হবে। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন না।’
লোকমান হোসেন বলেন, ‘উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১৫ দিনের ছুটির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আমরা তার এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছি আগেই। এখন ১৫ দিনের ছুটি মঞ্জুর হলেও তা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের আন্দোলন চলবে।’
এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা এবং ৮ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একাংশ আজ বৃহস্পতিবার সম্মিলিতভাবে মানববন্ধন করেছে। এর আগে পৃথক পৃথকভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারীরা নিজ নিজ দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে এলেও আজ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ব্যানারে সম্মিলিতভাবে উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন করা হয়।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে মানববন্ধন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ব্যানারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের একাংশ। মানববন্ধন শেষে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন তারা।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘এই ভিসি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবান্ধব নন, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অফিসিয়াল কার্যক্রমে আমরা ফিরব না। দরকার হলে আমরণ অনশন করবো। তাকে পদত্যাগ করিয়ে তার পরেই ঘরে ফিরব।’
আন্দোলনরত মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে আন্দোলনে নেমেছি। এই স্বাধীনতাবিরোধী, স্বৈরাচারী, দুর্নীতিবাজ ভিসি ও নির্যাতনকারী ভিসির পদত্যাগ চাই।’
এ ছাড়াও মানববন্ধনে শিক্ষক প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধি বক্তব্য দেন।
এদিকে এক নোটিশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যায়ের ক্যাম্পাসে সোনালি ব্যাংকের শাখার সব লেনদেন রহিত করে দিয়েছেন উপাচার্য। এতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের বেতন-ভাতা উঠাতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে আজ পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে ২৫ দিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সবকিছু বন্ধ রয়েছে।
গত ২৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে মন্তব্য করলে ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
২৯ মার্চ উপাচার্য তার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দেন। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৬ এপ্রিল রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক হলেও তা সফল হয়নি। এমনকি উপাচার্য ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ১৫ দিনের ছুটিতে গেলেও থামেনি আন্দোলন। উল্টো আন্দোলন জোরদার করতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীদের একাংশ বরিশাল বিশ্বদ্যিলয় পরিবারের ব্যনারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply