রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা শতাধিক। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ২০ জন। সেখানে দায়িত্বরত একাধিক ফায়ার সার্ভিস কর্মীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে আগুন লাগার ৬ ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রায় ৯ ঘন্টা পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে সাতটি লাশ আনা হয়। কারও পরিচয় জানা যাচ্ছে না। ঠিক তখনই একটি লাশের পকেটে থাকা মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। আর এই ফোন কলের মাধ্যমেই মিলেছে বনানীর অগ্নিকাণ্ডে নিহত ফজলে রাব্বি (২৭) নামের ওই ব্যক্তির পরিচয়।
মর্গে রাব্বির সঙ্গে থাকা ফোন বেজে উঠলে তা বের করে কথা বলেন লাশের সঙ্গে থাকা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের একজন কর্মী। ফোনটি করেন রাব্বির বড় বোন শাম্মী আক্তার।
শাম্মী আক্তার জানান, রাব্বি দুর্ঘটনাকবলিত টাওয়ারের ১১ তলায় ইউরো সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন-
নিরস দিবনে রাজা (শ্রীলংকান), আব্দুল্লাহ আল ফারুক, পারভেজ সাজ্জাদ, আমেনা ইয়াসমিন, জেবুন্নেসা, আমির হোসেন, মাকসুদুর রহমান, নাহিদুল ইসলাম তুষার, আহমেদ জাফর, তানজিলা মৌলি, রেজাউল করিম কাজী, আতাউর রহমান, মিজানুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল্লাহ আল মামুন, রুমকি আক্তার, সালাউদ্দিন, ফজলে রাব্বি ও আনজির আবির।
জানা গেছে, আগুন লাগার পর মুহূর্তের মধ্যে তা পাশের অপর একটি ভবনে ছড়িয়ে পড়েছে। এ সময় জীবন বাঁচতে ভবনের নিচে নামতে চেষ্টা করছেন আটকে পড়া বহু মানুষ। অনেকে জানালা দিয়ে গ্রিল ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেমেছেন। আবার অনেকে বাঁচতে গিয়ে ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন।
এছাড়া ভবনের ভেতর আটকা পড়েন অনেকে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিভিন্ন কৌশলে অনেককে উদ্ধার করেছেন। ভবনটির ভেতর থেকে পাঠানো এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় এক নারী বলছিলেন, সিঁড়ি না পাঠালে মারা যাবো, দ্রুত সিঁড়ি পাঠান। আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।
আগুনের কারণে তাৎক্ষণিক নতুন বাজার থেকে গুলশান-২ হয়ে বনানী এবং কাকলি থেকে বানানী পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ দেয়। এছাড়া আশপাশের থানা থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স এফআর টাওয়ারের চারপাশে মোতায়েন রাখা হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে যেন কোন বিঘ্ন না ঘটে সে কারণেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার এনায়েতউল্লাহ জানিয়েছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট কাজ করেছেন।
এ হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ফায়ার সার্ভিস এর সঙ্গে সমন্বয় করে অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযানে কাজ করার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষণ উদ্ধার অভিযান ও আহতদের যথাযথ চিকিৎসার বিষয়টি মনিটরিং করছেন বলে জানা গেছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply