২০১৪ সালে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়েছিল মাশরাফি মুর্তজার হাতে। তার অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বে একের পর এক জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট নতুন উচ্চতায় উঠেছে। সেই মাশরাফিকে নিয়েই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এখন বড্ড অস্বস্তিতে রয়েছে। বাজে ফর্মে থাকা মাশরাফি কবে অবসরে যাবেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও অবসরের ব্যাপারটি মাশরাফির ওপরই ছেড়ে দিতে চাইছে বিসিবি।
দলের মধ্যে অস্বস্তি থাকলেও বিসিবি তাকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে চায়। এদিকে বিশ্বকাপে খেলোয়াড় ও নির্বাচকদের পরিবার নিয়ে ভ্রমণ বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বাজে দৃষ্টান্ত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তারই প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে টিম ম্যানেজমেন্ট ও খেলোয়াড়দের বিদেশ সফরে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সম্ভাবনা রয়েছে বিসিবির। খেলোয়াড়দের আরও বেশি পেশাদার হওয়ার ব্যাপারেও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ক্রিকেট বোর্ড।
বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজেও দারুণ বোলিং করেছিলেন মাশরাফি। গত কয়েক বছর বাংলাদেশের বোলারদের তুলনামূলক পারফরম্যান্সে অনেক এগিয়ে ছিলেন মাশরাফি। তবে হতাশ করেছেন এবারের বিশ্বকাপে। আট ম্যাচে এই ডানহাতি পেসার পেয়েছেন মাত্র একটি উইকেট। বড় প্রত্যাশার বিশ্বকাপে তার হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পরই কথা উঠেছে। বিশ্বকাপের আগেই আওয়াজ উঠেছিল, এবারই অবসর যাবেন মাশরাফি। বিশ্বকাপ শেষে সেটা আরও জোরালো হয়েছে।
কিন্তু ৩৬ ছুঁই ছুঁই মাশরাফি এখনও অবসর নিয়ে কিছুই বলছেন না। তাতে অস্বস্তি বেড়েছে খোদ বিসিবিতে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক পরিচালক বলেন, ‘মাশরাফিকে তো জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিয়ে সম্মান দেখানো হয়েছিল। তখন চিন্তাভাবনা হয়েছিল, যাতে অবসর নেয়ার পর এমপি হিসেবে সম্মান পান। কিন্তু তার বিষয়ে কিছুই পরিষ্কার নয়। তিনি খেলে যেতে থাকলে এক ধরনের পরিকল্পনা করতে হবে আবার অবসরে গেলে আরেক ধরনের পরিকল্পনা থাকবে। সব মিলিয়ে বিসিবির মধ্যে অস্বস্তিকর অবস্থা চলছে।’
এদিকে টিম ম্যানেজমেন্ট ও খেলোয়াড়রা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিদেশ সফরে গেলে খেলায় মনোযোগ কমে যায় বলে ধারণা করছে বিসিবি। এমনকি স্ত্রীকে বেশি সময় দিতে গিয়ে ঐচ্ছিক অনুশীলনে বিশেষ করে টিম ম্যানেজমেন্টের কম উপস্থিতি দেখা যায়। এবারের বিশ্বকাপ থেকেই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বিসিবির। কয়েকজনের নামে অভিযোগ তুলে বিসিবির একটি অংশ তাদের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার দাবি করছে।
অনেক দিন থেকেই টিম ম্যানেজমেন্টের বড় সিদ্ধান্তগুলোও নিতে হলে বিসিবি সভাপতির অনুমোদন লাগে। কিন্তু এবার বিশ্বকাপে তেমন কিছুই নাকি হয়নি। বোর্ড সভাপতি অনেক কিছুই জানতেন না। যা জানতেন পরেরদিন তার উল্টোটা দেখতে পেয়েছেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর ক্রিকেটারদের পাঁচদিনের ছুটি দেয়া নিয়ে আকরাম খানের ওপর চটেছেন কয়েকজন পরিচালক। প্রধান কোচ ও টিম ম্যানেজার রাজি থাকলেও আকরাম খান কেন অনুমোদন দিলেন সেটা নিয়ে প্রথম থেকেই অধিকাংশ পরিচালকের ক্ষোভ।
পাঁচদিনের ছুটিতে ক্রিকেটাররা মানসিক দিক থেকে আরও ফুরফুরে হবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু এতে উল্টো তাদের মনোসংযোগ নড়ে যায়। পিকনিকের আমেজে থেকে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের গুরুত্ব তারা টের পাননি। এছাড়া এত বছর পরও ক্রিকেটারদের পেশাদারি মানসিকতা সেভাবে দেখতে পারছে না বোর্ড। বিশ্বকাপে ঐচ্ছিক অনুশীলনের সময় অধিকাংশ খেলোয়াড়ই হোটেলে থেকে সময় কাটিয়েছেন। বিসিবি চায় মুশফিকুর রহিমের মতো সবাই যেন পেশাদারি চিন্তা নিয়ে এগোতে পারে।
এদিকে অনেক ক্রিকেটারের নৈতিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বোর্ড। ইনজুরির কারণে কেউ কেউ পুরো ফিট না থাকলেও বিশ্বকাপে খেলা মিস করতে চাননি। এজন্য শতভাগ দিতে পারবে না যেনেও মাঠে নেমেছেন সিনিয়দের দু’একজন। এসব ক্ষেত্রে ফিজিওদের সিদ্ধান্তের চেয়েও খেলোয়াড়দের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিসিবি চায় গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে ইনজুরিতে থাকা ক্রিকেটাররা নিজে থেকেই যেন নিজেদের সরিয়ে রাখে। ক্রিকেটারদের আরও পেশাদারি মানসিকতায় আনার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপও নিতে যাচ্ছে ক্রিকেট বোর্ড।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply