কে ভাবতে পেরেছিলো শেষটা এমন গুবলেট পাকিয়ে ফেলবে? কিংবা খেলা শুরুর আগেই বা কে ভাবতে পেরেছিলো, বাংলাদেশ উদ্বোধনী জুটিতে তুলে ফেলতে পারে ১২০ রান?
হয়তো কট্টর সমর্থকও ভাবতে পারেননি। আর সবচেয়ে বড় সমালোচকও হয়তো ভাবতে পারেননি শেষ ৯৪ রান করতে খুইয়ে আসতে হবে ৯ টি উইকেট।
ফাইনালের চাপ সামলে এর চেয়ে সুন্দর শুরু আর কী হতে পারে! সুন্দর একটা শুরুর পর হঠাৎ ধেয়ে এল ঝড়। সেটিতে সামলে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ফাইনালের চাপে চিঁড়েচ্যাপ্টা বাংলাদেশ। যে দল বিনা উইকেটে ১২০ করে, ৪৮.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে তাদের স্কোর ২২২।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলেছেন। লিটন দাসের আউটটি নিয়ে তাঁদের প্রশ্ন। বানভাসি স্রোতের মতো ছড়িয়ে পড়ছে আউটের ভিডিও ও ছবি। লিটনের পা বিহাইন্ড দ্য লাইন ছিল কি না, বেনিফিট অব ডাউট ব্যাটসম্যানের পক্ষে কেন গেল না…এসব নিয়ে তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ করছেন সমর্থকেরা। বাংলাদেশ হতে পারে ভুল সিদ্ধান্তের শিকার। এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিং এ ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছিলেন ভারতের একজন নয়, দুই জন ব্যাটসম্যান।
তবে ভুল সেটা আম্পায়ারের, নাকি ব্যাটসম্যানদের? ক্ষোভটা শুধু তৃতীয় আম্পায়ারের ওপর বরাদ্দ করে দিলে ব্যাটসম্যানদের ভুল সিদ্ধান্তগুলো সব আড়ালে চলে যাবে। এক ইনিংসে তিন-তিনটা রান আউট আর দুটি স্টাম্পিং, এটাই বলে দিচ্ছে সিদ্ধান্ত নিতে একের পর এক ভুল করেছেন ব্যাটসম্যানরা। ভুল করেছেন মিডল অর্ডারের দুই প্রধান ভরসা মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। ওই সময়ে এমন শট খেলার সিদ্ধান্ত মস্ত বড় ভুল। আট ব্যাটসম্যানের দুই অঙ্ক ছুঁতে না-পারা, আসল প্রয়োজনের দিনে মিডল অর্ডারের পুরো ফ্লপ মেরে যাওয়া…বাংলাদেশের আশার প্রায় সমাধি হয়ে গেল।
মাঝে একটা ঝড় গেছে। তবুও সেই ঝড়কে বাংলাদেশের কাছে ‘ঝড়’ মনে হতো না, আশার প্রদীপ হয়ে যে লিটন দাস ছিলেন। এই প্রতিভাবান তরুণ ওপেনারের কাছে দলের অনেক প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশার প্রতিদান দেওয়ার মোক্ষম উপলক্ষ হিসেবে দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে আজকের ফাইনালকে বেছে নিয়েছিলেন লিটন। সেঞ্চুরি করলেন। সেই সেঞ্চুরির সৌজন্যে বাংলাদেশ করতে পারল ২২২ রান। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আত্মহত্যার মিছিলে সবচেয়ে বড় আফসোস হয়ে থাকল লিটনের আউটটাই। কুলদীপ যাদবের গুগলিটা ঠিকঠাক ফ্লিক করতে পারেননি লিটন। ত্বরিত গতিতে তাঁকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলল মহেন্দ্র সিং ধোনির অভিজ্ঞ গ্লাভস। টিভি রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগল তৃতীয় আম্পায়ারের। শেষ পর্যন্ত তিনি আউটের অ্যানিমেশন চালিয়ে দিতে বললেন গ্যালারির বোর্ডে। বাংলাদেশের সমর্থকদের হতাশার কেন্দ্রে চলে গেল এই সিদ্ধান্ত।
স্টাম্পড হয়ে ১১৭ বলে ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১২১ করে থামতে হয়েছে লিটনকে। তিনি থাকলে স্কোরটা আরও বড় হতে পারত। তবুও লিটন বাহবা পাবেন, নিজের কাজটা দুর্দান্তভাবে করেছেন। এই গরমের মধ্যে, অন্যপাশে সতীর্থদের উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেও শুরু থেকে ৪১তম ওভার পর্যন্ত উইকেটে ছিলেন। ওপেনাররা রান পাচ্ছেন না, ওপেনিং জুটি দাঁড়াচ্ছে না, টপ অর্ডার নিষ্প্রভ—কত হাহাকার গত কিছুদিনে। সেই হাহাকার দূর হলেও ডাব্বা মারল মিডল অর্ডার। যে মিডল অর্ডার বাংলাদেশকে ফাইনালে নিয়ে এল, মোক্ষম সময়ে সেটি কি না ধসে পড়ল বালুর বাঁধের মতো!
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মোঃ মোস্তফা কামাল
Leave a Reply