দিল্লির সর্বভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান (এইমস)-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬৬ বছর না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ভারতের বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
তিনি বহুদিন ধরেন কিডনি ও ডায়বেটিকজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
‘‘১৯৭৫-৭৭ সালে ভারতে যখন জরুরি অবস্থা চলমান ছিল সে সময় ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে মৌলিক অধিকার ইস্যুতে আন্দোলন পরিচালনা করায় বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক বিরোধীদের জেলে পাঠানো হয়েছিলো’’
গত ৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) মোদীর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল বিজেপি তাদের অন্যতম শক্তিশালী একজন নেতা এবং দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে হারায়। তার ১৮ দিনের মাথায় শনিবার (২৪ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৩৭ মিনিটে তারা হারালো আরেকজন বর্ষীয়ান নেতাকে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেকে একজন নন্দিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গন ও আইনবিদ্যা চর্চায়ও নিজের মুন্সিয়ানার ছাপ রেখে গেছেন অরুণ জেটলি। তবে সংগ্রাম ও সংঘাতের সঙ্গী হয়ে রাজনীতির মাঠে নামলেও নিজের পরিচিতি সেখানেই সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি।
হাজার প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে রাজপথের সংগ্রামী এই নেতা ঠিকই পৌঁছে গিয়েছিলেন ভারতের জাতীয় সংসদে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত একজন নন্দিত ও জনপ্রিয় রাজনেতা হিসেবেই নিজের অর্জিত সেই সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখেই মহাসিন্ধুর ওপারে পাড়ি জমালেন ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনের অর্নিবাণ বাতিঘর।
পেশাগত জীবনের শুরুতে বাবার অনুসারি হিসেবে আইন পেশায় আত্ম-নিয়োগ করেন অরুণ জেটলি। পরে সেখান থেকেই পা বাড়ান দেশটির রাজনৈতিক প্রাঙ্গনে। দেশজুড়ে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে পুরোদমে এক সময় পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদে পরিণত হন জেটলি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদী সরকারের প্রথম মেয়াদে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে জেটলি চূড়ান্ত ব্যাকরুম কৌশলবিদ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
ভারতের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বিজেপি দ্বিতীয়বারের মতো জয়লাভ করার পরে, জেটলি নরেন্দ্র মোদীকে চিঠির মাধ্যমে তার স্বাস্থ্যের কারণে ‘নতুন সরকারের কোনও দায়িত্ব নিতে অসম্মতির’ কথা জানান।
এ প্রসঙ্গে এক টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছিলেন, ‘কিছু গুরুতর শারীরিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছি। আমার চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যের প্রতি মনোনিবেশ করতে যেকোনও দায়বদ্ধতা থেকে দূরে থাকতে চাইছি।’
দিল্লিতে বসবাসরত পাঞ্জাবি আইনজীবী বাবা ও গৃহিনী মায়ের সংসারে ১৯৫২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন অরুণ জেটলি। দিল্লি সেইন্ট জ্যাভিয়ার স্কুল থেকে পাঠ গ্রহণ শেষে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে নয়াদিল্লীর শ্রীরাম বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ে বিকমে ভর্তি হন তিনি। ১৯৭৩ সালে সাফল্যের সঙ্গে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৭ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন জেটলি।
এরপর বাবার মতোই আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন তিনি। দীর্ঘদিন দেশটির সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিসও করেন জেটলি। এর আগে দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নকালেই অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) ছাত্র নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। মূলত সেটাই ছিলো প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার প্রথম পদার্পণ।
১৯৭৫-৭৭ সালে ভারতে যখন জরুরি অবস্থা চলমান ছিল সে সময় ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে মৌলিক অধিকার ইস্যুতে আন্দোলন পরিচালনা করায় বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক বিরোধীদের জেলে পাঠানো হয়েছিলো। যাদের মধ্যে ভারতের আরেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ জয় প্রকাশ নারায়ণের তৎকালীন সঙ্গী হিসেবে ছিলেন অরুণ জেটলি। যিনি ‘জেপি’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
১৯৯৯ সালে অটল বিহারি সরকারের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন জেটলি। এর পর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি দেশটির এই মেধাবি রাজনেতার।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply