ভারতে সিবিআই ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব শেষপর্যন্ত মুলতবির দিকে রয়েছে। কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সিবিআই জেরা করতে পারবে বলে রায় দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এই নির্দেশ দেন। তবে দিল্লি বা কলকাতায় নয়, কোনও নিরপেক্ষ জায়গায় সিপির সঙ্গে আলোচনার কথাও এ দিন বলে শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ঘটনা নিয়ে ধর্ণামঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের নৈতিক জয়। শুধু রাজীব নয় আমি যে কোনও মানুষের পাশে আছি।’ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর মুখ্যমন্ত্রী জানান, আদালতের রায়ে চারটে বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। বার বার যে অবমাননা কথা বলা হচ্ছিল সেটি ঠিক নয়। দুই, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছিল সিবিআই। তাও খারিজ করেছে শীর্ষ আদালত। দিল্লি বা কলকাতা নয়, নিরপেক্ষ জায়গায় সিপির সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট এবং কোনও ভাবেই রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে না।
মমতা বলেন, ‘আমার লড়াই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নয়। মোদী যে ভাবে সরকার চালাচ্ছেন, সেই নীতির বিরুদ্ধে। সুপ্রিম কোর্টের রায় দেশের জনতার রায়। জনতার জয়। সংবিধানের জয়। যুবকের জয়। দেশের নাগরিকের জয়। বর্তমান মোদী সরকার আমাদের পুলিশ থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের প্রতিটি কাজে হস্তক্ষেপ করছে। বাধ্য হয়ে আমি আন্দোলনে নেমেছি। চিট ফান্ড প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে বিঁধে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সুদীপ্ত সেনকে আমরাই গ্রেফতার করেছি। কেন্দ্র কিছু করেনি। গরিব মানুষের টাকা আমরা ফেরত দিয়েছি।” তাঁর আরও মন্তব্য, রাজনৈতিক অভসন্ধি নিয়ে বার বার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত করা হচ্ছে।
এ দিন ধর্নামঞ্চ থেকে মোদী সরকারকে আক্রনণ করে মমতা বলেন, “দেশের মানুষ বুঝে গিয়েছেন বিজেপি সরকার আর নেই। নতুন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তার প্রধানমন্ত্রী হবেন দেশের মানুষ। সব মানুষকে নিয়ে আমাদের সরকার তৈরি হবে।”
গত রবিবার রাজীবকে জেরা করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন সিবিআই সদস্যরা। একপর্যায়ে ভারতের কেন্দ্রীয় এই গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের থানায় আটকে রাখে কলকাতা পুলিশ। পরে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কলকাতা পুলিশের পক্ষ নিয়ে ধর্ণায় বসেন মমতা। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধর্ণা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মমতার ধর্ণা দেয়ার ঘটনায় এক অভূতপূর্ব সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়। এতে কার্যত ‘গৃহযুদ্ধের মতো’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন ভারতের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী।
জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি যে কার্যত সাংবিধানিক সংকটের দিকে যাচ্ছে, সেটা স্পষ্ট। এই ঘটনা অভূতপূর্ব। ভারতের পক্ষে বলা যায়, রাষ্ট্র বিপজ্জনক জায়গায় যাচ্ছে। ভারতে গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করবার যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, সেগুলো বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার কোনো না কোনোভাবে দায়ী।’
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply