মুসলিম নর-নারীগণ সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইবাদতের নিয়্যতে পানাহার এবং যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাই রোযা। নারীদের বেলায় এ সময় হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র থাকা পূর্বশর্ত। [আলমগীরী] * রমযানের রোযা রাখা মুসলমান বালেগ, বিবেকবান ও সুস্থ পুরুষ এবং একই ধরনের হায়েজ ও নেফাস থেকে মুক্ত নারীদের উপর ফরযে আইন। অস্বীকার বা ঠাট্টা করলে কাফির হবে আর বিনা অজুহাতে অবহেলা বশত আদায় না করলে কবীরা গুনাহগার ও ফাসিক্ব হয়ে যাবে। [রদ্দুল মুহতার ও আলমগীরী] * রমযানের একমাস রোযা পালন করা ফরয। হাদীস শরীফের বর্ণিত, হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয় বিধায় চাঁদ দেখে রোযা শুরু কর এবং চাঁদ দেখেই (রোযা) রাখা বন্ধ কর। যদি ঊনত্রিশে রমযান চাঁদ দেখা না যায় তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে। [খাযাইনুল ইরফান] রোযার নিয়্যতঃ * রোযার জন্য নিয়্যত করাও অত্যাবশ্যক। প্রত্যেক রোযার জন্য অন্তরে ইচ্ছা থাকলে নিয়্যতের শর্ত পূরণ হবে।
তবে তা মুখে উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। এ নিয়্যত পূর্বদিনের সূর্যাস্তের পর হতে রোযার দিনের দুপুরের আগে পর্যন্ত করা যাবে। এর আগে বা পরে করলে রোযা হবে না। * রোযার নিয়্যতে সাহরী খাওয়াও নিয়্যত হিসেবে গণ্য হবে। সুবহে সাদিকের পূর্বে নিয়্যত করলে বলবেন- নাওয়াইতু আন্ আসুমা গাদাম মিন্ শাহরি রামাদ্বা-নাল্ মুবারাকি ফারদ্বাল্ লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আন্তাস্ সামীউল ‘আলীম। অর্থাৎ আমি আল্লাহর জন্য আগামী কাল রমযানের ফরয রোযার নিয়্যত করলাম। আর ফজরের পর নিয়্যত করলে বলবেন- নাওয়াইতু আন্ আসুমা হাযাল ইয়াওমা লিল্লাহি তা‘আলা মিন ফারদ্বির রমাদ্বানা। অর্থাৎঃ আল্লাহর জন্য আমি আজকের রমযানের ফরয রোযা রাখার নিয়্যত করলাম। *রোযার নিয়্যত রাতে বা ফজরের আগে করাই মুস্তাহাব। রোযার নিয়্যত কার্যকর হয় সুহবে সাদিক হতে।
অতএব, কারো দিনের বেলার (মধ্যাহ্নের পূর্ব পর্যন্ত) নিয়্যত ঐ সময়ই শুদ্ধ হতে পারে যদি নিয়্যতকারী সুবহে সাদিক হতে রোযা ভঙ্গের কোন কাজ না করে। [রদ্দুল মুহতার] সাহরী খাওয়ার সময় বা সুবহে সাদিকের পূর্বে যদি মনস্থ করে যে, সকালে রোযা রাখবে না এবং এর উপর নতুন নিয়্যত না করলে রোযা হবে না। যদিও সে সারাদিন পানাহার ও যৌন সঙ্গম পরিহার করে। [দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার] * সাহরী খাওয়া রোযার নিয়্যত রূপে গণ্য হয়। কিন্তু সে সময় যদি এই ইচ্ছা থাকে যে, সকালে রোযা রাখবে না তাহলে সাহরী খাওয়া নিয়্যত বলে গণ্য হবে না। * মুসাফির ও পীড়িত লোক ব্যতীত অন্য কেউ রমযানের রোযার সময় নফল কিংবা ওয়াজিব কিংবা পূর্ববর্তী কোন কাযার নিয়্যত করে তবুও তার রমযানের রোযাই আদায় হবে। পক্ষান্তরে মুসাফির ও পীড়িত লোক যদি রমযান ব্যতীত অন্য কোন রোযার নিয়্যত করে তবে যা নিয়্যত করে তাই আদায় হবে- রমযানের নয়। [তানভীরু আবসার] * যদি কোন নারী হায়েয বা নেফাস অবস্থায় রাতে রোযার নিয়্যত করে থাকে এবং সুবহে সাদিকের পূর্বেই পবিত্র হয়ে যায়, তবে তার রোযা শুদ্ধ হবে। [জাওহারা] ★ রমযানের রোযা যাদের জন্য পরে আদায়ের অবকাশ রয়েছেঃ * সফর, গর্ভধারণ, সন্তানকে দুগ্ধ পান করানো, পীড়া, বার্ধক্য, শারীরিক ও মানসিক কোন প্রকার ক্ষয় ক্ষতির আশঙ্কা এবং জেহাদ এ সব অজুহাতে এ মাসের রোযা না রেখে তা ক্বাযা করলে গুনাহগার হবে না। [আলমগীরী] * বিনা ওযরে এ মাসে রোযা না রাখা বড় গুনাহ। পীড়িত লোক নিজ অনুমান বশত রোযা ছেড়ে দিতে পারবে না।
যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি কোন দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামত কিংবা নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা অথবা প্রমাণ দ্বারা দৃঢ় ধারণায় উপনীত না হয় যে রোযার কারণে তার রোগ বৃদ্ধি পাবে। অন্যথায় তাকে রোযার ক্বাযা ও কাফ্ফারা উভয় আদায় করতে হবে। কোন লোক সুস্থ; কিন্তু দ্বীনদার চিকিৎসক যদি রোযার কারণে পীড়িত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তবে সে ব্যক্তি ও পীড়িতদের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। [খাযাইনুল ইরফান ও দুররে মুখতার] *গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী রমণী যদি রোযার কারণে স্বীয় দুগ্ধ পোষ্য সন্তানের জীবনহানি অথবা অসুস্থতার আশংকা বোধ করে তবে তার জন্য পরবর্তীতে রোযা রাখার অবকাশ রয়েছে। এমন কি এ ক্ষেত্রে পেশাদার স্তন্যদানকারীনীর জন্যও। [দুররে মুখতার ও খাযাইনুল ইরফান] * যে মুফাসসির সুবহে সাদিকের পর সফর শুরু করে তার জন্য সেদিনের রোযা না রাখার অবকাশ নেই। কিন্তু যদি সুবহে সাদিকের পূর্বে সফর আরম্ভ করে তবে তার জন্য অবকাশ রয়েছে। আর যদি সেদিন সফরে রোযা ভঙ্গ করে তবে কাফ্ফারা দিতে হবে না; যদিও সে গুনাহগার হবে।
পক্ষান্তরে সফরে যাওয়ার আগেই রোযা ভাঙ্গলে ক্বাযা ও কাফ্ফারা উভয়ই বাধ্যতামূলক হবে। [আলমগীরী] * বার্ধক্য জনিত দুর্বলতা হেতু রোযা রাখতে অসমর্থ হলে তার জন্য ক্বাযা করার অনুমতি রয়েছে। আর যদি সে ব্যক্তির সুস্থতা ও সামর্থ ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকে তবে সে ক্ষেত্রে সে ব্যক্তি প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে আহার করাবে, অথবা অর্ধসা’ (২ কেজি ৫০ গ্রাম) গম বা গমের আটা কিংবা তার দ্বিগুণ যব কিংবা যবের সমমূল্য ফিদ্য়া হিসেবে সাদকা করবে। * যদি ফিদ্য়া প্রদানের পর পুনরায় রোযা রাখার মত সামর্থ ফিরে আসে তবে তাকে তখন রোযার ক্বাযাও আদায় করতে হবে। * মরণোম্মুখ বৃদ্ধ বা শায়খে ফানী (যার সুস্থতা ও সামর্থ ফিরে পাওয়ার আশা নেই) রোযা রাখতে অসমর্থ হলে বা ফিদ্য়া প্রদানেও যদি সক্ষম না হয় তবে সে যেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং নিজের অক্ষমতার জন্য মার্জনা চাইতে থাকে।
[খাযাইনুল ইরফান ও রদ্দুল মুহতার] * হায়য ও নেফাস অবস্থায় রমণীদের জন্য রোযা রাখা নিষেধ। তা পরে ক্বাযা করবে। * কোন নারীর হায়য ও নেফাসজনিত রক্তস্রাব শুরু হওয়া মাত্র তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়। অতএব, এ থেকে পবিত্র হওয়ার পর রোযা পালন করবে। * কোন রমণীর যদি রাতেই হায়য বন্ধ হয় তবে সুবহে সাদিক থেকে সে রোযা পালন করবে। * কোন রমণীর দশদিনের ভেতর হায়েয বন্ধ হলে তার জন্য গোসলের সময়ও হায়যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাই রাতের এমন সময় যদি সে পবিত্র হয় যে, গোসল সমাপন করতে ফজর হয়ে যায় তবে তার জন্য সেদিনের রোযা শুদ্ধ হবে না। এমনভাবে ভোর
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply