বগুড়ার হিমাগারগুলোতে এখনো হাজার হাজার টন আলু অবিক্রিত রয়েছে। কম মূল্যের কারণে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের মজুদ করা আলু হিমাগার থেকে তুলছেন না। ফলে হিমাগারের মালিকরা পড়েছেন বিপাকে। একদিকে অধিক সময় ধরে আলু রাখায় হিমাগারের খরচ বাড়ছে অন্যদিকে নতুন আলুর মৌসুমে আলু সংগ্রহের প্রস্তুতি নিতে পারছেন না তারা। আলু বিক্রি না হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার লোভ এবং আলু রপ্তানি না হওয়ার কারণকেই দুষছেন বাজার কর্মকর্তা।
নভেম্বরের মাঝামাঝি সব আলু হিমাগার থেকে সংগ্রহের কথা থাকলেও এখনো বগুড়ার অর্ধশত হিমাগারে মজুদ রয়েছে হাজার হাজার টন আলু। এ বছর ৮৫ কেজির প্রতি বস্তা আলু হিমাগারে রাখাসহ খরচ হয়েছে প্রায় ১৫০০ টাকা। সেখানে বর্তমানে প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এ অবস্থায় হিমাগার ভাড়ার খরচ বাঁচাতে অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী তাদের আলুই নিচ্ছেন না। অনেকে এ বিপুল পরিমাণ লোকসানে পথে বসেছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ‘ব্যাংকের ঋণ দিতে না পারায়, ব্যাংক লোকেরা এসে বলছে আমার জমি নিলামে তুলবে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, একটা বস্তা আলু কিনতে আমাদের খরচ হয়েছে ১৫০০-১৪০০ টাকা। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০০ টাকায়। এই লোকসানে আমরা কীভাবে চলবো,কীভাবে বাঁচবো।
অনেক হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু মজুদের জন্য ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে থাকেন। মূল্য কমের কারণে ঋণ নেওয়া ওসব ব্যবসায়ী আর যোগাযোগই করছেন না। এ অবস্থায় মজুদকৃত আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন
হিমাগারের মালিকরা। এছাড়া অধিক সময় হিমাগার চালানোয় লোকসান বাড়ছে তাদের।
বগুড়ার বাদুরতলা চৌধুরী হিমাগারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মকসুদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এখন আমাদের হিমাগার বন্ধ করার কথা, কিন্তু আমাদেরকে হিমাগারকে চালিয়ে যেতে হচ্ছে। হিমাগার চালিয়ে রাখা মান হচ্ছে বিদ্যুৎ বিল আসা ।
বগুড়ার এরুলিয়ার কাফেলা হিমাগারের সহকারী ম্যানেজার আব্দুর হান্নান বলেন, ‘এই হিমাগার থেকে আলু কখন বের হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এছাড়াও বের করা হলে বিক্রি হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তায় নেই।’
পর্যাপ্ত আলু রপ্তানি না হওয়ার পাশাপাশি অধিক মুনাফার লোভই বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারে আটকে পড়েছে। বাজার কর্মকর্তার মতে সরকারি ত্রাণ কাজে চালের পাশাপাশি আলুর ব্যবহার করতে পারলে এসব আলুর সৎ ব্যবহার সম্ভব।
বগুড়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের জেলা বাজার কর্মকর্তা মো.তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করেছি, এবং তাদেরেকে পরামর্শ দিয়েছি, আলু ধরে না রেখে বিক্রি করার জন্য। এছাড়াও তিনি বলেন, বন্যার্তদের ১৫ চাল কেজি না দিয়ে ১০ কেজি আলু দিলে এগুলো থাকতো না।’
বগুড়ায় গত মৌসুমে আলু উৎপাদিত হয়েছিল ১৩ লাখ ১০ হাজার ২ শত মেট্রিক টন। জেলার ৫৩টি হিমাগারে আলু মজুদ করা হয়েছিল ৪৪ হাজার ১শত ১৭ মেট্রিক টন। বর্তমানে হিমাগারগুলোতে আলু রয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টনের উপরে। বাজারে পাইকারি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে।
Leave a Reply