আজ পবিত্র শবে বরাত। শবে বরাতের রাতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই মসজিদে প্রার্থনা করবেন। মুসলমানদের জন্য ‘অতি পবিত্র রজনী’ হিসেবে পরিচিত শব-ই-বরাত।
শবে বরাতের সঙ্গে আরেকটি বহুল প্রচলিত এবং গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে, হালুয়া-রুটি। সেই সাথে প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ।
যেটা যুগযুগ ধরে মুসলিম পারবারের মধ্যে হালুয়া-রুটি তৈরির বিষয়টি চলে আসছে। অনেকেই মনে করেন, শবে বরাতের রাতে হালুয়া এবং রুটি তৈরি বাধ্যতামূলক। এছাড়া খাবারে মাছ কিংবা মাংস পরিবেশন করাকে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, হালুয়া-রুটি তৈরির এ সংস্কৃতি কিভাবে চালু হয়েছে? ইসলামের ইতিহাস যারা বিশ্লেষণ করেন, তাদের অনেকেই মনে করেন যে বাংলাদেশের সমাজ বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর অংশ।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, রসুলউল্লাহ সা. সাহাবাদের যুগেও এ উপমহাদেশে তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা সুদূর আরব থেকে ইসলাম যে বিভিন্ন দেশে এসেছে, এগুলোর সঙ্গে কিছু-কিছু দেশজ উপাদান যুক্ত হয়েছে। আমরা জানি, রসুলউল্লাহ সা. মিষ্টি খুব পছন্দ করতেন। তাঁর পছন্দের জিনিসকে উম্মতরা পছন্দ করবে সেটাও তাকে পছন্দ করার একটি ধরন। ফলে মিষ্টির একটা জনপ্রিয়তা মুসলিম সমাজে আছে।
তিনি মনে করেন, শবে বরাতের সময় হালুয়া-রুটি বানানো। বিতরণ করার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেবার একটি সম্পর্ক আছে।
আনন্দের ভাগটা অন্যদের দেওয়ার জন্যই বিতরণ করার রেওয়াজটা হয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতি এবং সামাজিকতা রক্ষা- দুটো বিষয় জড়িত আছে, বলেছেন অধ্যাপক ইব্রাহিম।
মূলত; মিষ্টি অর্থেই হালুয়ার প্রচলন হয়েছিল। শবে বরাত পালনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় ১৯শ’ শতকের শেষের দিকে।
ইতিহাসবিদদের মতে সে সময়ে যেহেতু মিষ্টির দোকান খুব একটা প্রচলিত ছিলনা, সেজন্য মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বানানোর উপাদান দিয়ে বাড়িতে হালুয়া তৈরির প্রচলন শুরু হয়। ধীরে-ধীরে এর বিস্তার ঘটতে থাকে।
১৯’শ শতকের শেষের দিকে ঢাকায় শবে বরাত পালন মুসলিম পরিচয় প্রকাশের বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। এমনটাই বলছেন অধ্যাপক মামুন। সেই ধারাবাহিকতায় শবে বরাত একটি বড় ধরনের উৎসবে পরিণত হয়েছে।
পাকিস্তান আমলে এর সঙ্গে সরকারি ছুটি যুক্ত হওয়ায় সেটি পালনের ব্যাপকতা আরো বেড়েছে বলে অধ্যাপক মামুন উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, একটা সময় ছিলো যখন ঢাকায় শবে বরাত পালনের বিষয়টি ছিল সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে।
ইতিহাসবিদদের মতে, বর্তমান বাংলাদেশে শবে বরাত পালন ধর্ম এবং সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই মনে করেন, শবে বরাতের রাতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। তাঁর মতে শবে বরাত নিয়ে অনেক ধারণা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাওয়া-দাওয়া।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply