প্রতিদিন খাওয়ার জন্যে যে শস্য ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ ইংরিজিতে যাকে বলা হয় ‘স্টেপল ফুড’ সেগুলির মধ্যে অনেকের মতে গম সর্বশ্রেষ্ঠ। সেইজন্যে গমকে আনাজের (শস্যের) রাজা বলা হয়। এতে জীবনধারণের পক্ষে উপযোগী সব উপাদানই আছে বলে মনে করা হয়। এটি একটি অন্যতম পূর্ণ খাদ্য।
আয়ুবের্দ মতে :
গম মধুর, বায়ু ও পিত্ত নাশ করে, গুরুপাক অর্থাৎ হজম করতে দেরি হয়, শুক্রবৃদ্ধি করে, স্নিগ্ধ, শরীরে বল আনে, ভাঙাকে জোড়া দিতে সাহায্যে করে (ভগ্নসংযোজক), সারক(মল, মূত্র বায়ু নিঃসারণ করে), শরীরের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে, গায়ের রং পরিষ্কার করে বর্ণপ্রসাদক ও রুচি বৃদ্ধি করে রুচিকর। নতুন গম কফ সৃষ্টি করে ও গুরুপাক।
গমের ওপরের লাল খোসায় পৌষ্টিক তত্ত্ব বেশি থাকে। মেশিনে বা মিলে পিষলে গমের ওপরের লাল খোসা ও অন্কুর নষ্ট হয়ে যায়। সেই সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায় অধিকাংশ রাসায়নিক তত্ত্ব যা শরীরের পক্ষে উপকারী। অন্কুরের সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায় প্রেটিন এবং খোসার সঙ্গে (ভূসির সঙ্গে) নষ্ট হয়ে যায় ভিটামিন এবং শরীরের পক্ষে উপকারী তত্ত্ব।
আজকাল তো জাঁতায় পেষা আটা গ্রামেও পাওয়া যায় না। মিশিনে পেষা আটা বেশি গরমের জন্যে সত্ত্বহীন হয়ে পড়ে। জাঁতার পেষা লাল মোট আটার রুটি ও লাপসি (আটা ও দধু দিয়ে তৈরি হালুয়ার মতো খাবার বাজারে কেক, বিষ্কুট পাউরুটির চেয়ে খাদ্য হিসেবে অনেক ভাল ও অনেক বেশি উপকারী।
লাল আটা কোষ্ঠ শুদ্ধি করে। কোনো কেনো চিকিৎসকের মতে সাদা মিহি ময়দায় এক ভাগ মাত্র পুষ্টিকর উপাদান থাকে। মোটা আটায় থাকে তিন থেকে চার ভাগ এবং বেশি মোটা আটায় থাকে পাঁচ ভাগ, গমের ভূসিতে সাত ভাগ।
গমের আটা দিয়ে তৈরি হয় রুটি, পরোটা। ময়দা দিয়ে লুচি, কচুরি। গম ভাঙিয়ে তৈরি করা হয় সুজি দালিয়া। পাউরুটি কেক, বিস্কুট সব কিছুরই প্রধান উপাদান ময়দা।
রুটি তৈরি করবার জন্যে আটা কয়েক ঘন্টা আগেই ভাল করে জল দিয়ে ঠেসে মেখে রাখা উচিত। এই ভাবে আটা আগে মেখে রাখরে আটার ভেতরের বিবিধ এনজাইমের (জীর্ণক) পরিপাকক্রিয়া আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। তারপরে রুটি বেলে আগুন সেঁকে নিলে নরম হয়, সহজে হজম হয় এবং খেতে বেশি ভাল লাগে। আটা আগে থেকে নুন দিয়ে না মাখাই ভাল। আগে থেকে নুন দিয়ে মাখলে রুটির মিষ্টতা কমে যায় অর্থাৎ খেতে আর মিষ্টি লাগে না।
স্বাস্থ্য রক্ষায় গমের ব্যবহার:
১। গমের চারা গাছের আছে অনেক গুণ। গমের বীজ বপন করে এক বিঘৎ মাপের যে চারা গাছ বেরোয় তার রস খেলে পিত্তের কারণে যে সব রোগ হয় তা সেরে য়ায়। অম্লপিত্ত, রক্তপিত্ত, দাহ, বাতরক্ত, রক্তক্ষয়, শুক্রক্ষয়, হর্ভস্রাব, মূত্রাবরোধ(প্রস্রাব আটকে যাওয়া), গরমের জন্যে যে কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্ত বমন, নাক থেকে রক্তপড়া, শরীর গরম হয়ে যাওয়ার জন্যে ওজন বৃদ্ধি না হওয়া, পিত্তজ্বর, পুরোনো জ্বর প্রভৃতি অসুখে বা অসুবিধেতে এই রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
২। দেড় টেবিল চামচ আস্ত গম এক গ্লাস জলে এক রাত্তির ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালবেলা মিহি করে পিষে কাপড় দিয়ে ছেঁকে চিনি মিশিয়ে সাত দিন ধরে এইভাবে ও এই পরিমাণে জল পান করলে প্রমেহ(যৌনব্যাধি) সেরে যায়।
৩। অল্প পরিমাণ গমের আটায় চিনি ও দুধ মিশিয়ে খেলে নাক থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
৪। গমের আটার পুলটিস বাঁধলে ফোড়া পেকে যায়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply