অনেকে বলেন লাউ-এ দুধের সবই গুণ আছে। মায়ের দুধের সঙ্গে অনেকে লাউয়ের তুলনা করেন। তরকারি হিসেবে লাউযের সুবিধে হল-লাউ বারোমাস পাওয়া যায়, দামেও সস্তা। শুধু লাউ নয়-লাউয়ের খোসা, লাউ শাক, লাউয়ের ডাঁটা সবই বাঙালি বাড়িতে উপাদেয় খাদ্য এবং সেই সঙ্গে পুষ্টিকর ও বটে।
লাউয়ের ভেতরকার শাঁস ও নরম বিচি এবং কচি শাক পাতা ডাঁটা সবই শরীরের পক্ষে খুব উপকারী। নরম ও কচি লাউ বেশি ভাল। ছোলার ডাল মিশিয়ে লাউয়ের তরকারি রান্না করলে তা খেতে যেমন ভাল লাগে, স্বাস্থ্যের পক্ষেও তেমনেই ভাল। গাজরের মতো লাউয়ের হালুয়া এবং পায়েসও তৈরি করা যায়। এগুলি খুবই মুখরোচক, শরীর ও ঠাণ্ডা রাখে।
লাউ অশেষ গুণের অধিকারী, মল নিঃসারণ করে এবং বলপ্রদ অর্থাৎ কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে। যাঁদের খাবার হজম হয় না, যাঁরা খুব দুর্বল বা অসুখে ভুগছেন তাঁদের পক্ষে লাউ হল আদর্শ আহার। যাঁদের শরীর ও মাথা গরম, একটুতেই রেগে যান, অর্থাৎ সাদা বাংলায় যাঁদের রগচটা বলা হয় তাঁরা যদি নিয়মিত লাউ খান শরীর এবং সেই সঙ্গে মাথাও ঠাণ্ডা হবে –সেই সঙ্গে পুষ্টিও ভাল হবে।
লাউয়ের বীজ দিয়ে ওষুধ তৈরি হয়। এক রকমের তেতো লাউ পাওয়া যায় যেটার কার্যকারিতা বিষের মতো। কড়া জোলাপ দেওয়ার জন্যে এই তেতো লাউ ব্যবহার করা হয়।
লাউ হার্টের পক্ষে ভাল। পিত্ত ও কফ দূর করে। বীর্যবর্ধক, মুখে রুচি উৎপন্ন করে। উপকারের দিক থেকে গরিষ্ঠ-অর্থাৎ শরীরের পক্ষে খুবই ভাল। বীর্য বৃদ্ধি করে রুচি উৎপন্ন করে ও ধাতুপুষ্টি করে। গর্ভের পোষণ করে। যে সব মেয়েরা মা হতে চলেছেন তাঁদের পক্ষে প্রতিদিন লাউ খাওয়া সেইজন্যে খুবই ভাল। বিশেষত তাঁরা যদি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন তাহলে নিয়মিত লাউ খেলে কোষ্ঠ পরিষ্কার হয়ে যাবে-এর জন্যে এই অবস্থায় কোনো শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর কড়া জোলাপ ইত্যাদি খেতে হবে না।
নানা অসুখে লাউয়ের রস :
যাঁরা শরীর জ্বালা করায়, গলা জ্বালা করায়, রক্তবিকার বা রক্তের দোষ, ফোড়ায় রক্ত গরম হওয়ায়, ব্লাড প্রেসারে, পিত্তের অসুখে ও চর্মরোগ প্রভৃতি অসুখে ভুগেছেন তাঁরা যদি ২ টেবিল চামচ লাউয়ের রসে কাঁচা কচি লাউ নিংড়ে নিয়ে রস বের করুন এক চা চামচ মধু বা চিনি মিশিয়ে খান উপকার পাবেন। শরীর গরম হয়ে নাক মুখ থেকে রক্ত পড়া রোগের উপশম হবে।
যদি জ্বরের জন্যে শরীরের তাপমাত্রা বেশি হয়ে যায় তাহলে লাউ কুরুনি দিয়ে কুরে নিয়ে কপালে লাগিয়ে একটা কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজের মতো বেঁধে দিলে অনেক সময় জ্বর কমে। এই ভাবে লাউ জ্বরের তাপ শোষণ করে নেয়।
লাউয়ের বীজ মাথা গরম হওয়া রোধ করে অর্থাৎ মস্তিষ্ক গরম হওয়া প্রশমন করে-সেইসঙ্গে মস্তিষ্কের পুষ্টিও করে। এই ব্যাধি সারাবার জন্যে হাকিমরা অনেক সময়ে রোগীকে লাউয়ের বীজের শাঁস খেতে দেন।
Leave a Reply