নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় শেখ হাসিনাকে ‘উদাহরণ সৃষ্টিকারী’ নেতা অভিহিত করেছেন হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। দুই দিনে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ঘুরে, তাদের সঙ্গে কথা বলে ঢাকায় ফিরে বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যান ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় খুবই প্রশংসা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এবং প্রধানমন্ত্রীকে উদাহরণ সৃষ্টিকারী নেতা বলেছেন তিনি।
“তিনি (জোলি) বলেছেন, বিশ্বে এরকম নেতার দরকার আছে। এই মূহুর্তে আপনার মতো লিডার কম আছে বলেও মন্তব্য করেছেন জোলি।” নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তার আগে থেকে এখানে আছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার এই শরণার্থীদের নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে ভয় পাচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, রোহিঙ্গাদের তাদের আবাসস্থল রাখাইন প্রদেশে নিরাপদে থাকার মতো পরিবেশ এখনও তৈরি করতে পারেনি মিয়ানমার সরকার।
জোলি আগের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের ক্ষেত্র তৈরির দায়িত্ব মিয়ানমারকে নিতে হবে।“ (সেখানে) অনুকুল পরিবেশ তৈরি করে তাদের ফেরৎ নিতে হবে,” শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকেও বলেন এই হলিউড অভিনেত্রী। আশ্রয় নেওয়া ‘এত’ মানুষের খাওয়ানো-পরানোকে কঠিন কাজ উল্লেখ করে জোলি বলেন, জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর, বিশ্ব ব্যাংক তারা একসঙ্গে কাজ করবে, যাতে বাংলাদেশের বোঝাটা একটু কমে।
প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পরিবারসহ তার গৃহবন্দি থাকা এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর শরণার্থী হিসেবে দিনযাপনের কথা শোনান। জোলি ওই ঘটনা শুনে খুবই দুঃখ প্রকাশ করেন বলে প্রেস সচিব জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি, চুক্তি করেছি।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দেরি করায় প্রধানমন্ত্রী নিজের হতাশার কথাও তুলে ধরেন বলে প্রেস সচিব জানান। আড়াই বছর আগে পালিয়ে এসে যে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের ঘরে প্রায় ৪০ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। এই শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন জোলি তাদের ‘যথাযথ’ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার পরিদর্শনের সময় তিনি শুনেছেন কিভাবে হত্যা, ধর্ষণ ও নিযাতন করা হয়েছে।
জোলি বলেন, নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার কথা তিনিও শুনেছেন। সৌজন্য সাক্ষাতে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply