দুটি যমজ শিশু হতে পারতো মা-বাবার জন্য বাড়তি খুশির বার্তা। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তারা জন্মালো জোড়া মাথা নিয়ে। এই জমজ শিশু রাবেয়া ও রোকেয়াকে আলাদা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, এমন জটিল অস্ত্রোপচারের উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রথম হলেও তারা আশাবাদী।
এক বছর ৭ মাস বয়সী জমজ রাবেয়া ও রোকেয়া গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি আছে । তাদের চিকিৎসায় ২১ সদস্যদের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, প্রথম ধাপে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শিশু দুটির এনজিওগ্রাম করেন চিকিৎসকরা। তিনি বলেন, “এটা খুবই প্রাথমিক পর্যায়। আমাদের অনেক অনেক দূর যেতে হবে। এ ধরনের চিকিৎসা বাংলাদেশে এটাই প্রথম।” ডা. সামন্ত লাল জানান, সব ঠিক থাকলে বুধবার একজনের মস্তিষ্কের রক্তনালী বন্ধ করে দেওয়া হবে। চিকিৎসকরা দেখবেন, নতুন রক্তনালী তৈরি হয় কি-না।
পাবনার চাটমোহর উপজেলায় মূলগ্রাম ইউনিয়নের শিক্ষক দম্পতির সন্তান রাবেয়া ও রোকেয়ার জন্ম হয় ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই। বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা তাসলিমা খাতুন ওই এলাকার অমৃতকুণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। রফিকুল বলেন, এর আগে দুই দফা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিনের কাছে চিকিকৎসা করানো হয় রাবেয়া-রোকেয়ার। তবে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল।
“চিকিৎসার ব্যয় সংস্থানের জন্য আমরা যাই স্থানীয় সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের কাছে। তিনি আমাদেরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর সাহায্যের আবেদন করতে বলেন। সেই আবেদনে ঢাকা মেডিকেল কলেজকে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।”
প্রধামন্ত্রীর নির্দেশের পর গত ২০ নভেম্বর রাবেয়া-রোকেয়াকে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালামের অধীনে চলতে থাকে চিকিৎসা। মাঝখানে বাড়ি গেলেও সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি আবার রাবেয়া-রোকেয়াকে ঢাকায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার প্রধানমন্ত্রী নিজেই বহন করছেন বলে ডা. সামন্ত লাল জানান। তিনি বলেন, রাবেয়া ও রোকেয়াকে প্রথম দফা ঢাকা মেডিকেলে আনার পরই ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন হাঙ্গেরির দুইজন নিউরো সার্জন। ডা. সামন্ত লাল সেন ও অধ্যাপক আবুল কালাম ছাড়াও প্লাস্টিক সার্জন, দুই জন নিউরো সার্জন, দুই জন শিশু বিশেষজ্ঞ রয়েছেন মেডিকেল বোর্ডে। সামন্ত লাল বলেন, “আমার জানা মতে, বিশ্বে এ পর্যন্ত জোড়া মাথার জমজ শিশুর ১৭টি সফল অপারেশন হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ জমজ এখনও জীবিত আছে।”
এ ধরনের জটিল অস্ত্রোপচারে সফলতার হার খুব কম হলেও আশাবাদী হতে চাইছেন চিকিৎসকরা।
আর রাবেয়া-রোকেয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তাদের বাবা-মা। শেষ পর্যন্ত মেয়ে দুটো যেন সুস্থ হয়, এই প্রত্যাশায় দিন গুনছেন তারা।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply