শেষ হলো দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী শনিবার মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকেই এই নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়েছে। বিধি অনুযায়ী ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা পূর্বে নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার নিষিদ্ধ হয়েছে। এখন অপেক্ষা ভোটের। সোমবার (১৮ মার্চ) এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।১৭টি জেলার ১২৯টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল হলেও এর মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার ভোট দ্বিতীয় দফার পরিবর্তে তৃতীয় দফায় নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন উপলক্ষে ১৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টুঙ্গিপাড়া সফর থাকার ফলে তার নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এ জেলার সব কয়টি উপজেলার ভোটের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে।
এদিকে দ্বিতীয়ধাপে থাকা দিনাপুর সদর উপজেলার ভোট চতুর্থ ধাপে (৩১ মার্চ) স্থানান্তর করা হয়েছে। অপরদিকে আদালতের আদেশে দ্বিতীয়ধাপের তফসিল ঘোষিত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ভোট স্থগিত হয়েছে। এছাড়াও ছয়টি উপজেলার সবগুলো পদে একক প্রার্থী থাকায় ইতোমধ্যে এসব উপজেলার ফল ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। যার কারণে এই ছয়টি উপজেলায়ও ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়ছে না। ফলে সব মিলিয়ে ১১৬টি উপজেলায় সোমবার ভোট হচ্ছে।
দ্বিতীয়ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ২৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ১৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১২ জন। যে ছয়টি উপজেলার সবগুলো পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে তা হলো- নওগাঁ সদর, ফরিদপুর সদর, নোয়াখালীর হাতিয়া এবং চট্টগ্রামের রাউজান ও মিরসরাই।
দ্বিতীয়ধাপে উপজেলা নির্বাচনে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হচ্ছেন- ১৩১০ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩৭৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫৩৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩৯৪ জন। এ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৯টি। ভোটার রয়েছেন ১ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ৬জন।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনটি পদেই দলীয় প্রতীকে ভোটগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তবে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেবল চেয়ারম্যান পদেই মনোনয়ন দিয়েছে। ফলে এ পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন। জানা গেছে, বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক দলসহ বেশ কিছু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জনে পরিবর্তিত পরিস্থিতি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে আওয়ামী লীগ ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: দ্বিতীয়ধাপের ভোটের আগে ও পরে দুইদিনসহ মোট ৫দিন মাঠে থাকছেন। এর অংশ হিসেবে শনিবার পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, আর্মড পুলিশ, ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। আচরণ বিধি প্রতিপালন ও বিশৃঙ্খলা ঘটনা রোধে মাঠে রয়েছেন নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, ভিডিপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশ থাকবে সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রভেদে। সাধারণ কেন্দ্রে ১৪ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫/১৬জন নিয়োজিত থাকবেন।
পার্বত্য তিন এলাকায় সেনাবাহিনীঃ পার্বত্য তিন জেলায় নির্বাচন উপলক্ষ্যে বাড়িত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সেনা বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোটের আগে ও পরে পুলিশ, র্যাব, বিজিবির পাশাপাশি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সেনা বাহিনী দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি।
যেসব উপজেলায় এ ধাপে ভোট: দ্বিতীয় ধাপের উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঠাকুরগাঁও জেলার ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গা, রাণীশংকৈল। রংপুর জেলার গঙ্গচড়া, তারাগঞ্জ, পীরগাছা, বদরগঞ্জ, কাউনিয়া, পীরগঞ্জ। গাইবান্ধা জেলার গাইবান্ধা সদর, সাদুল্লাপুর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও পলাশবাড়ী। দিনাজপুর জেলার কাহারোল, বোচাগঞ্জ, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, হাকিমপুর, বীরগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, বিরল, পার্বতীপুর, খানসামা ও ঘোড়াঘাট।
বগুড়া জেলার বগুড়া সদর, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকন্দি, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, ধুনট, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ, কাহালু, গাবতলী ও সোনাতলা। নওগাঁ জেলার নওগাঁ সদর, আত্রাই, নিয়ামতপুর, সাপাহার, পোরশা, ধামুইরহাট, বদলগাছী, রাণীনগর, মাহদেবপুর, পত্নীতলা ও মান্দা। পাবনা জেলার পাবনা সদর, আটঘারিয়া, বেড়া, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, ঈশ্বরদী, সাঁথিয়া ও সুজানগর।
সিলেট জেলার সিলেট সদর, বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার। মৌলভীবাজার জেলার মৌলভীবাজার সদর, বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল। ফরিদপুর জেলার ফরিদপুর সদর, বোয়ালমারী, চরভদ্রাসন, সদরপুর, সালথা, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী, নগরকান্দা ও ভাঙ্গা।
নোয়াখালী জেলার হাতিয়া, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, মীরসরাই, রাউজান ও হাটহাজারী। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা। রাঙ্গামাটি জেলার রাঙ্গামাটি সদর, লংগদু, নানিয়ারচর, কাপ্তাই, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, কাউখালী, বরকল, রাজস্থলী ও বিলাইছড়ি। বান্দরবান জেলার বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, থানচি, লামা, রুমা ও নাইক্ষ্যংছড়ি। খাগড়াছড়ি জেলার খাগড়াছড়ি সদর, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়ি, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও রামগড়।
পাঁচ দফায় পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম দফার ভোট ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থধাপের ভোট যথাক্রমে ২৪ ও ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া পঞ্চম ধাপের নির্বাচন জুন মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply