নিজের জন্য সংগৃহীত তহবিল নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সেই ‘ডিম বালক’। উইল কনোলি নামের ১৭ বছরের ওই কিশোর ঘোষণা দিয়েছে, তার জন্য সংগৃহীত তহবিলের বেশিরভাগই তিনি নিউ জিল্যান্ডের দুই মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের দান করে দেবেন।
২০১৯ সালের ১৫ মার্চ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, নিউ জিল্যান্ডের দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে ৫০ মুসল্লিকে হত্যা করে উগ্র মুসলিমবিদ্বেষী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট। পরে এ হত্যাযজ্ঞের জন্য উল্টো মুসলমানদেরই দায়ী করেন অস্ট্রেলীয় সিনেটর ফ্রেসার অ্যানিং। তার দাবি, মুসলিমরা নিউ জিল্যান্ডে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে বলেই সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। হামলার পরদিন ১৬ মার্চ এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন অ্যানিং। সেখানেই তার মাথায় ডিম ছুড়ে মারে ১৭ বছরের উইল কনোলি। এতে ক্ষুব্ধ সিনেটর ঘুরে দাঁড়িয়ে তাৎক্ষণিক কিশোরটিকে আঘাত করতে থাকেন। অন্তত একটি চড় কিশোরটির মাথায় লাগে। পরে উইল কনোলিকে গ্রেফতার করা হয়।
সিনেটরের মার খেয়ে গ্রেফতার হলেও ওই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে দুনিয়াজুড়ে হিরোর তকমা পান উইল কনোলি। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে অনলাইনে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ক্রাউডফান্ডিং সাইট ‘গো ফান্ড মি’র মাধ্যমে দুই হাজার ডলার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ইতোমধ্যেই সেখানে প্রায় ৪২ হাজার ডলার জমা পড়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫ লাখ টাকার মতো।
ইতোমধ্যে অনলাইনে এই তহবিল সংগ্রহের উদ্যোক্তাকে উইল কনোলি জানিয়ে দিয়েছেন, এই অর্থের বড় অংশটি ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের দিয়ে দিতে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ।
কোনও অভিযোগ গঠন ছাড়াই অবশ্য শেষ পর্যন্ত কারামুক্তি পান উইল কনোলি। মুক্তির পর টুইটারে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘রাজনীতিকদের ডিম মারবেন না। এতে আপনাকে ৩০ জন বোগোন্সকে (নিম্নশ্রেণির লোক) মোকাবিলা করতে হবে। আমার কঠিন শিক্ষা হয়ে গেছে।’
‘৩০ জন নিম্নশ্রেণির লোক’ বলতে প্রকৃতপক্ষে উইল কনোলি সিনেটর ফ্রেজার অ্যানিংয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যঙ্গাত্মকভাবে সম্বোধন করেছেন। টুইটারে দেওয়া পোস্টে তার প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উইল কনোলি।
উইল কনোলি বলেন, একজন মানুষ হিসেবে ওই মুহূর্তটিতে আমি গর্বিত অনুভব করেছি। আপনাদের বলতে চাই, মুসলমানরা সন্ত্রাসী নয় এবং সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম নেই। মুসলমানদের যারা সন্ত্রাসী সম্প্রদায় মনে করে, তাদের মাথা অ্যানিংয়ের মতোই শূন্য।
এদিকে বর্ণবাদী সিনেটরের মাথায় ডিম ছুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো তারকা বনে গেছেন উইল কনোলি। ওই ঘটনার পর ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে তার ফলোয়ার সংখ্যা হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। এরইমধ্যে ইনস্টাগ্রামে তার ফলোয়ার সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। সূত্র: দ্য নিউ জিল্যান্ড হেরাল্ড।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply