রুবেল সরদার, বাবুগঞ্জ প্রতিনিধিঃ একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন লুৎফুন নেসা খান। সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে রিটার্নিং অফিসার আবুল কাসেম তার মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোঃ শাহেদুন্নবী চৌধুরী, সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম, উপসচিব মোঃ ফরহাদ হোসেন, সিনিয়র
সহকারী সচিব মোঃ মিজানুর রহমান, আরিফা বেগম। দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিলকালে ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড কামরূল আহসান, নারী মুক্তি সংসদের সহসভাপতি সালেনূর মিলন, সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহানা ফেরদৌসী লাকী, মহানগর নেত্রী নাজমা আক্তার শিরিন, যুব মৈত্রী প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম এম মিলটন ও তার একমাত্র পুত্র আনীক রাশেদ খান প্রমুখ। লুৎফুন নেসা খান ছাত্র জীবনে একজন ছাত্রনেতা এবং
পরবর্তীতে নারী নেত্রী ছিলেন। সবার কাছে তিনি বিউটি আপা নামে পরিচিত। ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ বর্তমান বদরুন্নেসা গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সমাজতত্ত্ব বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স এবং এমফিল করেন। ইন্টারমিডিয়েট গর্ভমেন্ট গার্লস কলেজের ছাত্র সংসদে কালচারাল সেক্রেটারি ও পরবর্তী বছরে জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের একজন ছাত্র নেত্রী হিসেবে
বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন ও ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানে দৃঢ় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৪-তে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ছাত্র ইউনিয়নের ১৯৬৫ সম্মেলনে তিনি সর্বসম্মতভাবে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রথমে আত্মগোপনরত কমিউনিস্ট
পার্টির নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপের সাথে যুক্ত থাকলেও অচিরেই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে ছাত্রীদেরকে দৃঢ়ভাবে সংগঠিত করেন। ১৯৬৯ সনে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেনন জেল থেকে বেরিয়ে এলে মে মাসে
তিনি তাকে বিয়ে করেন এবং পরবর্তীতে তাদের এক কন্যা সন্তান সুবর্না আফরিন খান জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পরে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নারী সংগঠন হিসেবে “বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংসদ” প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সময় তিনি পার্টির কাজেও
আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু পারিবারিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রথমে নতুন প্রকাশিত দৈনিক বঙ্গবার্তা ও পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে যোগ দেন। কিন্তু তাতেও কোনো নিশ্চয়তা না পাওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন।
সরকারি এই চাকুরিকালীন সময়েও তিনি পার্টির কাজ থেকে দূরে ছিলেন না। বিভিন্ন সময় তার বাসাতেই পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যক্রম পরিচালিত হতো এবং পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কমরেড অমল সেন ঢাকায় তার তত্ত্বাবধানেই তার সরকারি বাসাতে অবস্থান করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে এ ধরনের অবস্থায় তার প্রথম ছেলে সুদীপ্ত আরিফ খান দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। অবশ্য পরবর্তীতে তার আর একটি ছেলে আনীক রাশেদ খানের জন্ম
হয়। চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি গণবিশ্ববিদ্যালয় জেন্ডার উপদেষ্টা ও পার্ট-টাইম শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীতে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ওমেন ইন ডেভলপমেন্ট বিভাগে পার্ট টাইম শিক্ষকতা করেন। এই সময় তার শরীর খারাপ হয়ে পড়লে সক্রিয় কাজ থেকে তিনি কিছুদিন দূরে সরে ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সনে তিনি “নারী ঐক্য পরিষদ” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, আজ পর্যন্ত যার তিনি সভাপতি হিসেবে নানাবিধ সমাজকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply