একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানাকে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা এবং দণ্ড স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করবে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন।
শুক্রবার এ তথ্য জানান দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে (হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে) আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে দুদক ১ ডিসেম্বর আবেদন করবে। রাষ্ট্রপক্ষও শনিবার চেম্বার আদালতে যাবে।
একই তথ্য জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ হাসান চৌধুরী পরাগ।
বৃহস্পতিবার দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে সাবিরা সুলতানার করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের হাইকোর্টের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ওইদিন আদালতে সাবিরা সুলতানার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও এস কে গোলাম রসুল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ।
আদেশের পরে বৃহস্পতিবার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবিরা সুলতানার দণ্ড ও সাজা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এই আদেশের ফলে সাবিরা সুলতানা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
তিনি বলেন, আজকের এই আদেশের মধ্য দিয়ে যারা দু’বছর পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্ত ও হাইকোর্টে যাদের আপিল বিচারাধীন, তারা যদি দণ্ড এবং সাজা স্থগিতের আবেদন করেন, যদি হাইকোর্ট দণ্ড ও সাজা স্থগিত করেন, তাহলে সাবিরা সুলতানার মতোই তারাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
এর আগে সাজা স্থগিতে বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন খারিজ করেছেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। ওই খারিজ আদেশে আদালত বলেছেন, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দু’বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন বিএনপি নেতা ডা. জাহিদ। আপিল বিভাগ সে আবেদনের ওপর নো অর্ডার দেন। অর্থাৎ, হাইকোর্টের আদেশ বহাল। তখন দুদক আইনজীবী বলেছেন, এ আদেশের ফলে দুই বছরের বেশি দণ্ডিতরা আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেবন না।
এ বিষয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, কোর্টের আদেশের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তবে একটি হাইকোর্ট বেঞ্চের আদেশ আরেকটি হাইকোর্ট বেঞ্চের জন্য বাইন্ডিং না। আজকের আদেশটি হয়েছে একটি জ্যেষ্ঠ (রেসপেকটিভ) বেঞ্চ থেকে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কয়েকটি জাজমেন্টসহ ১৯৯৫ সালের ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি জাজমেন্ট দেখিয়ে আমরা বলেছি, কোনো দণ্ড চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মোরাল টার্পিচুটে (নৈতিক স্খলনজনিত কারণে) কাউকে কনভিকটেড বা দোষী সাব্যস্ত বলা যাবে না। যেহেতু আপিলটা পেন্ডিং, কন্টিনিউয়েশন অব ট্রায়াল এবং যেহেতু এটি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি সে কারণে কাউকে দণ্ডপ্রাপ্ত বা দণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে অবিহিত করার অবকাশ নেই। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারার ১ উপধারায় আজ সাবিরা সুলতানার দণ্ড ও সাজা স্থগিত করেছেন।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, দু’দিন আগে যে আদেশটি হয়েছে, নির্বাচনের জন্য কেউ দণ্ড বা সাজা স্থগিতের জন্য কোনো দরখাস্ত করে নির্বাচন করতে পারবেন না। তার কারণ, এ ধরনের প্রার্থনা সংবিধান পরিপন্থি।
আজ যদি এরকম আদেশ দিয়ে থাকেন যে, দণ্ড বা সাজা স্থগিত হলে নির্বাচন করতে পারবেন, তাহলে তো সেটি হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের বিপরীতধর্মী আদেশ হলো। এই আদেশের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই আমরা আপিলে যাবো।’
১২ জুলাই দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ সালের ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় তিন বছর করে তাকে ছয় বছরের দণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।
পরে ১৭ জুলাই বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন।
আপিলের পর ৩০ জুলাই হাইকোর্ট শুনানির জন্য আপিল গ্রহণ করেন। গত ৬ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে জামিন পান সাবিরা সুলতানা।
এদিকে গত ১৪ অক্টোবর সাবিরা সুলতানা তার সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। তবে হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ সে আবেদন শুনানি করতে অপারগতা প্রকাশ করে বিব্রতবোধ করেন।
তখন নিয়মানুযায়ী আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হলে তিনি শুনানির জন্য বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের বেঞ্চে পাঠান।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply