বাংলাদেশ সর্বশেষ টি-টুয়েন্টি তে জয় পেয়েছিল এক বছর আগে। শ্রীলঙ্কায় জয় পাওয়া সেই ম্যাচের পর খুব বেশী ম্যাচ বাংলাদেশ দল খেলেছে সেটাও নয়,তবু কেন যেন মনে হচ্ছিল টি-টুয়েন্টি জয় বাংলাদেশের জন্য ঈদের চাঁদ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টেস্ট এবং ওয়ানডে তে ভালো কিছু করলেও টি-টুয়েন্টি হোঁচট খাচ্ছিল বার বার। শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে হারের পর মনে হচ্ছিল এই সিরিজেও বাজে ভাবে শেষ করবে বাংলাদেশ দল। গতকাল কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে যখন ইনিংসে তাসকিনের প্রথম ওভারে ১৩ রান তুলে নিলো শ্রীলঙ্কা তখন থেকে ই সেই একই জুজু কাজ করতে করতে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০ ওভারে ২১৪ রান। থিসারা পেরেরার ৪৮ বলে ৭৪ রানের উপর ভর করে শ্রীলঙ্কা দল রানের পাহাড় গড়ে তোলে। এত রান টপকে বাংলাদেশ জয় পাবে না সেটা অনেকে ই ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার বাংলাদেশ এক মহাকাব্যিক জয় দিয়ে সেই ভুল ধারণা দূর দিয়েছে।
শুরু টা করেন লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। প্রথম ওভারে ১ চারসহ রান তোলেন ১০। পরের ওভারে ১ চার ও ১ ছক্কায় আবারও ১০। লিটন দাস ও তামিম ইকবালের চার ছক্কায় রানের গতি শুধু বাড়ল না, দৌড়াল। বাংলাদেশের প্রথম ৫০ রান আসে মাত্র ২৫ বলে। তবে স্কোর টা ১০০ হতে তার থেকে কয়েক বেশী লাগলেও ৯.২ বলে বাংলাদেশের ১০০ রানের সংগ্রহ খুব কম ই দেখা গেছে এর আগে।
তবে ১০০ হওয়ার আগে ই দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়া লিটন দাস ফিরে গেছেন। ১৯ বলের ৪৩ রানের এক ঝড়ো ইনিংসে তিনি দৃষ্টিনন্দন যে পাঁচটি ছক্কা মেরেছেন সেটার উপর ভর করে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। দলীয় রান ১০০ করার পরের বলেই তামিম আউট হলেও দলের বিশ্বাস অটল ই থাকল। তামিমও এক ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়ে ২৯ বলে ৪৭ রান করেন। গতকাল কলম্বোয় যেন সবাই মনে মনে পণ করে নেমেছিল যে সিংহ শুধু ই বনে ই রাজা, মাঠে না। তামিম আউট হওয়ার সৌম্য সরকার করেন ২২ বলে ২৪ রান।বাংলাদেশ দলের ১৫০ রান করতে খেলতে হয়েছে ১৪ ওভারে। ৬ ওভারে দরকার ৬৫ রান! কঠিন ছিল কিন্তু অসম্ভব ছিল না। বাংলাদেশ দেশ কাল পাওয়ার প্লে তে ৬ ওভারে সংগ্রহ করে ৭৪ রান। তবু মনে ভয় ছিল ৬ ওভারে ৬৫ রান তুলতে পারবে কিনা। কিন্তু মুশফিক-মাহদুল্লাহ্ সেটি কে ভুল প্রমাণ করে দিতে থাকলেল। দল যখন জয়ের জন্য ২২ রান দূরে তখন ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মাহমুদুল্লাহ্। তখন মনে হচ্ছিল আজ এত ভালো খেলেও কি তীরে এসে তরি ডুববে দলের?
সাব্বির রহমান যখন হাস্যকর ভাবে আউট হলেন তখন মনে হচ্ছিল তাহলে কি হেরেই যাবে? কিন্তু না সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। ২৪ বলে ফিফটি তুলে নেওয়া মুশফিক দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছানোর দায়িত্ব নিলেন। ১৯ তম ওভারে যখন ম্যাচ হাতের নাগালের বাইরে যাচ্ছিল তখন ওভারের পঞ্চম বলে এ বিশাল ছক্কা। পুরো কলম্বো সহ শ্রীলঙ্কা যেন নীরব।
শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকে থাকলেন মুশফিক। শেষ ওভারে দরকার ৯ রান। প্রথম বলে ২ রান, দরকার ৫ বলে ৭! পরে বলে মুশফিকের চার, দরকার তখন ৪ বলে ৩। জয়ের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে তখন ই। দূর্দান্ত খেলা মুশফিক ২ বলে ৩ রান তুলে নিলেন। মুশফিকুর রহিমের ক্যারিয়ার সেরা ৩৫ বলে ৭২ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ দলের এক অবিশ্বাস্য জয়। শ্রীলঙ্কার দর্শকেরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাদের মধ্যে অনেক জন কে কাঁদতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ দলের টাইগারেরা সিংহের মুখ থেকে জয় ছিনিয়ে এনেছে মহা প্রতাপের সাথে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply