সাহারা মরুভূমিতে প্রচুর সংখ্যক সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল এবং বায়ু বিদ্যুতের জন্যে টার্বাইন স্থাপন করায় সেখানকার বৃষ্টিপাত, গাছপালা এবং তাপমাত্রার বড় প্রভাব ফেলবে- বলছেন গবেষকরা।
তারা দেখেছেন যে, বায়ু বিদ্যুতের টার্বাইন এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দ্বিগুণ করে তুলতে পারে। বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশ পাওয়া একটি গবেষণাপত্রে তারা এমনটাই বলেছেন। খবর বিবিসির
সৌর বিদ্যুৎ প্যানেলের একই ধরনের প্রভাব রয়েছে যদিও সেটি ভিন্নভাবে কাজ করবে। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য যে এই নবায়নযোগ্য শক্তির বৃহৎ পরিসরে প্রসার এই সাহারা অঞ্চলেরই পরিবর্তন আনবে।
বিজ্ঞানীরা দেখার চেষ্টা করেছিলেন যে, কী হতে পারে যদি এই ৯ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলকে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল দিয়ে ঢেকে দেয়া যায়।
তারা এই অঞ্চলটির প্রতি মনোযোগী হয়েছিলেন কেননা এই বিশাল জনবিরল অঞ্চল থেকে যে পরিমাণ সৌর শক্তি এবং বায়ু শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে পরিণত করা সম্ভব তা মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের প্রায় কাছাকাছি।
গবেষকদের ধারণা, মরুভূমিতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের জন্যে ব্যাপক পরিমাণে এসব স্থাপন করলে তা থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তা বর্তমান সময়ের চারগুণ।
এর আগেও গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে, বায়ু বিদ্যুৎ ও সৌর বিদ্যুতের জন্যে স্থাপিত প্যানেল ও টার্বাইন প্রভাব ফেলে তাপমাত্রার ওপর। কিন্তু এই গবেষণায় আরো প্রমাণ হয় যে এসব প্রভাব ফেলে উদ্ভিদের ওপরেও।
এই বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের প্রধান ড. ইয়ান লি বলেন, ‘আমাদের এই মডেল থেকে যে ফলাফল আমরা পাচ্ছি তাতে দেখা যায় যে, সাহারায় এইসব সৌর এবং বায়ু বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বৃষ্টিপাত বাড়াবে, বিশেষ করে সাহল অঞ্চলে। ২০ মিলিমিটার থেকে বেড়ে বাৎসরিক বৃষ্টিপাত হবে ৫০০মিলিমিটার।’‘ফলস্বরূপ গাছপালার উৎপন্নের হার বাড়বে ২০%।’
গবেষণাটিতে দেখা যায়, সাহারার দক্ষিণের আধা শুষ্ক অঞ্চল সাহলের যেখানে বায়ু বিদ্যুতের প্ল্যান্ট ছিল সেখানে প্রতিদিন ১.১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে।কীভাবে টার্বাইন এবং সৌর প্যানেল বৃষ্টিপাত বাড়ায়?
বায়ু বিদ্যুতে টার্বাইনের পাখার ঘূর্ণন বায়ুমণ্ডলের উপরের গরম বাতাসকে মিশ্রিত করে। যার ফলে বাষ্পীভবনের সৃষ্টি হয়, বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং গাছপালা জন্মাতে সাহায্য করে।
‘বাতাসের ঘনত্ব বাড়ায় এই টার্বাইনের ঘূর্ণন এবং বায়ুকে নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রবাহিত করে,’ বলছিলেন ড. লি। আর এর ফলে বাতাস ঠাণ্ডা হয়, আর্দ্রতা বাড়ে এবং বৃষ্টিপাত বাড়ায়, এভাবেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন তিনি।
গবেষণা রিপোর্টটি বলছে, সৌর প্যানেল মূলত ভূমণ্ডলে সূর্যের আলোর প্রতিফলন কমায়। এটি এলবেডো এফেক্ট হিসেবে পরিচিত। ইতিবাচক এলবেডো এফেক্ট ৫০ ভাগ বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি এবং গাছপালা জন্মাতে সাহায্য করে থাকে।মানুষ কিভাবে উপকৃত হবে? খুব ভালোভাবে, বলছেন গবেষকরা।
‘এই মডেল যে ইঙ্গিত দিচ্ছে তাতে করে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধিতে এই অঞ্চলের কৃষিতে একটি টেকসই পরিবর্তন আনবে। উদ্ভিদের জন্ম গবাদি পশুর খাদ্য ঘাটতি মেটাবে, তাদের সংখ্যা বাড়াবে,’ বলছিলেন ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের ড. সাফা মোতেশারেই, যিনি এই গবেষণাপত্রের লেখকদের অন্যতম।
তার মতে, সাহারা, সাহেল বা মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি অঞ্চলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস। আর সেখানে এমন পরিবর্তন স্থায়ী সমাধান দেবে একইসাথে বিদ্যুৎ, খাদ্য এবং পানির।কিন্তু তাপমাত্রার বৃদ্ধিতেও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যে খারাপ, তাই না?
গবেষণাপত্রটির লেখকরা বলছেন, ঐসব টার্বাইন এবং সৌর প্যানেলের থেকে সৃষ্ট তাপ খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।ড. লি বলছেন, ‘গ্রীনহাউজ হাউজ গ্যাসের কারণে বৃদ্ধি পাওয়া তাপমাত্রার তুলনায় এসব স্থানীয় বায়ু ও সৌর বিদ্যুৎ প্লান্টের দ্বারা সৃষ্ট উষ্ণতা একেবারেই কম।’
স্বল্প পরিসরে এই ধরনের নবায়নযোগ্য শক্তির প্ল্যান্ট কি কার্যকর?এই গবেষণা পত্রের লেখকরা পৃথিবীর অন্য-প্রান্তের মরু অঞ্চলে একই ধরনের বিষয়ের প্রভাবের দিকে লক্ষ্য রেখেছিলেন। তারা দেখেছেন যে, অল্প পরিসরে সৌর প্যানেল এবং বায়ু বিদ্যুতের টার্বাইন প্রকৃতিতে প্রভাব খুব বেশি ফেলতে পারেনা।
ড. লি এর মতে বৃহৎ পরিসরে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেশি কার্যকর হবে।আমরা কি তাহলে মরু অঞ্চলে বৃহৎ পরিসরে এমন কাজ শুরু করতে পারি? ‘হ্যাঁ, আমি তো তাই মনে করি,’ বলেন ড. লি।তার মতে, সাধারণ মানুষ, নীতি নির্ধারক এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে যেন এই গবেষণার মূল বার্তাটি পৌছায়। যাতে করে সৌর বিদ্যুৎ ও বায়ু বিদ্যুৎ-এর প্ল্যান্টগুলি থেকে সমাজ, পরিবেশ ও প্রতিবেশে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব আসে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply