সড়ক দূর্ঘটনা যেন আমাদের নিত্য নৈমেত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতি সম্প্রতি এইসব দূর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেকে, দিতে হয়েছে প্রাণও। এবার এই তালিকাটা আরো একটু দীর্ঘ হলো।
বাসের চাপায় পা হারানো রোজিনা আক্তারকেও (২১) বাঁচানো গেল না। নয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রবিবার সকাল সাতটা ২০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, আঘাত থেকেই রোজিনা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বনানীতে বাসের চাপায় আহত হয়েছিলেন। রোজিনা ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়ার রসুল মিয়ার মেয়ে। গত ১০ বছর ধরে তিনি ইশতিয়াক রেজার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। তিনি জানান, রোজিনা তার পরিবারেরই একজন হয়ে উঠেছিলেন।
গত ২০ এপ্রিল রাতে বনানীতে রাস্তা পার হওয়ার সময় বিআরটিসির একটি বাসের চাপায় তার ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। সেখানে দুই দফা অস্ত্রোপচার করে তার ডান পা উরুর গোড়া থেকে ফেলে দিতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। পরে অবস্থার অবনতি হতে থাকায় গত ২৫ এপ্রিল রোজিনাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে গেছে।
এদিকে রোজিনার দুর্ঘটনার পর থেকেই তার বাবা ও স্বজনরা হাসপাতালে এসেছিলেন। মেয়ের জীবন নিয়ে প্রতিনিয়ত শঙ্কায় থেকেছেন বাবা রসুল মিয়া। মেয়ে যেন সুস্থভাবে ফিরে আসে তাদের কাছে। তবে তাদের সেই চাওয়া পূর্ণ হলো না। রোজিনার বাবা ধোবাউড়ার রসুল মিয়া পরের জমি চাষ করেন। রসুল মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আর কারও যেন এমন না হয়।
তবে তিনি তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করেছেন। রোজিনার চাচা সুরুজ মিয়া জানান, পা হারিয়ে টানা আটদিন হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে বারবার আঁতকে উঠত রোজিনা। প্রথম কয়েক দিন জানত না যে তার পা নেই। যখন জানল তখন থেকেই রোজিনা বলত, যে আমার পা কেড়ে নিয়েছে দেখবেন ঠিকই সে সবার সামনে ঘুরে বেড়াবে। আর আমি ঘরে বন্দী হয়ে থাকব। সে সবসময় বলত যেন অপরাধীর শাস্তি হয়। তার একটাই ইচ্ছা ছিল যেন অপরাধীর শাস্তিটা নিজ চোখে দেখে যেতে পারে। সুরুজ মিয়া জানান, কই আর শাস্তি হলো। উল্টো মেয়েটার প্রাণটাই চলে গেল। তার স্বপ্নটা অপূর্ণই থেকে গেল।
তার কাছে রোজিনা ছিল অন্য আট-দশটা মেয়ের চেয়ে আলাদা। সুরুজ মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রোজিনা অভাব অনটনে বড় হলেও তার ছিল অসাধারণ গুণাবলী। সে অন্যের বাসায় কাজ করে নিজের পাশাপাশি পরিবারও চালাত। যে বাসায় সে কাজ করত সেখানে সবাই তাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখত। কখনও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি ওই পরিবার। সবাই প্রশংসা করত। কিন্তু এত ভাল মেয়ে এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে তা কেউ ভাবতে পারিনি। একথা বলতেই কণ্ঠ যেন ধরে আসছিল তার।
এই প্রাণহানি নতুন কিছু নয়। চিন্তার বিষয়, এর তালিকাটা দিন দিন বড় হচ্ছে, তবু সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না। যতদিন পর্যন্ত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা না হবে, জনসাধারণের সচেতনতা না বাড়বে এমন দূর্ঘটনা বাড়াবে শুধু কান্না, আহাজারি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply