
বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণ ভোটারের সংখ্যা ভোটারের সংখ্যা ২ কোটি ৩১ লাখের বেশী (১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সী)। এর মধ্যে এবছর ১ কোটি ২৩ লাখ প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছে। ২০০০ সালের আগে আগে যাঁরা জন্ম গ্রহন করেছে, তাঁদের বলা হয় ‘জেনারেশন জেড’,তাঁদের বড় অংশই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এই প্রজন্ম অনেকটাই প্রযুক্তিনির্ভর। বর্তমান প্রজন্মের অনেককেই বলতে শোনা যায় “আই হেট পলিটিক্স”! কষ্টের বিষয় হচ্ছে প্রজন্ম ভুলে যাচ্ছে ৫২ আর ৭১ এর প্রজন্ম যদি আমাদের মত বলতো ‘আই হেট পলিটিক্স’ তাহলে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে পেতাম না আর স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়াতে পারতাম না। আমাদের প্রজন্ম আজ শুধু যে রাজনীতি থেকে দূরে তা নয়, যে কয়জন চেষ্টা করছেন ছাত্র রাজনীতি করতে, তাদের করছেন অবহেলা, বলেছেন নানান কটু কথা। রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকা এক কথা আর রাজনীতি নিয়ে এভাবে খারাপ মন্তব্য করা আরেক কথা। যত কিছুই হোক না কেন, কথার ফুলঝুড়ি আর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেও তরুণ প্রজন্মের খুব কম সংখ্যক আছেন যারা রাজনীতিতে এসে দেশের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন।
এবার আসি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের ভূমিকা নিয়ে। তরুণ প্রজন্ম! সময় এসেছে এবার দেশের জন্য রাজনীতি না করেও কিছু করার। সময় এসেছে আমাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনার । তবে কাকে দিবেন আপনার মুল্যবান ভোট? এক-দুই হাজার ভোট না, ২ কোটি ৩১ লাখ ভোট!
আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্য হচ্ছে পারিবারিক ভাবে রাজনৈতিক দল সমর্থন করা। যেটা আমাদের দেশের অনগ্রসরতার প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি। আসুন! এই ঐতিহ্য থেকে আমরা ২ কোটি ৩১ লাখ তরুণ বের হয়ে আসি। যে যেই এলাকার ভোটার সেই এলাকার দলীয় প্রতীক, পারিবারিক সমর্থন, ধর্মীয় সমর্থন, সেলেব্রেটি, সব কিছু বাদ দিয়ে আমাদের ‘জেনেরেশন জেড’ এর বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে বাছাই করি আমাদের জনপ্রতিনিধিকে!
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মাত্র ১ দিন গুগলে সময় দিই, ইউটিউবে সময় দিই। ইতিহাস আমাদের হাতের মুঠোয়। দেখি কে কবে আমাদের দেশের জন্য কি করেছে। কি কথা দিয়েছিলো, নির্বাচনী ইশতেহার কি ছিলো, ক্ষমতায় আসার পর কে কি করেছে। দেশের উল্লেখযোগ্য সবকটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় ছিলো। ক্ষমতায় থাকাকালীন তারা কি করেছে, আবার তারাই যখন বিরোধী দলে এসেছে তখন দেশের জন্য কি করেছে। দেশের শিক্ষা, অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়নে কোন সরকার বেশী ভুমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতার পক্ষ হয়ে কারা কাজ করছে, আদৌ কি স্বাধীনতা বিরোধী বলে কিছু আছে কি-না, থাকলে তারা কারা, তাদের মধ্যে কি মুক্তিযোদ্ধা আছে, আবার দেখুন কোনো মুক্তিযোদ্ধা কি তাদের নীতি হতে সরে এসেছে কি-না, সেটা আপনার নিকট নৈতিক মনে হচ্ছে কি-না। মনে রাখবেন আপনার বাবা, দাদা কাকে ভোট দিয়েছে কেন ভোট দিয়েছে তা আপনার কাছে প্রার্থী নির্বাচনের কোনো মাধ্যম হতে পারে না। ধরুন, কোনো এলাকায় আপনার পরিবার যে দলের প্রার্থী কে ভোট দিয়ে এসেছেন বছরের পর বছর সেই দলের প্রার্থী পরিবর্তন হয়ে একজন অসৎ লোক প্রার্থী হয়েছেন। অথবা প্রার্থী যোগ্য তবে অপর দলের প্রার্থী তার থেকে অধিক যোগ্য। এমন অবস্থায় আপনার বিবেক কে প্রশ্ন করুন কাকে ভোট দিবেন, কাকে জনপ্রতিনিধি বানাবেন।
অনেকেই হয়তবা বলবেন, আমার ১ ভোটে আর কি আসে যায়! রাজার দুধের পুকুরের গল্পটা মনে পড়ে গেলো। “রাজার ইচ্ছা হলো দুধের পুকুর বানাবেন। রাজ্যে ঘোষনা দেওয়া হলো সেদিন রাতেই যেন সবাই তাদের বাড়ি থেকে এক গ্লাস করে দুধ নিয়ে এসে সেই পুকুরে ঢেলে দেয়। একলোক ভাবলো যে সবাইতো গ্লাসে করে দুধ নিয়ে যাবে,সে যদি রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে দুধের পরিবর্তে পুকুরে এক গ্লাস পানি দিয়ে আসে তবে কেউই তা বুঝবে না।
পরদিন দেখা গেলো রাজার পুকুর দুধের জায়গায় পানি দিয়েই ভর্তি হলো। কারণ সবাই তার মত ভেবেই দুধের পরিবর্তে পানি নিয়ে গিয়েছিলো।
আমাদের তরুণ প্রজন্মের সাথে যেন এমনটা না হয়! আপনি আপনারটা ঠিক ভাবে করুন, দেখবেন বাকিরাও করছেন।
অনেকে আছেন গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে গলা শুকিয়ে ফেলেছেন। ‘The Dictator’ নামে একটি ইংরেজী কমেডি মুভি দেখেছিলাম। ছবির নায়ক খুব হাস্যকর ভাবে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন। হাস্যকর হলেও কিন্তু কথা গুলো আসলে বাস্তব ছিলো। ইউটিউব এ সম্পুর্ণ মুভিটি না পেলেও এইটুকু ভিডিও পাবেন। দেখে নিতে পারেন। গণতন্ত্রের সঠিক অধিকার আসলে কোন সরকার কতটা দিতে পেরেছেন তা ইতিহাস বলে দেয়।তাই শুধু দু’একটি কথার উপর ভিত্তি করে নয় আমরা ২ কোটি ৩১ লাখ তরুণ ভোটার সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে, ইতিহাস জেনে, প্রার্থীর সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে তারপর ভোট দিবো।
সুন্দর সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশ গড়ায় আমাদেরও অবদান থাকবে এই নির্বাচনে ভোট প্রদানের মাধ্যমে!
লেখকঃ
এস. এম. আশেক উল্লাহ সোপান
শিক্ষার্থী, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, বাংলাদেশ স্টুডেন্ট কাউন্সিল।
Leave a Reply