রাজধানীর বনানীতে এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জমির মালিক এসএমএইচ আই ফারুক (৬৫) এবং ভবনের বর্ধিত অংশের মালিক বিএনপি নেতা তাসভির উল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। শনিবার (৩০ মার্চ) রাত ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে তাসভিরের বারিধারার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার হন জমির মালিক ফারুক।
গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি গোলাম সাকলাইন সিথিল জানিয়েছেন, শনিবার রাত দেড়টার দিকে ফারুককে আটক করা হয়। তাকে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাসভিরের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবি (উত্তর) পুলিশের এডিসি সাজাহান সাজু। তিনি বলেন, এফআর টাওয়ারে আগুনের হতাহতের ঘটনায় বনানী থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় তাসভির উল ইসলামকে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৬ জনের মৃত্যু এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। ওই ভবনে যথাযথ অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এটি ভবন নির্মাণ নীতিমালা অনসুরণ করে তৈরি করা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার রাতে বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে ৪৩৬/৩০৪(ক)/৪২৭/১০৯ ধারায় মামলা (নম্বর ৩৭) করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোশতাক আহমেদ জানিয়েছেন,মামলার এজাহারে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। ৩ আসামি হলেন- প্রকৌশলী ফারুক হোসেন, রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল এবং বিএনপি নেতা তাসভির উল ইসলাম।
তাসভির উল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। পাশাপাশি তিনি কাশেম ড্রাইসেলস কোম্পানি লিমিডেট নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি কুড়িগ্রাম-৩ আসনে (উলিপুর) বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।
ব্যবসায়ী তাসভীর রাজনীতিতে আসেন ২০০৬ সালে। তবে তার বড় ভাই এ কে এম মাঈদুল ইসলাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। পরে এইচ এম এরশাদের আমলেও মন্ত্রী হয়েছিলেন মাইদুল। দশম সংসদেও জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি।
বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ৩২ নম্বর হোল্ডিংয়ে এফআর টাওয়ারের জমির মূল মালিক ছিলেন এস এম এইচ আই ফারুক। ওই জমিতে ২০০৫ সালে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে রূপায়ন গ্রুপ। দুই বছর পর ভবনটি চালু হয়। আধাআধি মালিকানা হওয়ায় ভবনটির নাম তখন দেয়া হয় ফারুক-রূপায়ন টাওয়ার; সংক্ষেপে এফআর টাওয়ার।
রাজউক সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভবনটির ভূমি মালিক ইঞ্জিনিয়ার ফারুক ও রূপায়ন গ্রুপ যৌথভাবে নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। তখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন দেয়। পরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর ভবনটিকে ২৩ তলা পর্যন্ত বর্ধিত করে নির্মাণ করা হয়।
ডেভেলপার কোম্পানি ভবনটির ২০ ও ২১তম তলাটি জাতীয় পার্টির প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য মাইদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে। মাইদুল ইসলামের কাছ থেকে ফ্লোর দুটি কিনে নেন বিএনপি নেতা তাসভির উল ইসলাম। এরপর তিনি নকশা পরিবর্তন করে ছাদের ওপর আরও দুটি ফ্লোর নির্মাণ করেন।
রূপায়ন পরে তাদের মালিকানায় থাকা বিভিন্ন ইউনিট বিক্রি করে দেয়। সব মিলিয়ে ২৩ তলা ওই ভবনের সবগুলো ইউনিটের মালিক এখন ফারুক ও তাসভীরসহ মোট ২৪ জন। বিভিন্ন ফ্লোর তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। ২১ থেকে ২৩ তলা পর্যন্ত অফিস রয়েছে তাসভীরের প্রতিষ্ঠানের, তিনিই ভবনটি পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এদিকে তাসভির দাবি করেছেন, ‘তার ফ্লোরগুলোর রাজউক অনুমোদিত বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তিনি ফ্লোরগুলো রূপায়ন থেকে কিনেছেন। ভূমি মালিক আর ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্বের কারণে এই ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য তিনি দায়ী নন, দায়ী রাজউক।’
এফআর টাওয়ারে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা না থাকা এবং ভবন নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ না করার দিকে ইঙ্গিত করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, সেখানে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি দুর্ঘটনা নয়, এটি ‘হত্যাকাণ্ড’।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply