গাজীপুরের শ্রীপুরে মুক্তিপণের দাবিতে স্কুলছাত্র সাদমান ইকবাল রাকিন (১০) অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারেরা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি পারভেজ শিকদার (১৮) ও তার সহযোগী মো. ফয়সাল আহমেদ (১৬)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে।
তারা ক্রাইম পেট্রোলের মতো অপরাধ বিষয়ক নাটক ও বিভিন্ন সিনেমা দেখে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে উৎসাহিত হয়েছে বলে র্যাবকে জানিয়েছে।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) মো. সারওয়ার বিন কাশেম এসব তথ্য জানান।
এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও জয়দেবপুর এলাকা অভিযান চালিয়ে রোববার রাতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।
সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, গ্রেফতার পারভেজ শিকদার ২০১৭ সালে ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে এবং শিমুলতলী কৃষি প্রশিক্ষণ
ইনস্টিটিউটে এগ্রিকালচার ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়। তার বাবা আলীম শিকদার মানসিক ভারসাম্যহীন এবং মা গৃহিনী। সে দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়।
অতীতেও পারভেজ বিভিন্ন সময় ছোট-খাট অপরাধমূলক কাজ করেছে। সে দুই বছর ধরে রাকিনকে প্রাইভেট পড়াত। বড় অংকের টাকার লোভে ৬ মাস আগে সে রাকিনকে অপহরণ করে ও মুক্তিপণ চাইতে রাকিনের বাবার মোবাইলটি চুরি করে।
তার পরিকল্পনা ছিল রাকিনের বাবার ব্যবহৃত মোবাইল থেকেই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করবে, এতে খুব সহজেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দেয়া যাবে।
মোবাইলের কল ডিটেলস থেকে ধরা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে হত্যাকাণ্ডের পর সে মোবাইল ফোনটি বন্ধ রেখেছিল।
অপহরণের পরিকল্পনা সফল করতে পারভেজ শিকদার তার সহযোগী ফয়সাল আহমেদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। ফয়সাল ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র। সে পরিবারের ৪ ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়।
একই এলাকায় বাস করার কারণে পারভেজের সাথে গত ৩/৪ বছর ধরে তার পরিচয়। বয়স কম হলেও তারা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করত এবং ছোট-খাট বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত ছিল।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক আরো বলেন, অপহরণের দিন ফয়সাল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমকে খেলার ফাঁকে পাখির বাসা দেখানোর কথা বলে বাঁশঝাড়ের আড়ালে নিয়ে যায়।
পরে জঙ্গলের ভেতরে ভিকটিমকে আটকে রাখার চেষ্টা করে।
কিন্তু আটকাতে ব্যর্থ হলে এবং ভিকটিম ছাড়া পেলে তাদের কথা সবাইকে জানিয়ে দিবে এই ভয়ে তারা রাকিনকে মাটিতে ফেলে গলাটিপে হত্যা করে।
পরে মুক্তিপণ চাওয়ার জন্য মোবাইলে কল করতে গিয়ে ফয়সাল দেখতে পায় মোবাইলে কোনো টাকা নেই। তখন তারা ফাউগান বাজারে রনির দোকান থেকে ২০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করে।
ফ্লেক্সিলোডের রেজিষ্টারে নম্বর লিখলে ধরা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তারা ছোট একটি কাগজে মোবাইল নাম্বার ও টাকা লিখে ফ্লেক্সিলোড করার জন্য দোকানে দিয়ে দ্রুত চলে আসে।
টাকা রিচার্জের পর তারা চুরি করা ওই মোবাইল থেকে রাকিনের বাবাকে ফোন করে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
র্যাব-১ এর তদন্ত দল প্রাথমিকভাবে কোনো সূত্র না পেলেও দোকানের ডাষ্টবিন/ওয়েষ্ট পেপার বক্সে নাম্বার লেখা ওই ছোট কাগজের টুকরো পাওয়ার পর তদন্ত কার্যক্রম নাটকীয় মোড় নেয়।
পরবর্তীতে লাশের পাশে পাওয়া স্টার সিগারেটের প্যাকেট সহায়ক হিসেবে কাজ করে। কাগজের টুকরোর হাতের লেখা ও স্টার সিগারেটের প্যাকেটের সূত্র ধরে দুই খুনিকে শনাক্ত করে তদন্ত দল।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ডিসেম্বর ফাউগান গ্রামের বাড়িসংলগ্ন বাঁশঝাড় থেকে শিশু রাকিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। রাকিন ওই গ্রামের বাসিন্দা ও গাজীপুর জেলা পরিষদের কার্যসহকারি শামীম ইকবালের ছেলে। সে স্থানীয় সরকারি বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
বাবা শামীম ইকবাল জানান, প্রায় ৬ মাস আগে তার স্ত্রীর ব্যবহার করা একটি মোবাইল সেট সিমসহ হারিয়ে যায়। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি থানায় জিডি করেননি। ওই নাম্বার থেকেই তার কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে তিনি এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা করেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply