প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ‘ভারতের দালাল’ আখ্যায়িত করে মিছিল, গুলিবর্ষণ, লিফলেট বিতরণ ও সংগঠনের লাল পতাকা উড্ডয়নের মাধ্যমে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে ‘পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি’ নামের একটি সংগঠন। সেই সাথে ‘গণযুদ্ধের’ মাধ্যমে ‘গণক্ষমতা’ প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানিয়েছে।
এক যুগেরও বেশি সময় পর হঠাৎ করে সিংড়ায় সর্বহারা পার্টির এমন তৎপরতায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে জনমনে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে মুখোশধারী ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল ডাহিয়া ইউনিয়নের বিয়াস বাজারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিরোধী শ্লোগান দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করে লিফলেট বিতরণ করে। খবর পেয়ে বুধবার র্যাব,পুলিশ সহ নির্বাচনের দায়িত্ব পালনরত আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
হঠাৎ করে কোথা থেকে লোকজন এসে এমন কান্ড ঘটিয়ে গেল, তার কোন কূল কিনারা করতে পারছে না এলাকাবাসী। এ ঘটনায় এখনও বিয়াশ বাজার এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে মুখোশ পরিহিত সর্বহারা দলের ২৫/৩০ জনের একদল সদস্য ডাহিয়া ইউনিয়নের বিয়াশ বাজারে আসে। তারা বাজারের নাইট গার্ডদের জিম্মি করে নির্বাচন বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। এ সময় তারা অন্তত ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতংকের সৃষ্টি করে দোকানে দোকানে লিফলেট বিতরণ করে চলে যায়। চলে যাওয়ার সময় তারা বিয়াশ সরকারী প্রাথমিক স্কুলের পাশে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়ে যায়।
বিতরণকৃত লিফলেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগকে উদ্যেশ্য করে লেখা হয়েছে, ভারতের দালাল শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের ফ্যাসিবাদী শাসন উচ্ছেদ করুন! সাম্রাজ্যবাদের দালাল গণবিরোধী বড় ধনী শাসকশ্রেণি ও রাষ্ট্রের অধীনে ভোট নয়। গণযুদ্ধের মাধ্যমে কৃষক-শ্রমিক-দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগনের ‘গণক্ষমতা’ প্রতিষ্ঠা করুন’- পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি। ডিসেম্বর ২০১৮।’
পুরো ঘটনার ব্যাপারে জানতে ডাহিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম এম আবুল কালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একসময়ের সর্বহারা অধ্যুষিত ডাহিয়া ইউনিয়নে গত ১০ বছরে এমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। হঠাৎ করে তাদের এমন তৎপরতায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
কারা এ ঘটনার নেতৃত্ব দিতে পারে জানতে চাইলে কালাম বলেন, ‘একসময় সর্বহারাদের দুই নেতা ডাহিয়া থেকে নেতৃত্ব দিতেন। তবে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় তাদের এলাকায় দেখা যায়নি। তবে তাদের আত্নীয়-স্বজনরা এখনো গ্রামে আছেন। তাদের মাধ্যমে কোন যোগসূত্র স্থাপিত হতে পারে বলে অনুমান করছি। এলাকায় আতংক ছড়ানোর জন্যই হঠাৎ করে সর্বহারা নামে নির্বাচনের আগে তারা সুসংগঠিত হয়ে এ কাজ করেছে।’
সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, ‘মিছিল ও লিফলেট পোস্টারিংয়ের ঘটনাটি শুনেছি। অধিকতর খোঁজখবর করা হচ্ছে। এখনই কিছু বলা যাবে না। তবে আইন শৃংখলা বাহিনী সতর্ক অবস্থান রয়েছে।’
Leave a Reply