ভারত থেকে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে দল বেঁধে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। ভারতীয় দালালদের মাথাপিছু ৩ হাজার টাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে দেশে অনুপ্রবেশ করছে। কুমিল্লার আদর্শ সদর ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সীমান্তপথের বিভিন্ন স্থান দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর গত দশ দিনে ৫০ জন শিশু ও ৪১ জন নারী-পুরুষসহ ৯১ জন রোহিঙ্গা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।
এসব রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে প্রথমে ভারতের জম্মু-কাশ্মিরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। পরে আগরতলা হয়ে তারা কুমিল্লা সীমান্তে পৌঁছায় বলে জানা গেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সীমান্তপথে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের পর আটককৃত রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট থানা সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী শশীদল ইউনিয়নের বাগড়া এলাকা থেকে ৮ জন শিশুসহ ১৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। তারা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের পর অন্যত্র যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু থানার নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বলে পুলিশকে জানিয়েছে। একই দিন রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার কাকলী রেস্তোরাঁর সামনে থেকে পুলিশ ৫ জন পুরুষ, ৬ জন নারী ও ১৬ জন শিশুসহ ২৭ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে। তারা ওই রাতে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্য গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে। এর আগে গত ৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মোড় এলাকা থেকে পুলিশ ৭ জন পুরুষ, ৭ জন নারী ও ১৭ জন শিশুসহ ৩১ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে। একই দিন জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের বাগড়া এলাকা থেকে ৪ জন পুরুষ, ৪ জন নারী ও ৯ জন শিশুসহ ১৭ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ।
আটক রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তারা সকলে মিয়ানমারের নাগরিক। ৩ বছর আগে তারা নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ভারতের জম্মু-কাশ্মির এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের অধিকাংশের নিকট মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে পরিচয়পত্র রয়েছে। বাংলাদেশের কক্সবাজারে তাদের বেশ কয়েকজন আত্মীয় বসবাস করছেন। কক্সবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা ভারত থেকে দালালের মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রম করে কুমিল্লায় আসেন।
এদিকে আটক রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিয়ানমারের মংডু জেলার বলিবাজার থানার সাব বাজার গ্রামের শাহ আলম, নব্বই গ্রামের শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, ‘তাদের একটি দল ৩ বছর আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে জম্মু-কাশ্মিরে যায়। সেখানকার পুলিশ তাদের ৭ জনকে ধরে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেয়। অন্যরা খাদ্যাভাব ও নির্যাতনের শিকার হয়ে জম্মু-কাশ্মির থেকে রওয়ানা হয়ে ভারতের আগরতলা সীমান্তে পৌঁছে। সেখানে ভারতীয় দালালদের জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে দিয়ে তারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পৌঁছার পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।’
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতীয় দালালরা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের সীমান্তপথে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পাচার করছে। যা উদ্বেগজনক। পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে হয়তো অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের পর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে এবং তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যাচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের অনেকে ইয়াবা পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। এসব কারণে আইন-শৃঙ্খলাসহ স্বাভাবিক পরিবেশের অবনতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply