জমি আছে, ঘর নেই—এমন মানুষদের টিনের ঘর করে দেওয়ার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ঝিনাইদহে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো কিছু অর্থ। কিন্তু টিনের ঘরের বরাদ্দ দিয়েই আধা পাকা ঘর করে দিয়েছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তাঁর এই উদ্যোগের ফলে মানুষ যেমন ভালো ঘর পাচ্ছে, তেমনি সরকারি টাকার সদ্ব্যবহার প্রশংসিত হচ্ছে এলাকায়। এই প্রক্রিয়ায় শরিফার মতো তালিকাভুক্ত ৩০৯টি দরিদ্র পরিবারই আধা পাকা ঘর পাচ্ছে এই উপজেলায়। ইতিমধ্যে অধিকাংশ ঘর তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেছে।
ইউএনও মো. ওসমান গণি জানান, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে এক লাখ ৭০ হাজার গরিবকে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এক লাখ ১৫ হাজার ঘর তৈরি হয়ে গেছে। প্রকল্পের আওতায় শৈলকুপা উপজেলায় ৩০৯টি ঘরের জন্য ৩ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। অর্থাৎ প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ এক লাখ টাকা। এই টাকা দিয়েই স্থানীয় প্রশাসন নির্দেশিত টিনের ঘরের বদলে আধা পাকা ঘর করে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারিভাবে প্রতিটি ঘরের মাপ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১৬ ফুট লম্বা আর সাড়ে ১০ ফুট চওড়া। সঙ্গে ৫ ফুটের একটি বারান্দা ও একটি বাথরুম। পাকা ভিটির ওপর টিনের বেড়া ও টিনের ছাউনি থাকবে।
শৈলকুপা উপজেলা পিআইও মো. আবদুর রহমান জানান, বরাদ্দের টাকা আসার পর ইউএনও তাঁকে নিয়ে আলোচনা করেন। কীভাবে ঘরগুলো ভালোভাবে করা যায়, তার পরিকল্পনা করেন। ঠিকাদার বা অন্য কারও মাধ্যমে ঘরগুলো তৈরি করলে সব অর্থ ব্যয় করেও ভালো ঘর পাওয়া নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেয়। এ অবস্থায় নকশা অনুযায়ী টিনের ঘর তৈরি করতে তাঁরা স্থানীয়ভাবে একটি বাজেট তৈরি করেন। তাতে দেখা যায়, স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলেও টিনের ঘর তৈরিতে তাঁদের ব্যয় দাঁড়াচ্ছিল এলাকাভেদে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা থেকে যায় প্রতি ঘরে। তখন ইউএনও তাঁকে আধা পাকা ঘর তৈরি করতে কত খরচ হবে, তার একটা পৃথক বাজেট করতে বলেন। দেখা যায়, স্থানভেদে কোনোটিতে ১ লাখ ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বেশি লাগছে। আবার কোনোটিতে ১ লাখ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা কম লাগছে। উপজেলা শহর থেকে গ্রামের দূরত্বের ওপর নির্ভর করে এই কমবেশি খরচ আসছে।
আবদুর রহমান জানান, এই বাজেট দেখে ইউএনও তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত দেন, তাঁরা সব ঘর পাকা করবেন। দরিদ্র মানুষ আধা পাকা ঘর পাবে। এটা তাদের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি করবে। তিনি আরও বলেন, ইউএনওর এই প্রস্তাবে তিনি রাজি হতে চাননি। কারণ, এতে মূল নকশা পরিবর্তন করতে হবে। তারপরও ইউএনও পাকা ঘর নির্মাণে জোর দেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেন। তারপর শুরু হয়ে যায় তাঁদের কর্মযজ্ঞ।
গত অক্টোবর মাসে শুরু হয়েছে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ১৮টি করে ২৩৪টি আর সারুটিয়া ইউনিয়নে ৭৫টি মিলে ৩০৯টি ঘর তৈরির কাজ। দু-একটি ছাড়া বাকি সব ঘর এখন তৈরি। উপজেলা পিআইও জানান, ইউএনও নিজে তদারক করে একসঙ্গে সব কটি ঘরের মালামাল কেনায় উপকরণ ব্যয় অনেকটা কমে গেছে। যে কারণে এক লাখ টাকাতেই তাঁরা সব ঘর নির্মাণ করতে পেরেছেন।
ইউএনও এই এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এমন করে সকল কর্মকর্তারা এগিয়ে এলে নিশ্চয়ই দ্রুত দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মোঃ মোস্তফা কামাল
Leave a Reply