হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানেন, এবং তিনিই উম্মতের শাফায়াতকারী!!!
অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আলেমুল গায়েব। তিনি একমাত্র অতুলনীয় ও অবর্ণনীয় সমুদয় এলেম বা জ্ঞানের অধিকারী। এলমে গায়েব দুই প্রকার – “এলমে গায়েব জাতি”(কারো দান ক্রমে নয়) ও “এলমে গায়েব আতায়ী”(আল্লাহর পক্ষ থেকে দান করা)।
কোরআন শরীফে যে সকল আয়াতে এলমে গায়েবকে আল্লাহ তা’য়ালার জাতেপাক ভিন্ন অন্য কারো জন্য অস্বীকার করা হয়েছে, উহা “এলমে গায়েব জাতি” এবং যে সকল আয়াতে পয়গাম্বরগণের এলমে গায়েব লাভের কথা বর্ণিত হয়েছে, উহা “এলমে গায়েব আতায়ী” যা আল্লাহ্ তা’য়ালা স্বীয় অনুগ্রহে তাঁর খাছ বান্দা পয়গম্বর, আউলীয়ায়েকেরাম ও সালেহীনগণকে প্রদান করে থাকেন। এরশাদ হচ্ছে,,,
“আল্লাহ্ তা’য়ালা আলেমুল গায়েব, তিনি তাঁর মনোনীত রাসূলগণ ব্যতীত অন্য কারো নিকট তাঁর গায়েব প্রকাশ করেন না।” (সূরা – আল্-জ্বিন : আয়াত – ২৬, ২৭)
হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান,,,
“আল্লাহ্ তা’য়ালা সমস্ত পৃথিবীকে আমার জন্য সংকুচিত করে দিয়েছেন। সুতরাং আমি উহার সমস্ত পূর্ব-পশ্চিম এক নজরে দেখতে পাই।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ফিতন / তিরমিজি শরীফ : ২য় খন্ড, ৪৫ পৃষ্ঠা)।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ফরমান,,,
“আল্লাহ্ তা’য়ালা এই পৃথিবীকে আমার চোখের সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি সমস্ত পৃথিবীকে এবং কেয়ামত পর্যন্ত উহার মধ্যে যা কিছু সৃষ্টি হবে তদসমুদয়কে এমনিভাবে দেখি যেন উহা আমার এই হাতের তালুর মধ্যে।” (মাওয়াহেবুল্ লাদুনিয়াহ, ৩য় খন্ড : পৃষ্ঠা – ৫৫৯)।
শরহে বুখারীতে বর্ণিত আছে,,
“কেয়ামত কখন হবে তা আল্লাহ্ তা’য়ালা ব্যতিত কেহই জানে না। কিন্তু তিনি রাসূলগণের মধ্যে যাকে চান তাঁকে এলমে গায়েব জানান। কেননা আল্লাহ্ তা’য়ালা স্বীয় গায়েব (রাসূলগণ হতে) যাকে ইচ্ছা তাঁকে জানান এবং আউলিয়াগণ তাঁর (রাসূলের) অধীন এবং যা (এলমে গায়েব) তাঁর নিকট হতে পেয়ে থাকেন।” (ইরশাদুস্ সারী : শরহে বুখারী)
উল্লেখিত আয়াতে কারিমা এবং হাদীসের আলোকে ইহাই প্রমাণিত হয় যে, হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েবের অধিকারী এবং তাঁর উম্মতগণের মধ্যে আউলিয়াকেরামগণও তাঁর মাধ্যমে ‘এলমে গায়েব’ লাভ করে থাকেন।
হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিঃসন্দেহে শাফায়াতকারী। এরশাদ হচ্ছে,,,
“ঐ ব্যক্তি কে যে তাঁর (আল্লাহর) নিকট তাঁর নির্দেশ ভিন্ন (কারো জন্য) সুপারিশ করবে? তার অগ্রে যা কিছু এবং পশ্চাতে যা কিছু (ঐ ব্যক্তি সেইসব বিষয়ে) অবগত আছেন এবং তিনি (আল্লাহ্) যা চান কেবলমাত্র তাই তিনি (সুপারিশকারী) তার জন্য জ্ঞানের মধ্যে পেয়ে থাকেন।” (সূরা – আল্-বাক্বারাহ : আয়াত – ২৫৫)
এইতো হল শব্দগত অর্থ। এর অন্তনির্হিত অর্থের দিকে যদি তাকাই তাহলে এটাইতো সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয় যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’য়ালার অনুমতি সাপেক্ষে অবশ্যই আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ হতে কেউ উম্মতের শাফায়াতকারী নিযুক্ত হবেন। আর যিনি শাফায়াতকারী হবেন, তিনি যাদের শাফায়াত করবেন তাদের অতীতের কার্যকলাপ এবং ভবিষ্যত পরিণাম সম্পর্কে অবগত থাকবেন। এরই জন্য তাঁকে আল্লাহ তা’য়ালার ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর প্রদত্ত এলমে গায়েবের অধিকারী হতে হবে। এই হল শাফায়াতকারী হওয়ার জন্য আরোপিত বিশেষ শর্ত।
যেহেতু আল্লাহ্ তা’য়ালা হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে উক্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন, তাই তিনি হবেন সর্বপ্রথম উম্মতের শাফায়াতকারী এবং তাঁর উসিলায় তাঁর উম্মতগণের মধ্যে হতে পর্যায়ক্রমে অনেক আউলিয়াকেরাম এবং সালেহীনগণও শাফায়াত করার অধিকার লাভ করবেন।
হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সর্বপ্রথম উম্মতের শাফায়াতকারী হবেন সেই প্রসঙ্গে তিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন।
হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান – “কেয়ামতের দিন যখন মানুষ প্রচন্ড ভীড়ে পরস্পর পরস্পরের উপর পতিত হবে তখন তারা হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর নিকট উপস্থিত হবে এবং বলবে, আপনি আমাদের জন্য আপনার রব-এর নিকট সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, আমি ইহার উপযুক্ত নই, তোমরা আল্লাহ তা’য়ালার খলীল হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এর নিকট যাও। অতঃপর তারা ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এর নিকট যাবে। তিনি বলবেন আমি এর উপযুক্ত নই, তোমরা বরং হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট যাও, তিনি আল্লাহ তা’য়ালার কলিম। অতঃপর তারা হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট যাবে। তিনি বলবেন আমি এর যোগ্য নই, তোমরা বরং হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট যাও। অতঃপর তারা হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট যাবে। তিনি বলবেন আমি এর যোগ্য নই, বরং তোমাদের উপর এ বিষয়ে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ই যথার্থ যোগ্যতা রাখেন।
অতঃপর তারা আমার নিকট আসবে। আমি বলব, হ্যাঁ আমি এজন্যই রয়েছি। অতঃপর আমি আমার প্রতিপালকের নিকট অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দান করবেন এবং তিনি আমাকে কতিপয় প্রশংসা বাণী শিক্ষা দিবেন। আমি ঐ সকল বাণীদ্বারা তাঁর গুণকীর্তন করব এবং পরিশেষে তাঁর উদ্দেশ্যে সেজদায় অবনত হব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি মস্তক উত্তোলন করুন এবং আপনার যা খুশী বলুন, আপনি যা ইচ্ছা চান আপনাকে দেয়া হবে, আপনি যে সুপারিশ করবেন তা কবুল হবে। আমি তখন বলব – হে আমার প্রতিপালক, আমার উম্মতকে রক্ষা করুন, আমার উম্মতকে রক্ষা করুন। তখন এরশাদ হবে (হে আমার মাহবুব) যান, যার অন্তরে এক ধুলিকণা পরিমাণও ঈমান আছে তাকে আপনি (দোজখ হতে) বের করে নিন।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুস্ সালাত / বাব – কালামুর রাব্বি আয্যা ও ওয়াজাল্লা ইয়াওমাল কিয়ামতি মায়াল আম্বিয়া আলাইহিমু ছালাম)।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ফরমান,,,
“যে ব্যক্তি কেবল আমার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আমার রওযা মোবারকে আসবে, এবং ঐ সফরে আমার জিয়ারতই কেবল তাকে উদ্বুদ্ধ করবে, কেয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত করা আমার নৈতিক দায়িত্ব হয়ে যাবে ।” (সুনানে ইবনে মাজাহ : বাব ফাদ্বলুল মদীনাহ)
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে সহীহ আক্বিদা বুঝার এবং বাতিল আক্বিদাকে প্রত্যাখান করার তাওফিক দান করুন। আমিন
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মুহাম্মাদ শাহিদ ইমাম
Leave a Reply