লোকসভা ভোটের আগে যে বিল নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রবল ‘চাপে’ মোদী-শাহরা, সেই নাগরিকত্ব সংশোধন বিল শেষপর্যন্ত বাতিলই হয়ে গেল। সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এই বিলটি তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিরোধীদের লাগাতার হই-হট্টগোলের জেরে রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব বিলের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। আজও তা করতে পারেনি সরকারপক্ষ। ভারতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করাই যায় নি।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অমুসলিম নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে বিলটি শাসক দল আনতে চেয়েছিল। নাগরিকত্ব ও তিন তালাক বিল আগেই লোকসভায় পাশ হয়েছিল। লোকসভায় পাশ হওয়ার পরই তা নিয়মমাফিক পাঠানো হয়েছিল রাজ্যসভায়। সামনেই লোকসভা ভোট। ফলে, আজ রাজ্যসভায় এই বিল পাশ না হলে, নব নির্বাচিত লোকসভায় আবারও এই বিলগুলিকে পেশ করাতে হবে এবং দুই কক্ষেই পাস করাতে হবে।
নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা জানিয়ে প্রথম থেকেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। এমনকি এ বিলের প্রতিবাদ জানিয়ে আসরে নেমেছে এনডিএ শরিকরাও। নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে এনডিএ জোট ভেঙেছে অসম গণ পরিষদ। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে এ বিল নিয়ে বিক্ষোভ চলছেই। তবুও এ বিল পাশ করাতে মরিয়া মোদী সরকার। কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই নাগরিকত্ব বিল কেন তালিকাভুক্ত করা হল, তাই নিয়ে সরব হয়েছে সমস্ত বিরোধী দল।
নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদ জানিয়ে ভূপেন হাজারিকাকে দেওয়া মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁর ছেলে তেজ হাজারিকা। যে ঘটনায় বিল-বিতর্ক নয়া মোড় নিয়েছে। এদিকে, গত শনিবার আসামের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “নাগরিকত্ব বিল পাশ হলে, উত্তর-পূর্বের কোনও ক্ষতি হবে না।”
এদিকে, তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলি এ বিলের বিরোধিতা জানিয়ে সরব হয়েছে। চলতি মাসে এ রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে মমতা সরকারকে এ বিল পাশে সমর্থন জানানোর আর্জি রাখেন স্বয়ং মোদী। জবাবে মমতা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, তাঁরা এ বিল কিছুতেই পাশ করতে দেবেন না। বিরোধীদের পাশাপাশি বিলের বিরোধিতা জানিয়েছে বিজেপির শরিকরাও। রাজ্যসভায় এ বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ। এর আগে এ বিলের প্রতিবাদ জানিয়ে এনডিএ সঙ্গ ত্যাগ করেছে অসম গণ পরিষদ। বিল পাশ হলে, জোট থেকে বেরোনোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি।
নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে ভারতের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চল অগ্নিগর্ভ। মঙ্গলবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যে বিল-বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার নেয়। আসামসহ প্রতিটি রাজ্যে বিজেপির শরিকেরা এই বিলের বিরোধিতা করেছে। অনেকেই বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাতিল করেছে। বিলটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় এখন প্রশ্ন, লোকসভার ভোটের আগে বিজেপির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শরিকেরা ফের জোটে ফিরে আসবে কি না। এই বিল নিয়ে বিরোধ শুরুর আগে বিজেপি মনে করছিল, শরিকদের সঙ্গে জোট বেঁধে এই তল্লাটের মোট ২৫টি লোকসভার আসনের মধ্যে অন্তত ২২টি তারা জিতে নেবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply