একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন সংক্রান্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ‘গণশুনানি’তে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। ‘গণশুনানি’তে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ৪১ জন প্রার্থী বক্তব্য রাখেন। এর মধ্যে ৩৭ জনই বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানান। পাশাপাশি এসব কর্মসূচিতে ড.কামাল হোসেনকে রাজপথে চান তারা।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে গণশুনানিতে প্রার্থীরা এসব কথা বলেন। গণশুনানিতে প্রধান বিচারক ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটে নোয়াখালী-২ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে কেন কর্মসূচি দেওয়া হয় না? কেন ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর কোন কর্মসূচি দেওয়া হলো না? আর সহ্য হচ্ছে না মহাসচিব। গণশুনানি চলছে। দলে কোথাও কোন ভুল হচ্ছে কি না, এজন্যও গণশুনানি প্রয়োজন।
কুমিল্লা-১০ আসনের বিএনপির প্রার্থী মনিরুজ্জামান হক চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে কারচুপি ও ভোট চুরির কারণে আমরা কেন্দ্র থেকে কেন কিছু করতে পারলাম না। এজন্য একটি গণশুনানি করা দরকার। এছাড়া কেন আমরা প্রার্থীরা এক হতে পারলাম না। আর যুগ্ম মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, কর্মসূচি দেন। তারা যদি একথা বলেন তাহলে কর্মসূচি দেবে কে? মনে হচ্ছে, প্রার্থী হয়ে আমরা অপরাধ করেছি। এর জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করুন।
কক্সবাজার-৪ আসনের প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বলেন, বেগম জিয়ার মুক্তি ও জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নামতে হবে। তা না হলে কিছুই হবে না।
মাগুরা-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন শুরু করতে হবে। কারণ বেগম জিয়া মুক্ত না হলে কিছু হবে না।
ঢাকা-২ আসনের প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাক বলেন, নির্বাচনের পরে আমরা কোন কর্মসূচি দিতে পারলাম না। এখন বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দিতে হবে।
নরসিংদী-৪ আসনের প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত চৌধুরী বকুল বলেন, নির্বাচনের পরেও বেগম জিয়াকে আমরা মুক্ত করতে পারিনি। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা কর্মসূচি চাই।
সকাল ১০ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১ থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিরতি দেওয়া হয়। পরে দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫ টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত দ্বিতীয় অধিবেশনে এ গণশুনানি চলে। গণশুনানিতে বিএনপি ও ফ্রন্টের প্রায় ২০০ প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন, গীতা ও বাইবেল পাঠ করা হয়। পরে চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ড. কামাল।
শোক প্রস্তাব পাঠের পরে গণশুনানিতে প্রথম বক্তব্য রাখেন লালমনিহাট-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী আসাদুল হাবিব দুলু।
গণশুনানিতে জুরি বোর্ডে ৭ জন বিচারক ছিলেন। তারা হলেন- ড. কামাল হোসেন, ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, ড. আসিফ নজরুল, মহসীন রসিদ, অধ্যাপক নূরুল আমিন বেপারী, প্রফেসর দিলারা চৌধুরী, সা কা ম আনিসুর রহমান খান।
গণশুনানি পরিচালনা করেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা আব্দুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জগলুল হায়দার আফ্রিক ও শহীদ উদ্দিন স্বপন।
এছাড়া গণশুনানিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসীন মন্টু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply