চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে গত চারদিন ধরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সেবা পাচ্ছেন না প্রসূতিরা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকায় সহজ সেবার আশায় আসা প্রসূতিরা সেবা না পেয়ে ক্ষুব্দ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন। আর সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকদের কারণে নিরুপায় হয়ে প্রসূতিদের অন্যত্র রেফার দিতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আবার অনেকে নিজ উদ্যোগে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসা না দিলেও এর নিকটবর্তী বেসরকারি (প্রাইভেট) হাসপাতালগুলোতে ঠিকই চিকিৎসা দিচ্ছেন গাইনী বিভাগের চিকিৎসকরা।
এসব বিষয় প্রচার পাবার পর সেবাপ্রার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এসব চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা ।
অভিযোগ স্বীকার করে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোলতান আহমদ সিরাজী বলেছেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল দক্ষিণ চট্টগ্রামে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান। রোহিঙ্গা ইস্যুর পর আন্তর্জাতিক ও অভ্যান্তরীণ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। যার ফলে অনেক জটিল রোগের সেবা এখন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মিলছে। আর কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হওয়ায় কলেজের বিভিন্ন বিভাগের প্রফেসর ও হাসপাতালের কনসালটেন্ট এবং মেডিকেল অফিসারগণের অতিরিক্ত সেবা পাচ্ছেন এখানে ভর্তি হওয়া রোগীরা। অন্যান্য রোগের সাথে এ হাসপাতালে গত বছর এক বছরে প্রায় ৯ হাজার প্রসূতি সেবা পেয়েছেন। এদের মাঝে সিজারিয়ান ডেলিভারি সেবা পেয়েছে প্রায় আড়াই হাজার প্রসূতি। তাই চলমান সময়ে প্রসূতি সেবার জন্য মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ছাড়াও বিত্তশালীরাও সদর হাসপাতালকেই পছন্দের এক নাম্বার তালিকায় রাখছেন।
কিন্তু গর্ভকালীন সেবা পেলেও গত শুক্রবার থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রসূতি সেবা পাচ্ছেন না প্রসব ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসা নারীরা। এতে সচ্ছল পরিবারের প্রসূতিরা বেসরকারি হাসপাতালে প্রসব করানো হলেও ভোগান্তিতে পড়ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ঘরের প্রসূতিরা। প্রয়োজন মুহুর্তে সেবা না পেয়ে অনেকে নিজ উদ্যোগে হাসপাতাল ছেড়ে গ্রামের ধাত্রি বা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছেন। এসব দেখে নিরুপায় হয়ে সময় পার করছেন গাইনী বিভাগে কর্মরত নার্সরা।
সূত্র আরো জানায়, সদর হাসপাতালে গাইনী বিভাগে সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট’র দুটি পদ থাকলেও তা শূন্য রয়েছে। কিন্তু সদর হাসপাতালটি কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হওয়ায় কলেজের গাইনী বিভাগের শিক্ষকগণ নিয়মানুসারে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে সেবা দিতে বাধ্য। বিগত সময়ে সেটি-ই হয়ে এসেছে। তাই হাসপাতালের সৃষ্ট পদ খালি থাকলেও সেবার কমতি হয়নি। কিন্তু চলতি মাসের শুরু হতে কলেজের গাইনী বিভাগে কর্মরত শিক্ষকগণ থিওরিক্যাল ক্লাসেই সব দায় সারছেন। প্র্যাকটিকেল ক্লাসে বাস্তবিক অপারেশনে না আসায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রসূতিরা।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, মেডিকেল কলেজের গাইনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করছেন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. খন্দকার আসাদুজ্জামান। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে রয়েছেন ডা. শিরিন আক্তার জাহান, প্রভাষক হিসেবে রয়েছেন ডা. খায়রুন্নেসা মুন্নি ও ডা. শৈলাস। তাদের সাথে রয়েছেন আরো দু’জন।
হাসপাতাল সূত্র মতে, নিয়মানুসারে কলেজের গাইনী বিভাগের নিয়ন্ত্রণে সদর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগটি পরিচালিত হওয়ার কথা। তাদের সাথে সহযোগিতার জন্য রাখা হয় কয়েকজন মেডিকেল অফিসার। আর গত ২ মার্চ বিভাগীয় প্রধান ডা. খোন্দকার আসাদুজ্জামান হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাধায়কের কাছে দেয়া একটি রোস্টারে তাকে বাদ দিয়ে কনসালটেন্ট ডা. শিরিন, ডা. মুন্নি ও ডা. শৈলাসের সাথে সহকারী হিসেবে চার মেডিকেল অফিসার ডা. আরেফা মেহের, ডা. মাশকুরা ফারুখ জিনিয়া, ডা. ফাতেমা বেগম, ডা. নাফিসা তাহসিন সমন্বয়ে প্রসূতি বিভাগের দায়িত্ব ভাগ করেছেন।
কিন্তু বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজের চাপের কথা বলে ডা. খোন্দকার আসাদুজ্জামান প্রসূতি সেবায় আসছেন না। আর সম্প্রতি প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতির অজুহাত তুলে সেবা দিতে আসছেন না আরেক গাইনী কনসালটেন্ট ডা. শিরিন আকতার জাহানও। আর বিভাগীয় প্রধান হিসেবে ডা. খোন্দকার আসাদুজ্জামান একদিনও প্রসূতি বিভাগে দায়িত্ব না রাখায় সেবা দিতে আসছেন না ডা. খায়রুন্নেসা মুন্নীও। এমনটি জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়তক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সোলতান আহমদ সিরাজী। আর তিন প্রসূতি কনসালটেন্টের এ দাম্ভিকতার কারণে গত শুক্রবার থেকে প্রসূতি সেবা পাচ্ছেন না প্রসূতিরা।
সোলতান আহমদ সিরাজী বলেন, সরকারি হাসপাতালে সেবা না দিলেও কনসালটেন্ট হিসেবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়মিতই চালাচ্ছেন তারা। তাদের অনুপস্থিতির কারণে গত তিন দিনে অর্ধশত রোগী ঝুঁকি নিয়ে চলে গেছেন। সেবা দিতে না পেরে আমরাও নিরুপায় হয়ে অনেক রোগী রেফার করে দিয়েছি। এদের মাঝে অনেক রোগী মফস্বল থেকে আসা দরিদ্র।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ডা. খোন্দকার আসাদুজ্জামান বলেন, কলেজে আমার বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। ফলে প্রসূতি বিভাগে আমার যাওয়া হয়ে উঠে না। অন্যরা দায়িত্বপালন না করলে সে ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারে।
মুঠোফোনে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি ডা. শিরিন আকতার জাহান ও ডা. খাইরুন্নেসা মুন্নীর।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply