অভিবাসী মুসলমানদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকারী অস্ট্রেলিয়ার এক রাজনীতিবিদের মাথায় ডিম ছুড়আর অপরাধে কোন প্রকার সাজা ছাড়াই মুক্তি পেল ‘বীর’ আখ্যা পাওয়া সেই ‘ডিম-বালক’ । জনরোশের মুখে পড়ে তাকে নিঃশোর্ত মুক্তি দিল অস্ট্রেলিয়া পুলিশ।
এর আগে, অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ফ্রেজার অ্যানিংয়ের মাথায় ডিম ভাঙার দায়ে উইল কনোলিকে গ্রেফতার করা হলে তার জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়। সিনেটরের মাথায় ডিম ভাঙার ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে বিশ্বজুরে সাহসী তরুণ হিসেবে প্রশংসিত হন উইল কনোলি।
গ্রেফতারের পর তার মুক্তি ও আইনি সহায়তার জন্য অনলাইনে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মাত্র দুই হাজার ডলার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ইতিমধ্যে তার জন্য জমা পড়েছে প্রায় ৪২ হাজার ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৩৫ লাখ টাকার মতো। ক্রাউডফান্ডিং সাইট ‘গো ফান্ড মি’র মাধ্যমে এ অর্থ সংগৃহীত হয়।
তবে সবাইকে হতবাক করে দিয়ে উইল কনোলি তহবিল সংগ্রহের উদ্যোক্তাকে জানিয়ে দিয়েছেন, ১৭ বছরের অস্ট্রেলিয়ান ওই সাহসী তরুণ নিজের জন্য সংগৃহীত অর্থ ক্রাইস্টচার্চের নিহত মুসল্লিদের জন্য ব্যয় করবেন। ডিম বালক খ্যাত উইল কনোলি ঘোষণা দিয়েছে, তার জন্য সংগৃহীত অর্থ তিনি নিউজিল্যান্ডের ভয়াবহ হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে খরচ করবেন।
গত শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ডানপন্থী শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্টের গুলিতে ৫০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন অন্তত ৪৮ জন।
নৃশংস এ হামলার কারণ হিসেবে দেশটির ইমিগ্রেন্টকে দায়ী করে বিতর্কিত মন্তব্য করেন অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ফ্রেসার অ্যানিং।
মসজিদে হামলার ঘটনায় মুসলিম অভিবাসীদের দায়ী করা অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ফ্রেসার অ্যানিংয়ের মাথায় ডিম ফাটিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ১৭ বছরের অস্ট্রেলিয়ান তরুণ উইল কনোলি। শনিবার মেলবোর্নের মোরাবিনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় কট্টর এ অস্ট্রেলিয়ান সিনেটরের মাথায় ডিম ফাটিয়ে প্রতিবাদ জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যানিং কথা বলার সময় তার পেছনে এই তরুণ দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ করেই তার বাঁ-হাতে মোবাইল ধরে ডান হাতে অ্যানিংয়ের মাথায় একটি ডিম ফাটিয়ে দেন। এর একটু আগে সে তার মোবাইলে ভিডিও করা শুরু করে। ডিম ছোড়ার পরও নির্বিকার ভঙ্গিতে ভিডিও করে যাচ্ছিল উইল কনোলি।
হতবাক অ্যানিং পেছনে ঘুরে তরুণের মুখে চড় মারতে শুরু করলে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় পাশে থাকা লোকজন ওই তরুণকে মাটিতে চেপে ধরে, অন্য একজন অ্যানিংকে সরিয়ে নেয়।
উইল কনোলিকে আটক করা হলেও কোনো অভিযোগ না এনেই পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে আরও তদন্তের পরে ঠিক করা হবে, এই ঘটনায় কোনো অভিযোগ গঠন করা হবে কিনা।
মুক্তির পর টুইটারে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় উইল বলেছেন, ‘রাজনীতিকদের ডিম মারবেন না। এতে আপনাকে ৩০ জন নিম্ন শ্রেণির লোককে মোকাবেলা করতে হবে। আমার কঠিন শিক্ষা হয়ে গেছে।’
টুইটারে দেওয়া পোস্টে তার প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উইল কনোলি।
উইল কনোলি বলেন, একজন মানুষ হিসেবে ওই মুহূর্তটিতে আমি গর্বিত অনুভব করেছি। আপনাদের বলতে চাই, মুসলমানরা সন্ত্রাসী নয় এবং সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম নেই। মুসলমানদের যারা সন্ত্রাসী সম্প্রদায় মনে করে, তাদের মাথা অ্যানিংয়ের মতোই শূন্য।
এদিকে বিতর্কিত মন্তব্যকারী অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর সিনেটর ফ্রেজার অ্যানিংয়ের মাথায় ডিম ভেঙে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে উঠেছেন ১৭ বছরের তরুণ উইল কনোলি। তাকে এখন ‘ডিম বালক’ নামেই ডাকা হচ্ছে। টুইটারে #eggboy নামে একটি ট্রেন্ডও চালু হয়ে গেছে। ওই ঘটনার পর ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে তার ফলোয়ার সংখ্যা হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তার ফলোয়ার সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে।
ডিম বালকের’ পাশে দাঁড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনো। অ্যানিংয়ের মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্যের কঠোর নিন্দা করেছেন তিনি। অ্যানিংয়ের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন টুইটারে বলেন, তার এ ধরনের বক্তব্য ন্যক্কারজনক। এ ধরনের মতামতের অস্ট্রেলিয়াতে কোনো স্থান নেই। এটা অস্ট্রেলীয় সংসদ। নিজের মন্তব্যের জন্য তার লজ্জিত হওয়া উচিত। আমার সরকার কোনোভাবেই এর সঙ্গে একমত নয়।
শুক্রবারের বিবৃতির জন্য অ্যানিংয়ের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া সরকার পার্লামেন্টে তিরস্কার প্রস্তাব তুলবে বলেও জানান তিনি।
সোমবার গো-ফান্ডমি পেজের একজন বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে ‘ডিম বয়’ উইলির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। তার জন্য গঠিত তহবিলের বেশির ভাগ অর্থ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতদের সহায়তায় পাঠাতে চান উইলি।
Leave a Reply