অবশেষে ঢাকার হাতিরঝিল থেকে বিদায় নিচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এর প্রধান কার্যালয় বহুতল ‘বিজিএমইএ ভবন’।
আগামী ৩ এপ্রিল উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে দুই টাওয়ার সম্বলিত নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হচ্ছে ভবনটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এরইমধ্যে নতুন ভবনের চারতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে চালিয়ে নেয়া যাবে।
২০১৯ সালের ১২ এপ্রিলের মধ্যে বর্তমান ভবন খালি করে দেয়া হবে এই মর্মে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আদালতের কাছে মুচলেকা দেয়া আছে।
১৭ নম্বর সেক্টরের লেকসাইট ভিউয়ের সাড়ে ৫ বিঘা জমি জুড়ে এই ভবন নির্মিত হচ্ছে। ১৩ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনটির বেইজমেন্টসহ চারতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। প্রতি তলার আয়তন ৪০ হাজার বর্গফুট। নতুন এই বিজিএমইএ ভবনে ৪০ হাজার বর্গফুটের একটি প্রদর্শনী হলও রয়েছে।
রাজধানীর হাতিরঝিলে অবস্থিত বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবনটি ভেঙে ফেলার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য বিজিএমইএর পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছিল তা ২০১৭ সালের ৫ মার্চ খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। আদালতে বিজিএমইএ-এর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর এমিকাস কিউরি হিসেবে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
রিভিউ খারিজের এই রায়ের মধ্য দিয়ে বিচারের সব ধাপ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিজিএমইএ এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করেছিল। সেই সময় শেষ হচ্ছে এ বছরের ২ এপ্রিল। এর আগে ২০১৬ সালের ২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি মুলতবি করে আদালত ‘নট টুডে’ আদেশ দেন।
২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের রায় স্থগিত চেয়ে রিভিউ আবেদন করে বিজিএমইএ। সেই সঙ্গে বহুতল ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য ৩ বছরের সময় চাওয়া হয়।
এর আগে দেয়া আপিলের রায়ে বলা হয়, অবিলম্বে এই অবৈধ বহুতল ভবন ভাঙ্গতে হবে। ভবন ভাঙ্গার যাবতীয় খরচ বিজিএমইএকেই বহন করতে হবে। বিজিএমইএ না ভাঙ্গলে রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। এজন্য যে অর্থ প্রয়োজন তা বিজিএমইএর কাছ থেকে নিতে বলা হয়েছে।
রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কাওরানবাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিনই প্রতিবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনিরউদ্দিন আদালতে উপস্থাপন করেন।
এর পরদিন বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙ্গার নির্দেশ দেয়া হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএর ভবন ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। রায়ে বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ভাঙতে বলা হয়। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেয়া হয়। ওই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএর আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন।
পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ান। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির পর বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ‘লিভ টু আপিল’ করে। যেটা ২০১৬ সালের ২ জুন খারিজ হয়ে যায়। এরপর বিজিএমইএ আবার রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) আবেদন করেন। তাও শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২ জুন সেই সময়কার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন।
১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply