অবশেষে জরুরি কর্মীসভা করে নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রশমিত করলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান। তিনি দায়িত্বশীল বক্তব্যের মাধ্যমে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠবে।
শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর ইসদাইর বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন।
সম্প্রতি শামীম ওসমান অনুসারী নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের নানাবিধ অ্যাকশনের জবাবে এই কর্মীসভার আয়োজন করা হয়। তবে কর্মীসভার ব্যানারে লেখা ছিলো ‘‘নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী পরিবারকে ধংসের চক্রান্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।”
গত ২৯ মার্চ সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ নেতা মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের বিরুদ্ধে জিডি করেন ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শাহ মঞ্জুর কাদের। এতে শাহ নিজামকে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। গত ১ এপ্রিল রাতে ফতুল্লার পাগলায় মেরি এন্ডারসনে পুলিশের অভিযানে মদ ও বিয়ার উদ্ধারের ঘটনায় ক্রীড়া সংগঠক তানভীর আহমেদ টিটুকে জড়ানো হয়েছে। টিটু শামীম ওসমানের শ্যালক। এ ছাড়া বাংলাদেশ হোসিয়ারী সমিতির সভাপতি নাজমুল আলম সজলের বিরুদ্ধে শিশু অপহরণের অভিযোগ আনা হয়। এ অবস্থায় চেম্বার অব কমার্স প্রতিবাদ সভা করেন। সভাচলাকালীন নগরীর সকল থানা ওসি নিয়ে মহড়া দেন পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। সেদিন নগর জুড়ে ছিলো জলকামান, সাঁজায়োযান এবং অতিরিক্ত পুলিশ।
এ নিয়ে শামীম ওসমানের বলয়ের সাথে পুলিশ প্রশাসনের বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এ অবস্থায় শামীম ওসমানের নেতাকর্মীরা দিশাহীন হয়ে পড়েন। ঠিক তখনই জরুরি কর্মীসভার ডাক দেন সাংসদ শামীম ওসমান।
শনিবার অনুষ্ঠিত সেই কর্মীসভায় শামীম ওসমান বলেন, মশা মারতে কামান দাগানোর প্রয়োজন নেই। পোশাকধারী সন্ত্রাসীদের মানুষ দেখতে চায় না। নারায়ণগঞ্জের মাটিতে যদি কাউরে ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয় তাহলে এক সেকেন্ডের জন্য কাউকে টিকতে দেওয়া হবে না। খোঁচা দিয়েন না। খোঁচা দিলে স্ফুলিঙ্গ জ্বইলা গেলে খোকন সাহাতো দূরের কথা আমি শামীম ওসমানও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আটকে রাখতে পারবো না।
তিনি নেতাকর্মীদের অভয় দিয়ে বলেন, নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে কর্মীসভা করেন। কাউকে ভয় পাবেন না। আপনেরা টেনশনমুক্ত থাকেন। যদি কোনো নেতাকর্মীদের অযথা হয়রানি করা হয় তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এরপরও যদি কেউ খেলতে চায় তাহলে খেলা হবে। অগ্নি দেখেছেন; অগ্নির স্ফুলিঙ্গ কিন্তু দেখেন নাই। এরপরও যদি খেলা হয়; তাহলে ২৪ ঘণ্টা না ৬ ঘণ্টার নোটিশ দেব। তবে, চিন্তা করবেন না, খেলাখেলির দরকার নাই। খেলার আগেই খেলা শেষ হবে ইনশাল্লাহ।
শামীম ওসমান বলেন, শেখ হাসিনার নারায়ণগঞ্জে কেউ অনাচার-দুঃশাসন করতে পারবে না। খোদার কসম খেয়ে তিনি বলেন, যদি কোন ব্যবসায়ী, নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের খোঁচানো হয়, তাহলে অগ্নিকুÐের জনবিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যাবেন।
প্রায় ২৬ মিনিটের বক্তব্যে শামীম ওসমান আরও বলেন, আপনার কি ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন না? অবশ্যই জানেন। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে টের পাবেন। কারো পদত্যাগ করতে হবে না, দরকার হলে আমি একা করবো।
তিনি বলেন, পর্দার আড়ালেও খেলা থাকে। হুট করে কাউরে ভুল বুঝবেন না। বাইরে থেকে এসে কেউ হয়তো এই খেলায় পা দিয়ে ফেলছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে আরেকজন আছে মহিলা। যার সাথে জামায়াতের সাথে জড়িত। সেই কথা প্রকাশ হয়েছে। সেই তিনি হুমকি দেন মামলা করবেন। তাহলে করেন না কেন? দেখি কতটুকু সৎ সাহস আছে মামলা করার। পর্দার আড়ালে অনেকে খেলছে। আমি এসব গোণায় ধরি না। জামায়াতের সাথে তার কানেকশন ফাঁস হলো। তদন্ত হইলো। এরপরই শুরু হলো এই খেলা।
শ্রমিকলীগ নেতা কাউসার আহমে পলাশের নাম উচ্চারণ না করে তিনি বলেন, বাইরের লোকরে দোষ দিয়ে লাভ নেই। দোষতো আমার ঘরের মানুষের। যাকে আমি সন্ত্রাসের কারণে দুইবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনলাম। যে কিনা শ্রমিক আন্দোলনের নামে অসন্তোষ করে। তাকে অ্যারেস্ট করার নির্দেশ ছিলো। আমি তারে বাঁচিয়ে দিলাম। আর আজ সে কিনা সন্ত্রাস বিরোধী কমিটি করে।
তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করে কাউকে ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জের শান্তিপূর্ণ অবস্থা নষ্ট করবেন, তা হবে না। এখানে যারা ব্যবসা করে তারা তো বিদেশী না। এখানকার স্থানীয়। এখন তাদেরকে কেউ ফোন করে বলবেন, দেখা করেন। আমি বলবো, দেখা করার সময় শেষ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।
কর্মীসভায় শামীম ওসমান ছাড়া আরও দুইজন বক্তব্য রাখেন। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুহাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীল।
কর্মীসভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহার পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়াামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সোনারগাঁ থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্রাপ্ত সভাপতি এড. সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ নেতাকর্মীরা।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply