ইশতেহার হলো নির্বাচনের সময় এলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একে অন্যের চেয়ে আরো উদ্ভাবন, আরো অন্তর্ভূক্তির প্রতিযোগিতা। এতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য কিছু আশার বাণী থাকে। বিশেষ করে পশ্চাৎপদ অংশের জন্য- যেমন নারী, দলিত, কৃষক, শ্রমিক। কিন্তু একটা কথাই রাজনৈতিক দলগুলো বলে না। আর সেটা হলো তাদের ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন।
বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কৃষি তথা খামারের আয় দ্বিগুণ উন্নতি করা হবে। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দা এবং খরার কারণে উল্টো আয় কমেছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, বছরে ২ কোটি নতুন চাকরির পদ সৃষ্টি করা হবে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে সরকার বেকার সংখ্যা নিয়ে কোনো ডাটা দিচ্ছে না এবং দাবি করে যে কোনো ডাটা পাওয়া যাচ্ছে না।
ইতিহাস বলে যে, কোনো সরকার ইশতেহার অনুসারে কোনোদিন তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ১৯৯১ সালে কংগ্রেস বলেছিল যে, নির্বাচিত হওয়ার ১৫০ দিনের মধ্যে দ্রব্যমূল্য ১৯৮৯ সালের পূর্বের স্তরে নিয়ে যাবে। কিন্তু সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে দলটি বলেছিল, এটা সম্ভব নয়। ১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাই বলেছিলেন- ইশতেহার জনতা পার্টির দেয়া, এটি সরকারের নয়।
এসব দেখে মনে হয় সরকারের জনতার কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই। মনে হয় দলগুলো কায়েমী স্বার্থ দ্বারা তাড়িত, জনসেবা কেবল একটি ঘটনা। স্বাধীনতার পর থেকেই এটা দেখা গেছে, উন্নয়ন কেবল থেকে থেকে হয়েছে। পশ্চৎপদ জনগোষ্ঠির উন্নতি হয়েছে কদাচিৎ, উন্নয়নের ফসল গিয়েছে এলিট শ্রেণির কাছে ব্যাপকভাবে। এই প্রবণতা ১৯৯১ সাল থেকে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আয়করের অর্থ নিয়ে নিয়ে কোনো কথা নেই। বলা হয় যে এ নিয়ে কোনো পলিসি করতে গেলে ধনী লোকদের বিনীয়োগের জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে এবং অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে পড়বে। এই যুক্তিও দেয়া হয় যে এর ফলে পুঁজি বাইরে চলে যাবে, বিশেষ করে যেদেশে আয়করের হার কম।
বলা হয়, আয়করের পুনঃবণ্টনের মাধ্যমে যদি তা দরিদ্র জনগোষ্ঠির কাছে যায় তাহলে তা ওদেরকে কর্ম বিমুখ করে তুলতে পারে। অন্য অর্থে মজুরির হার বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে। এই যুক্তির অনেক সত্যতা আছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন নাগরিকত্বের ব্যাপারে। একটি বিশাল সংখ্যক জনতার কি এমন দুরাবস্থায় অতিবাহিত করা উচিত? প্রায়শই দরিদ্রতার জন্য দরিদ্রদের দায়ী করা হয়। আধুনিক চাকরিতে তাদের দক্ষতার অভাব আছে। কিন্ত এ কথা কি সত্য নয় যে তাদের ন্যুনতম শিক্ষা এবং পুষ্টি অপ্রতুল? দেশ স্বাধীনের সময় সমাজে মনে করা হয়েছিল যে দরিদ্রতা, নিরক্ষরতা সম্মিলিতভাবে দূর করা হবে। অর্থনীতিতে রাষ্ট্রকে বড় ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। এটা হয়েছিল নেহেরুর সম্মতিক্রমে। কিন্তু দ্রুত পুঁজিবান্ধব হয়ে ওঠার কারণে এবং মনোপোলিস এন্ড রেস্ট্রিক্টিভ ট্রেড প্র্যাকটিস অ্যাক্টের মাধ্যমে সেই ধারণাকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
বৈষম্য অব্যাহতভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক এক ডাটায় দেখা গেছে, ১ শতাংশ মানুষের হাতে ৭০ শতাংশ মানুষের সমান সম্পদ এবং ২২ শতাংশের সমান আয়। যদি কালো টাকা গণনা করা হয়, তাহলে এই অনুপাত দাঁড়ায় ১ শতাংশ আর ৮৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক মন্থরতা এবং সমাজের বিশাল অংশের প্রতিবাদের পেছনে প্রধান কারণ এটাই।
অরুণ কুমার: জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ইনডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে দৈনিক জাগরণে ইষৎ ভাষান্তরিত
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply