এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির প্রসঙ্গটি দূরভিসন্ধিমূলকভাবে সামনে আনা হয়েছে বলে মনে করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তার দাবি খালেদা জিয়া আইনিভাবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাওয়ার কথা। তার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে মন্ত্রীরা এত মাতামাতি কেন করছেন এটা নিয়েও প্রশ্ন রিজভীর।
বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘সরকারের আচরণে স্পষ্ট হয়েছে, জনগণের নেত্রীকে জনগণ ও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য তার জীবন পণবন্দি করেছে। এখন তার জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে প্যারোলের কথা বলছেন। দেশনেত্রী জীবন ও চিকিৎসা নিয়ে এটিও সরকারের রসিকতা। সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ তাদের নেতারা দেশনেত্রীর প্যারোল নিয়ে অস্থির।’
‘দেশনেত্রী তো স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়াতেই জামিনে মুক্তি পাবেন, তাহলে ক্ষমতাসীনদের এই প্যারোলের কথা বলাটা তো দূরভিসন্ধিমূলক। সরকারের গভীর ষড়যন্ত্র এবং কুমতলব এখন পরিষ্কার।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চায় জনগণ। প্যারোলের প্রশ্ন কেন আসছে? তিনি তো নির্দোষ। দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকার সম্পূর্ণ সাজানো মিথ্যা মামলায় তাকে জোর করে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে হত্যার জন্য জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। যে টাকার কথা বলা হচ্ছে সেই টাকার বিষয়ে কোথাও তার কোনো সই স্বাক্ষর নেই, সেই টাকা এখনো ব্যাংকে জমা আছে। অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত অবিরাম মিথ্যায় ভাঙা ঢোল বাজিয়েই যাচ্ছেন।’
রিজভী অভিযোগ করেন, ‘সরকারি দলের লোকদের অর্থে পরিচালিত একটি টিভি চ্যানেল ও মিথ্যাচারে নিয়োজিত কিছু সাংবাদিক এবং কয়েকটি প্রোপাগান্ডা ওয়েবপোর্টাল হলুদ সাংবাদিকতা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক রচনা প্রতিযোগিতায় নেমেছে। গত কয়েকদিন আগে এই আওয়ামী মিডিয়াগুলোতে বেগম খালেদা জিয়ার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকে নাকি বেতন দেয়া হচ্ছে না বলে মিথ্যা রিপোর্ট করেছে। আমরা খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, ফাতেমা বেগমের বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে ম্যানেজ করে এই সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘ফাতেমার পরিবারকে তার প্রাপ্য ছাড়াও অগ্রিম টাকা দেয়া হয়েছে। আর ফাতেমা আদালতের নির্দেশনায় দেশনেত্রীর সঙ্গে আছে। দেশনেত্রী বেগম জিয়া নিজের হাঁটা-চলাতে অসুবিধা হয়। তার একজন সাহায্যকারী দরকার হয়। সেই বিবেচনায় ফাতেমা তার সঙ্গে আছেন। এটাও এখন হিংসুক সরকারের সহ্য হচ্ছে না। তারা নিজেদের প্রোপাগান্ডা মিডিয়ায় এই নিয়ে গল্প তৈরি করছে এবং সরকারি হুমকির মুখে নানাজনকে নানা কথা বলতে বাধ্য করছে।’
‘আজ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, ফাতেমার মা বলেছেন যে, তিনি মাসে মাসে টাকা পান এবং সেই টাকা তিনি নিজেই নিয়ে আসেন। অথচ ফাতেমাকে নিয়ে সরকার জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। কই ওই মিডিয়াগুলোতে তো সুবর্ণচরের কবিরহাটে ধর্ষিতা নারীর আত্মীয়স্বজনদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেনি, সিলেটে কলেজ ছাত্রী খাদিজাকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা কুপিয়েছিল, কই সেই ছাত্রীর পরিবারের আর্তনাদ তো প্রচার করা হয়নি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মস্বীকৃত নারী নির্যাতকের দ্বারা অত্যারিত ছাত্রীদের আত্মীয়স্বজনদের সাক্ষাৎকার তো প্রচার করা হয়নি। দেশে নারী-শিশু নির্যাতন মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাসে, ট্রেনে, স্কুল-কলেজ, পরীক্ষা কেন্দ্র ও বাসাবাড়িতে নারী নির্যাতনের হিড়িক পড়েছে, এদের পরিবারের
আত্মীস্বজনদের সাক্ষাৎকার তো প্রচার করা হয়নি? এধরনের অসংখ্য ঘটনা যা লিখতে গেলে দিস্তার পর দিস্তা কাগজ শেষ হয়ে যাবে।’
‘সৎ সাহস থাকলে তারেক রহমান দেশে ফিরতেন’- তথ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যারা রাতের অন্ধকারে কাপুরুষের মতো ভোট করে তারা কতটুকু সাহসী তা জনগণই জানে। তারেক রহমান আইনগতভাবে জামিনে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আছেন। এখনো তিনি সুস্থ নন, তার চিকিৎসা চলমান রয়েছে। শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল ১/১১’র সরকার তারেক রহমানকে হত্যা করার জন্য অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। সেই নির্যাতনেই তিনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। এই ধরনের বর্বরোচিত নির্যাতন চালানোর পরও শেখ হাসিনার প্রতিহিংসা প্রশমিত হয়নি, তারেক রহমান লন্ডনে থাকার পরও তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা ও সাজা দেয়া হয়েছে।’
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply