নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাক্ণ্ড নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তাল সারাদেশ। তবে এঘটনা শুধু দেশের মানুষের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই; ছড়িয়ে গিয়েছে বিশ্বব্যাপী। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই ঘটনায় চিন্তাগ্রস্থ। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো’র কথায় অন্ততঃ সে কথাই ফুটে উঠেছে। নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার তাগাদা দিয়েছেন মিয়া সেপ্পো। তাঁর মতে নুসরাত হত্যাকাণ্ড এ দেশে নারীর প্রতি সহিংসতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। আজ বুধবার রাজধানীতে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. আসা টরকেলসন বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা ঠেকাতে আরো কাজ করতে হবে।’ ‘কেবল দেশে নয়, দেশের বাইরেও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় আসছে নুসরাতের নামটি। এ দেশের মানুষ নুসরাতের জন্য যতটা ব্যথা ধারণ করেন, ততটা ব্যথায় সমব্যথী বিদেশীরাও।’
বুধবার ইউএনএফপিএর ওই অনুষ্ঠানে মিয়া সেপ্পো বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ড এমন একটি ঘটনা যা বাংলাদেশের নারীর প্রতি সহিংসতার নানা দিক স্পষ্ট করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ড এমন একটি ঘটনা যা বিভিন্ন পর্যায়ে নির্মমতা রয়েছে। যেমন সেখানে নুসরাতকে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। নির্মমতার আরেকটি বিষয় হলো, এদেশে সহিংসতার শিকার একটি মেয়ে সাহস করে প্রতিবাদ করলে শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি কী হয়। পরিণতি হয় নুসরাতের মতো আরো বেশি সহিংসতার শিকার হওয়া এবং শেষমেশ মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া।’ ‘এ ঘটনায় আমরা যা বুঝতে পারলাম তা হলো নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রত্যেককে নিশ্চিত করতে হবে দোষীরা যেন বিচারের বাইরে না থাকে। এমন একটি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যেখানে নারীরা সহিংসতা শিকার না হয়, সহিংসতার শিকার হলে দোষীরা যেন পার না পায় এবং সহিংসতার ব্যাপারে নারীরা যেন সাহস করে কথা বলতে পারে। এগুলোই মূল বিষয়।’
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সরকারের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকেও ব্যাখ্যা দিতে হয় নুসরাত প্রসঙ্গে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান বলেন, ‘সোনাগাজীর সেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা এবং তার সহযোগীরা, অন্যদিকে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের আরেক অভিযুক্ত যিনি কি না সোনাগাজী আওয়ামী লীগের নেতা বলা হচ্ছে, এরা কেউই সরকারের নেওয়া কঠোর ব্যবস্থার বাইরে থাকছে না।’ নুসরাত প্রসঙ্গে টেনে ইউএনএফপিএর রিপোর্ট প্রদান অনুষ্ঠানে বলা হয়, এদেশে যেখানে নিজ ঘরেই প্রায় ৭৩ শতাংশ নারী নিজ ঘরে আপন মানুষ কর্তৃক নানা সহিসংতার শিকার, সেখানে ঘরের বাইরে নুসরাতদের প্রতি সহিংসতা ঠেকানো বেশ চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশে ইউএনএফপির আবাসিক প্রতিনিধি ড. আসা টরকেলসন বলেন, ‘সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের এজেন্ডাকে আরো বেশি জোরালো এবং বিস্তৃত করতে হবে।’
বিভিন্ন উৎসের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়, বাংলাদেশে নিজ গৃহে নারীরা যে সহিংসতার শিকার হয়, তার অর্থমূল্য জিডিপির ২.০৫ শতাংশ। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুবিধার মধ্য দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী মোট জনগোষ্ঠীর ৬২.৭ শতাংশ, যা কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ আরোপ করেন দেশি বিদেশি আলোচকরা। প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে বাংলাদেশের অর্জন আশাব্যঞ্জক হলেও বাল্যবিবাহের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হওয়াটা হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা। রিপোর্ট অনুযায়ী এ দেশে সাত লাখ ৫০ হাজার নারী কিশোর বয়সে মা হচ্ছেন, যা মোট প্রজনন হারের ২৫ শতাংশ।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply