আব্দুর রশিদ শিকদার।হকির নিবেদীত প্রাণ। ক্রীড়াঙ্গণের ভালো মানুষ।দেশীয় হকি অঙ্গনের অভিভাবকতূল্য। হকির অন্যতম বড় ক্লাব ঊষা ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক তিনি। এশিয়ান হকি ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য। পিছিয়ে পড়া হকিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন নিরলসভাবে। ২৯ এপ্রিল হকির নির্বাচনে ‘বাঁচাও হকি পরিষদের’ রশিদ- সাঈদ প্যানেলের এক নম্বর সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী। নির্বাচিত হলে বিধ্বস্ত হকিকে সঠিক পথে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হকি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা জানালেন। ওই কর্মপরিকল্পনা বাস্তব রূপ দিতে পারলে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে খেলার পর্যায়ে চলে যাবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন।
অবশেষে হকিতে নির্বাচন হচ্ছে।এটা শুধু হকির জন্য নয়, ক্রীড়াঙ্গনের জন্যও স্বস্তির খবর। ব্যাপারটা আপনি কীভাবে দেখেন?
আব্দুর রশিদ শিকদার : হকি একটি বড় ইভেন্ট, সম্ভাবনাময় ইভেন্ট। কিন্তু সেই হকির আজ খুবই বাজে অবস্থা। নির্বাচন, হ্যাঁ, এটা অবশ্যই ভালো খবর আমাদের হকির জন্য। আমরা আশা করছি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তবে যা খুবই দরকার। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা সুখের নয়। আপনারা জানেন, ২০১৭ সালে বন্যার কারণ দেখিয়ে নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ভোটার তালিকা হলো, নির্বাচনের সফসিল ঘোষণা হলো, মনোয়নও বিক্রী হলো রেকর্ড সংখ্যক। অথচ শেষ দিনে এসে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হলো। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ওটা করেছিল আসলে একটা পক্ষের চাপে। তারা প্যানেল দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। কাউন্সিলরদের উপর সেভাবে প্রভাব না থাকলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উপর তাদের বিরাট প্রভাব। আর ওই প্রভাব খাটিয়েই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে নির্বাচন বন্ধে বাধ্য করেছিল তারা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উপর ওই মহলের এখনও প্রভাব আছে। কে জানে এবার কী হয়। দেখা যাক। তবে নতুন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর উপর আমাদের আস্থা আছে। তাকে ধন্যবাদ দিতে চাই, অল্প সময়ের মধ্যে ক্রীড়াঙ্গণে তিনি বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন, আশা করি এবার একটি ভালো নির্বাচন সম্পন্ন হবে। আমরা সেদিকেই তাকিয়ে আছি।
দীর্ঘদিন ধরে হকি ফেডারশেন চলছে এডহক কমিটি দিয়ে।এডহক কমিটির কার্যকমও সেভাবে চোখে পড়ার মতো নয়। ক্রীড়াউন্নয়নে একটা নির্বাচিক কমিটির গুরুত্ব আসলে কতখানি?
আব্দুর রশিদ শিকদার : ঠিক রাষ্ট্রের মতো। গণতন্ত্র না থাকলে যেমন রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তেমনি ফেডারেশনে নির্বাচিত কমিটি না থকলে কি হয় তার সেরা উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এগিয়ে যাচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ডায়নমিক নেতৃত্বে, অথচ হকি পিছেয়ে পড়তে পড়তে এখন খাদের কিনারে। এভাবে চলতে পারে না। এডহক কমিটির সময়ে, গত সাড়ে তিন বছর ধরে হকি ফেডারেশন কার্যত পুরো সংগঠক বিহীন হয়ে পড়েছে। কোনো লোকই এখন ওখানে যায় না। না সাংবাদিক, না সংগঠক , এমনিক খেলোয়াড়রাও না। খেলা না হলেও খেলোয়াড়রাও বা যাবেন কেন? অথচ একটা সময় বিকাল হলেই জমজমাট হয়ে উঠতো ফেডারশন। সংগঠক, খেলোয়াড়, সাংবাদিকের মিলন মেলা হয়ে ইঠতো প্রতিটা সন্ধ্যা।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে এবার কতটা দায়িত্বশীলতা আশা করছেন?
আব্দুর রশিদ শিকদার : দেখুন, এবারের নির্বাচন নিয়েও নানা ষঢ়যন্ত্র হচ্ছে। আপনারা নিশ্চয়ই এসব জানেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ হচ্ছে আমাদের অভিভাবক সংস্থা। তাদের উপর আমাদের পুরো আস্থা রয়েছে। আশা করি কোনো চাপের মুখে তারা কোনো খারাপ ও অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিবেন না। তবে এবারও নানাভাবে প্রভাবিত হরা হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। তারা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে ভোটকেন্দ্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে। আমরা চাই এখানেই ভোটকেন্দ্র থাকুক। কারণ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দেশের ক্রীড়াঙ্গণের অভিভাবক। তারা এখানে কেন্দ্র চায় না। এর অর্থ পরিষ্কার। ভোট নিয়ে তাদের নিশ্চয়ই খারাপ চিন্তা রয়েছে। তারা কাউন্সিলরদের হুমকি ধামকি ধামকি দিচ্ছে। আমাদের প্যানেল থেকে যারা নির্বাচন করছেন এমনি তাদের মধ্যেই থেকেই কেউ কেউ হুমমি পেয়েছেন। অর্থের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। আমার কথা হচ্ছে, ভোটাররা যাকে পছন্দ করবে তাকেই ভোট দিবে। আমরা এই কথাতেই বিশ্বাস করি। আমরা যদি যোগ্য হয়ে থাকি তাহলে আমাদের ভোট দিবেন, যদি তাদের যোগ্য মনে করেন , তবে তাদের ভোট দিবেন।
আপনাদের প্যানেলের বিপরীতে সাদেক খান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করছেন। তিনি সাবেক হকি খেলোয়াড়। তাকেনিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
আব্দুর রশিদ শিকদার : আপনারা যারা সাংবাদিক তারাও নিশ্চিয়ই ভালো করে জানেন, তিনি হকির জন্য কতটা করতে পেরেছেন। হ্যাঁ, একজন সাবেক হকি খেলোয়াড় হিসেবে এবং মুরব্বি হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে আমি ও আমার প্যানেল তাকে শ্রদ্ধা করি। তার বয়স হয়েছে। তার প্রতি আমার শ্রদ্ধার কোনো অভাব নেই। ওই জায়গায় থেকেই বলছি, তার আসলে হকিকে দেওয়ার আর তেমন কিছুই নেই। সেই বয়সও তার নেই। তাছাড়া খেলোয়াড় হলেই যে ভালো সংগঠক হবেন তা বোধকরি সঠিক নয়। এরপর প্রমাণ তো দেশেই ভুরিভুরি। সংগঠন চালানো অন্য জিনিস। যেটা শ্রদ্বেয় সাদেক ভাইয়ের মধ্যে কতটুকু আছে তাতে আমি সন্দিহান। আসলে এটা তার সময় নয়। তিনি আসলে হকি উপকৃত হবে বলে মনে হয় না।
আপনি নিজে হকির একজন অভিভাবক তুল্য। ২০১৭ সালে বাতিল হওয়া নির্বাচনে আপনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবেদাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু এবার আপনি নির্বাচন করছেন প্রথম সহ–সভাপতি হিসেবে। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নয় কেন?
আব্দুর রশিদ শিকদার : হ্যাঁ, আসলে ব্যাপারটা অনেক ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাকে দিয়ে ভালো চলবে তাকেই দিয়েছি। সাঈদ (এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ) বয়সে তরুণ হতে পারে, কিন্তু তার মধ্যে নেতৃত্বগুণ অসাধারণ। সাঈদ যে পারে সেটা বারবার প্রমাণ হয়েছে। মেরিনার্সের দায়িত্ব নিয়েছে, হকিতে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আরামবাগের দায়িত্ব নিয়েছে, ফুটবলে ক্লাবটি একটা সম্মানজনক পর্যায়ে চলে গেছে। সাঈদ উদ্যমি একটা ছেলে। খুব নির্ভীক ও ভালো ছেলে। আমি এবং আমরা সবাই মনে করেছি, হকিতে সাঈদের মতো ছেলেরই দরকার। আমরা সবাই এক সঙ্গে কাজ করলে এবং তাকে সহযোগিতা করলে আশা করি হিককেও একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবে সে।
আপনারা জানেন, পদাধিকার বলে হকির চেয়ারম্যান বিমান বাহিনীর প্রধান। কিন্তু তার আসলে হকি নিয়ে ভাবার সময় নেই। আসল কাজটা করতে হয় সাধারণ সম্পাদককেই। তার সুষ্ঠ পরিকল্পনা এবং তা বাস্তাবায়নের উপর নির্ভর করে হকির উন্নয়ন। তাই এই পদে এমন একজন দরকার যিনি প্রচুর সময় দিতে পারবেন, যিনি কর্মপাগল, উদ্যমি ও পরিশ্রমী। এসব দিক বিবেচনায় সাঈদকেই আমি ও আমরা উপযুক্ত মনে করেছি। হ্যাঁ, আমি তো আছিই। আপনারা মিডিয়ার লোকেরাও আছেন। সংগঠকরা আছেন, খেলোয়াড়রা আছেন। সবাই মিলে কাজ করলে হকির উন্নতি সম্ভব।
হকির হারানো গৌরব সহসা কি ফিরবে আসলে?
আব্দুর রশিদ শিকদার : কেন নয়? তবে প্রচুর কাজ করতে হবে। প্রত্যেকটা জেলা ও বিভাগীয় শহরে গিয়ে তৃনমুল সংগঠকদের সঙ্গে কথা বলেছি। দেখছি, হকির প্রতি তাদের ভালোবাসা কতটা প্রবল। তারা হকির জন্য কাজ করতে মুখিয়ে রয়েছেন। হকি ফেডারশেনর বেহাল দশা হলেও জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোর অফিসগুলো বেশ পরিপাটি দেখিছি। তারা বাজে সাজানো। মনে হয়েছে, তাদের দিয়ে সম্ভব ভালো কিছু করানো। তাদের উদ্যোমি মনোভাব আমাকে মুগ্ধ করেছে। কারা কাজ করতে চায়। কিন্তু ঢাকা থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তারা বারবার হতাশ। ঢাকার মতো সেখানেও ৫-৭ বছর কোনো লিগ নেই। কোনো টুর্নামেন্ট নেই। একটা যোগ্য নির্বাচিত কমিটিই পারে সব কিছুর সমন্নয় করে হকিকে এগিয়ে নিতে।
আপনারা হকিতে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। একটা সময় এমন কথা অবাস্তব কিছু ছিল না। কিন্তু হকি যেভাবেতলানিতে এসে ঠেকেছে, সেখান থেকে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখানো আসলে কতটা বাস্তব সম্মত?
আব্দুর রশিদ শিকদার : দেখেন, একটা সময় হকিই ছিল এদেশের সবচেয়ে সম্ভবনাময় ক্রীড়া ইভেন্ট। ক্রিকেটের চেয়েও হকি এগিয়ে ছিল।কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে হকি দিন দিন পিছিয়েছে। এখন তো হকি তলানিতে এসে ঠেকেছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলে আবার সুদিন ফেরানো সম্ভব বলে আমরা মনে করি। আমরা একটি নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছি। সেখানে বিস্তারিক তুলে ধরেছি আমাদের পরিকল্পনা। হ্যাঁ, এজন্য প্রচুর অর্থ দরকার। কীভাবে অর্থ আসবে সেটা নিয়েও আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে। আমরা যদি নির্বাচিত হই তাহলে হকির চেহারা পাল্টে যাবে বলে বিশ্বাস করি। এবং এ ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমাদের লক্ষ্য ২০২৬ সালে বিশ্বকাপে খেলা এবং ২০২৫ সালে এশিয়ান হকির শেষচারে ওঠা।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply