ঘূর্ণিঝড় ফণির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে স্পিডবোট ও ট্রলারগুলোর রমরমা বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে স্পিডবোট চালাতে গিয়ে ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ডুবে গিয়ে স্পিডবোটের এক যাত্রী নিহত হন। এ ছাড়া এক শিশু নিখোঁজ ও অন্তত ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন।
এদিকে দুর্ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে রাতে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় নয়জন স্পিডবোট চালককে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে নিষেধাজ্ঞার মাঝে সারা দিন ও রাতে স্পিডবোট ও ট্রলার চললেও বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌ পুলিশের তেমন কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি। স্পিডবোট, ট্রলারে ও ফেরিতে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ। লঞ্চ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলেও শিমুলিয়া পাড় থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল করতে দেখা যায়। সরেজমিন দেখা গেছে, গতকালও এ ধারা অব্যাহত ছিল। কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকলেও শিমুলিয়া ঘাট থেকে অহরহ চলেছে স্পিডবোট ও ট্রলার। নেওয়া হয় বাড়তি ভাড়া। গতকাল দুপুরে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে প্রশাসন অভিযান চালায়।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। এ সুযোগটাই নেয় স্পিডবোট চালকরা। গভীর রাতেই চালানো হয় স্পিডবোট। রাত সাড়ে ৮টার দিক শিমুলিয়া ঘাট থেকে ২০ জন যাত্রী নিয়ে আল আমিন নামের চালক কাঁঠালবাড়ী ঘাটে রওনা হয়। স্পিডবোটটি কাঁঠালবাড়ী ৪ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় এলে বিপরীতমুখী ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে স্পিডবোটটি ডুবে যায়। অন্তত ১০ যাত্রী আহত হন। আহতদের মধ্যে ৩ যাত্রীকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
মো. মুরাদ (২৫) নামের এক যাত্রী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ ছাড়াও আমির হামজা (৬) নামের এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ শিশুর মা, বাবা ও ভাই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। নিহত মুরাদ ঢাকার বাড্ডার খিলবাড়ীর টেক এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে।
গতকাল বারবার ফায়ার সার্ভিসের ঢাকার ডুবুরি দল উদ্ধার তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করলেও বৈরী আবহাওয়ায় ব্যাহত হয়। এদিকে কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচলে কঠোর থাকায় ফেরিগুলোতে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। সুযোগ বুঝে ফেরি ভাড়াও ৫ টাকা বাড়িয়ে নেন পরিবহনকর্মীরা।
কবির হোসেন নামের এক ট্রলার যাত্রী বলেন, শিমুলিয়া ঘাটে অরাজকতা চলছে। আমার কাছ থেকে স্পিডবোটের ভাড়া দুই শ’ টাকা নিয়ে ট্রলারে পদ্মা নদী পার করাল।
নিখোঁজ আমির হামজার মামা কামরুল হোসেন বলেন, আমার বোন, জামাই ২ ভাগিনা নিয়ে আমাদের বাড়ি আসছিল। স্পিডবোট ডুবিতে বোন, জামাই ও বড় ভাগিনা গুরুতর আহত ছোট ভাগিনা নিখোঁজ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের বারবার চেষ্টার পরও তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ী ঘাট ম্যানেজার আব্দুস সালাম বলেন, সীমিত আকারে ফেরি চলছে। ফেরিগুলোতে যাত্রীদের প্রাধান্যই বেশি। শিবচর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার মো. মর্তুজা ফকির বলেন, নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধারে ঢাকার ডুবুরি দল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply